মাথা থাকলে যেমন মাথা ব্যথা হয় তেমনি পেট থাকলে পেটে ব্যাথাও হবে এটাই স্বাভাবিক। শিশু থেকে শুরু করে যেকোন বয়সেই পেট ব্যথা হয়ে থাকে। বেশিরভাগ পেট ব্যথাই ক্ষণস্থায়ী এবং ঔষধ খেয়েই ভাল হয়ে যায়। কখনো কখনো পেট ব্যথা এত তীব্র ও জীবন বিপন্ন করে তোলে যে শল্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয় এবং শৈল্য চিকিৎসারও প্রয়োজন পড়ে। এবার আমার পেট ব্যথার প্রধান কারণগুলো লক্ষ্য করি।
যেগুলোর জন্য আপনারা অবশ্যই শৈল্য চিকিৎসকের সাহায্য নিবেন
১. এপেনডিসাইটিস।
২. কলিসিসটাইটিস অর্থাৎ পিত্তথলি বা গলব্লাডার-এর প্রদাহ পাথরজনিত অথবা পাথরবিহীন।
৩. ইনটেসটিনাল অবস্ট্রাকশন/ খাদ্যনালীর পথরোধ হওয়া রোগ।
৪. পাকস্থলি বা খাদ্যনালী (ইনটেসটিন) ফুটো হয়ে যাওয়া।
৫. একিউট একজারবেসন অব পেপটিক আলসার।
৬. কিডনি, মূত্রনালী ও মূত্রথলীতে পাথর/ ইনফেকশন।
৭. পিত্তনালীর পাথর।
৮. অগ্নাশায় বা পেনক্রিয়াসের প্রদাহ/ বা পেনক্রিয়াটাইটিস/ পেনক্রিয়াসের পাথর।
৯. রাপচার একটোপিক প্রেগনেন্সি প্রধান।
পেট ব্যথার এ পর্যায়ে আমরা আজ সবচেয়ে কমন যে কারণটির জন্য আপনারা সার্জনের (চিকিৎসক) শরণাপন্ন হন তা নিয়ে আলোচনা করব।
পেট ব্যথা এবং এপেনডিসাইটিস
এপেনডিসাইটিস মানে এপেনডিকস নামক ক্ষুদ্র অঙ্গটির প্রদাহ। এই এপেনডিকস অঙ্গটি পেটের নাভির ডানদিকে অবস্থিত। এটা দেখতে অনেকটা ওয়ার্ম বা কৃমির মত এবং এটা খাদ্যনালীর বৃহদন্ত্রের অংশ। রোগ প্রতিরোধে এর ভূমিকা আছে বলে ধারণা করা হয়। তবে এই অঙ্গহানির ফলে শরীরের কোন ক্ষতি হয় না।
এপেনডিসাইটিস কেন হয়ঃ
বিভিন্ন কারণে এপেনডিসাইটিস হতে পারে যেমন-
১. ফিকুলিথ (শক্ত মলের নুড়ি) দ্বারা এপেনডিকসের প্রবেশমুখ বন্ধ হয়ে। ২. হজম না হওয়া খাদ্যের অংশ যেমন টমেটোর খোসা দ্বারা এপেনডিকসের প্রবেশমুখ বন্ধ হয়।
৩. গুঁড়া কৃমির দ্বারা এবং ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হয়ে এপেনডিসাইটিস হতে পারে।
এপেনডিসাইটিস রোগের লক্ষণসমূহঃ
১. রোগী বলবে প্রথমে আমার ব্যথা নাভির চারপার্শ্বে অথবা পেটের উপরিভাগে শুরু হয়েছিল এবং ২/৩ ঘণ্টা পর এ ব্যথা সরে এসে নাভির ডানপার্শ্বে অবস্থান নিয়েছে।
২. হাঁচি, কাশি দিলে নাভির ডানপার্শ্বে ব্যথা হয়।
৩. বমিভাব বা ১/২ বার বমি হতে পারে।
৪. ক্ষুধা নেই।
৫. হাল্কা জ্বর ভাব।
৬. কনস্টিপেশন এবং কিছু ক্ষেত্রে ডায়রিয়াও হতে পারে।
৭. পরীক্ষা করলে নাভির ডানদিকে চাপ দিলে ব্যথা অনুভব করবে বা ব্যথার জন্য ধরাই যাবে না।
রোগীর ইতিহাস ও লক্ষণগুলো থেকেই ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে এই রোগ নিরূপণ করা হয়। সেইসাথে রক্ত, প্রস্রাব, এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম (মেয়েদের ক্ষেত্রে) করে পেট ব্যথার অন্য কারণগুলো বাদ দিয়ে এপেনডিসাইটিস রোগ ডায়াগনোসিস কনফার্ম করা হয়।
মেয়েদের ক্ষেত্রে এ রোগ নির্ণয় ছেলেদের তুলনায় কঠিন হয়। কারণ নাভির ডানপাশে ব্যথা মেয়েলী কারণেও হতে পারে, যেমন- ওভুলেশন পেইন, ডিম্বাশয়ের কারণে ব্যথা, টিউবাল প্রেগনেন্সির (জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ) জটিলতার কারণে ও প্রস্রাবে ইনফেকশন ইত্যাদির কারণে ব্যথা। এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই রোগিনীর ভালভাবে পূর্ব ইতিহাস ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নিতে হবে। প্রয়োজন হলে লেপারোস্কোপিক পদ্ধতির সাহায্য নিতে হবে।
চিকিৎসাঃ
দ্রুত অপারেশনই এ রোগের সঠিক চিকিৎসা।
অপারেশন না করলে কি ক্ষতি হতে পারে?
১. চাকা (লাম্পা) হয়ে যেতে পারে। যা কিনা ভাল হতে ২/৩ সপ্তাহ লেগে যায় এবং খরচও অপারেশনের চেয়ে বেশি হয়।
২. ফোঁড়া বা এবসেস হয়ে যেতে পারে।
৩. গেংগ্রিন, ফুটো বা বার্স্ট হয়ে যেতে পারে এবং জীবন-মরণ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৪. ভাল হয়ে আবার বারবার দেখা দিতে পারে।
অতএব, উপরের জটিলতাগুলো চিন্তা করে যত দ্রুত সম্ভব অপারেশন করে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
সূত্রঃ ২৫শে নভেম্বর ২০০৭, দৈনিক ইত্তেফাক
লেখকঃ ডাঃ এমএ হাসেম ভুঁইয়া
জেনারেল ও কলোরেক্টাল সার্জন,
সহযোগী অধ্যাপক, সার্জারী,
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
Leave a Reply