যা করবেন
- শান্ত থাকুন, অধিকাংশ খিঁচুনি কিছু সময়ের জন্য থাকে।
- ঘাড়ের চারপাশে আঁটসাঁট বাঁধা কাপড় বা পোশাক ঢিলা করুন।
- রোগীকে আহত হওয়া থেকে রক্ষা করুন, কাছে ধারালো ও শক্ত বস্তু থাকলে তা সরিয়ে ফেলুন।
- যদি বেশি নিচে পড়ে যায়, তাহলে তার মাথায় কুশন বা গদি দিন; যদি অন্য কিছু না পাওয়া যায়, তাহলে ভাঁজ করা কাপড়-চোপড় ব্যবহার করুন অথবা আপনার হাত ব্যবহার করুন।
- রোগী যদি মেঝেতে পড়ে যায়, তাহলে খিঁচুনি একবার শেষ হওয়ার পরই তাকে পাশ ঘুরিয়ে দিন।
- রোগী সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে থাকুন।
- আশপাশে ভিড় জমলে তা সরিয়ে দিন।
দৈনন্দিন নিরাপত্তা
গোসল
- বাথটাব, সুইমিং পুল ও পুকুরের চেয়ে শাওয়ার (বসে থাকা অবস্থায়) ব্যবহার করা ভালো।
- দরজা বন্ধ না করে কোনো চিহ্ন ব্যবহার করা ভালো।
রান্না করা
- গ্যাস বা বৈদ্যুতিক চুলার চেয়ে মাইক্রোওয়েভ নিরাপদ।
বৈদ্যুতিক তার
- বৈদ্যুতিক তার বা সরঞ্জাম রাখবেন না।
তাপ
- হিটার কখনো খোলা অবস্থায় রাখবেন না।
- কাজ শেষে চুলা নিভিয়ে ফেলুন।
কাচ
- দরজা-জানালায় শক্ত কাচ ব্যবহার করা অথবা কাচের ওপর পাতলা ফিল্ম ব্যবহার করতে পারেন।
মেঝে
- ঘরে কার্পেট, বাথরুম ও রান্নাঘরে ভিনাইল কুশন, লাইনোলিয়াম, কর্ক বা রাবার ব্যবহার করা ভালো।
ধারালো বা শক্ত বস্তু
- আসবাবপত্রের ধারালো কিনারগুলো রাবার বা ফোম দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
নিরাপত্তা হেলমেট
- ঘন ঘন ও পূর্বাভাস ছাড়াই খিঁচুনির ক্ষেত্রে নিরাপত্তা হেলমেট ব্যবহার করা যেতে পারে।
সিঁড়ি, লিফট বা এসকেলেটর ব্যবহার
- সিঁড়ি পরিষ্কার ও শুকনো রাখা এবং সিঁড়ির গোড়ায় কম্বল বা কার্পেট রাখা।
- লিফটের ভেতর প্যাড ব্যবহার করে ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।
ইলেকট্রিক হুইল চেয়ার
- এর নিরাপত্তা বিষয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
অ্যালার্ম ব্যবহার
- ব্যক্তিগত অ্যালার্ম, টেলিফোন অ্যালার্ম, বিছানা অ্যালার্ম, শিশু অ্যালার্ম, পড়ে যাওয়া ইত্যাদির জন্য নানা ধরনের অ্যালার্ম ব্যবহার করা যেতে পারে।
বিছানা
- ঘুমের মধ্যে খিঁচুনি হলে, বিছানার চারপাশে কুশন বা তোশক রাখা যেতে পারে।
- বিছানা নিচু করে রাখা যেতে পারে।
- অন্য আসবাবপত্র বিছানা থেকে দূরে রাখুন।
শিশুর নিরাপত্তা
- মা-বাবার যদি মৃগীরোগ থাকে, তবে শিশুর নিরাপত্তার কথা ভাবতে হবে। যেমন-বিশেষভাবে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা অথবা ঘন ঘন খিঁচুনি হলে অন্যকে দিয়ে শিশুকে খাওয়ানো যেতে পারে।
- বাচ্চাকে গোসল করানো ও দেখাশোনার ব্যবস্থা করা।
পরিচয়পত্র ব্যবহার
- একা ভ্রমণের সময় পরিচয়পত্র অথবা গলার লকেটে খিঁচুনির ধরন এবং নাম-ঠিকানা ব্যবহার করা যেতে পারে।
খেলাধুলা
- সতর্কতা বজায় রেখে যেকোনো খেলাধুলা করা যেতে পারে।
- প্রয়োজন হলে নিরাপত্তা হেলমেট ব্যবহার করা ভালো।
- সাঁতার কাটা বা পানির কাছে খেলাধুলার সময় সাবধানতা অবলম্বন এবং সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক থাকা ভালো।
- তবে ঝুঁকিপূর্ণ খেলাধুলা, যেমন-পাহাড়ে ওঠা, প্যারাসুট জাম্প প্রভৃতি থেকে বিরত থাকা ভালো।
টেলিভিশন দেখা
- মৃগী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পাঁচ শতাংশ আলোর প্রতি সংবেদনশীল হয়ে থাকে।
- সাত থেকে ১৯ বছরের মধ্যে এ সংবেদনশীলতা ঘটতে পারে। পুরুষের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে এ হার দ্বিগুণ। নতুন ১০০ এইচজেড টেলিভিশনে সমস্যা কম হয়। এ ছাড়া স্ক্যানিং লাইন ছাড়া নতুন স্ক্রিনেও সমস্যা হয়। তবু নিচের বিষয়গুলো পালন করা প্রয়োজন-
- আলোকিত রুমে দুই দশমিক পাঁচ মিটার বা আট দশমিক দুই ফুট দূরত্বে বসে এবং টিভির ওপর একটি টেবিল ল্যাম্প স্থাপন করে টিভি দেখা ভালো।
- টিভির কাছে না গিয়ে রিমোট কন্ট্রোল ব্যবহার করা ভালো। কাছে যেতে হলে এক চোখ বন্ধ করে যাওয়া যেতে পারে।
কম্পিউটার ব্যবহার
এখন অধিকাংশ কম্পিউটারের ডিসপ্লের স্ক্যান ফ্রিকোয়েন্সি প্রতি সেকেন্ডে ৭০ বা তার বেশি। ফলে এরা খিঁচুনি প্রভাবিত করে না। তবে এলসিডি মনিটর ব্যবহার করা ভালো। ভিডিও দেখার সময় সাধারণ মনিটরে দেখা ভালো। কারণ তা আলোর তরঙ্গকে দ্রুত বদলাতে পারে।
ভিডিও গেম খেলা
- টেলিভিশনের চেয়ে কম্পিউটার ব্যবহার করা ভালো।
- ক্লান্ত অবস্থায়, ঘুম বাদ দিয়ে খেললে খিঁচুনির আশঙ্কা বাড়তে পারে। এ ছাড়া খেলার মাঝামাঝি বিরতি নেওয়া ও কিছু খাওয়া-দাওয়া করা ভালো।
- মনিটর থেকে দুই দশমিক পাঁচ মিটার বা আট দশমিক দুই ফুট দূরে বসতে হবে।
- পর্যাপ্ত আলো আছে, এমন ঘরে খেলতে হবে।
- মনিটরের উজ্জ্বলতা কমিয়ে দিন।
- সম্ভব হলে ১০০ এইচজে টিভি বা এলসিডি মনিটর ব্যবহার করুন।
বিউটি ট্রিটমেন্ট
- অধিকাংশ রূপচর্চার ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই বা এতে খিঁচুনির কোনো প্রভাবের কথা জানা যায়নি।
- লেজার হেয়ার রিমুভাল, ইলেট্রোলাইসিস, ফুট স্পা ও ম্যাসাজ করতে কোনো বাধা নেই।
- কিছু তেল, যেমন-রোজমেরি, সেইজ, হিস্যাপ, ফিন্যাল ওয়ার্মউড ছাড়া অন্যান্য তেল ম্যাসাজের জন্য ব্যবহার করা যাবে।
বিদেশ ভ্রমণ
- মৃগী রোগ নিয়ে ভ্রমণ বা বিমানভ্রমণের ক্ষতিকর কোনো দিক নেই।
- আপনার রোগ সম্পর্কে বিমান এজেন্ট বা ক্রুকে জানিয়ে রাখুন। ঘুমের যাতে ব্যাঘাত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। নির্দিষ্ট সময়ের পরই ওষুধ গ্রহণ করুন। অন্য দেশের স্থানীয় সময় দেখবেন না।
- হাত-ব্যাগে ওষুধ ও একটি প্রেসক্রিপশন রাখুন।
- দীর্ঘ ভ্রমণের ক্ষেত্রে যে দেশে বা স্থানে যাচ্ছেন, সেখানে আপনার ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করুন।
- প্রয়োজনে ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্স করে নিন। বিভিন্ন দেশের নিয়ম অনুসারে অনেক স্থানে আপনাকে টিকা নিতে হতে পারে। টিকা নিলে সাধারণত কোনো সমস্যা হয় না।
বিষণ্নতা
- মৃগী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মন বিষণ্ন হতে পারে। তবে এটি মূলত সামাজিক কারণে হয়ে থাকে। এর ফলে যেসব সমস্যা হতে পারে-
- অমনোযোগিতা, ঘুমে ব্যাঘাত (কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া), দৈহিক কামনা কমে যাওয়া, ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া প্রভৃতি।
- অনেক সময় ওষুধের জন্যও বিষণ্নতা হতে পারে, বারবিটুরেট-জাতীয় ওষুধ, যেমন-ফেনোবারবিটাল ও প্রিমিডোন-জাতীয় ওষুধের জন্য যে বিষণ্নতা হয়, তা মাত্রার ওপর নির্ভরশীল। সাধারণত মাত্রা কমালে বিষণ্নতা কমে।
- বারবিটুরেটের সঙ্গে এক বা একাধিক ওষুধ যোগ করলেও বিষণ্নতা বেড়ে যেতে পারে। যে কারণে মৃগী রোগ হয়েছে, সে কারণগুলো থেকেও বিষণ্নতা হতে পারে। যেমন-মস্তিষ্কে আঘাতজনিত কারণ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোক,
- প্রসবজনিত সমস্যা, মাথায় আঘাত; সংক্রমণ যেমন- মেনিনজাইটিস ও এনকেফেলাইটিস। আবার এসব কারণ থাকা সত্ত্বেও অনেক রোগীর বিষণ্নতা নাও হতে পারে। খিঁচুনির পূর্বাভাস হিসেবেও বিষণ্নতা হতে পারে।
- বিষণ্নতার চিকিৎসা হচ্ছে, বিষণ্নতা-প্রতিরোধী ওষুধ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শমতো চলা। তবে উপকারিতা ও ঝুঁকি-দুটি বিষয়ই বিবেচনায় রাখতে হবে। কারণ, কিছু ওষুধ খিঁচুনিকে প্রভাবিত করে এবং অনেক সময়
- বিষণ্নতাকে আরও জটিল করে তোলে।
- মৃগী রোগ ও এর প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আপনার চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নিন।
লেখকঃ প্রফেসর আনিসুল হক
দৈনিক প্রথম আলো।
Leave a Reply