জীবনে ঝুঁকি নিতে হয়। সে জন্য ডায়াবেটিসের লক্ষণকে অগ্রাহ্য করার মতো ঝুঁকি নেওয়ার মধ্যে বাহাদুরি নেই।
নীরব ঘাতক এই ‘ডায়াবেটিস’, ঠিকমতো চিকিৎসা না হলে কেড়ে নেয় মানুষের অর্থ, স্বাস্থ্য, সময় ও স্বপ্ন। নীরব ঘাতক বলছি এ জন্য যে এ রোগ শরীরের ভেতরে থেকে যেতে পারে অনেক বছর, অজান্তে। অসংখ্য মানুষ পৃথিবীজুড়ে ডায়াবেটিস হওয়ার অপেক্ষায় আছে, একে বলা হচ্ছে ‘প্রি-ডায়াবেটিস’। এদের রক্তে সুগারের মান স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলেও ডায়াবেটিস হিসেবে ঘোষণা করার পর্যায়ে আসেনি।
যার ডায়াবেটিস হয় কেবল তাকেই যে ডায়াবেটিসের আক্রমণ সইতে হয় তা নয়, যে শিশুর ডায়াবেটিস, তার মা-বাবাকেও পরিচর্যার অংশীদার হতে হয়, যে জীবনসঙ্গী সাথির পরিচর্যা করেন, যে ছেলে বা মেয়ের মা বা বাবা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদেরও অংশীদার হতে হয়।
যে ধরনের ডায়াবেটিস বেশি হচ্ছে সেটি হলো টাইপ-২ ডায়াবেটিস। ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ লোকের এ ধরনের ডায়াবেটিস হয়।
এ ধরনের ডায়াবেটিসে শরীর কিছুটা কম ইনসুলিন তৈরি করে বা তৈরি করলেও শরীর তা ব্যবহার করতে পারে না। ইনসুলিন হরমোনটি নিঃসৃত হয় অগ্ন্যাশয়ের বিটাকোষপুঞ্জ থেকে। খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তর করতে এর প্রয়োজন। রক্তে সুগারের মান মেপে এ রোগ নির্ণয় করা যায়।
এজন্য স্ক্রিনিং করা প্রয়োজন। সহজে আঙুলের ডগায় ল্যানসেট দিয়ে রক্তের ফোঁটা বের করে একটি টেস্ট স্ট্রিপে লাগানো এবং গ্লুকোমিটার যন্ত্রে যথাস্থানে বসানো, অবিলম্বে স্ক্রিনে ভেসে উঠবে রক্তের গ্লুকোজের মান। আট ঘণ্টা উপবাসের পর এ রক্ত নিলেই হলো।
কী জানা যাবে?
রক্তের সুগার বেড়েছে কতখানি? মাঝারি বৃদ্ধি, নাকি বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে?
— গ্লুকোজের মান যদি প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ১০০ মিলিগ্রামের কম থাকে, তাহলে তা স্বাভাবিক। তবে মনে রাখতে হবে, রক্তের গ্লুকোজের মান হলো ডায়াবেটিসের ঝুঁকির একটি সূচক মাত্র। এ ছাড়া ডায়াবেটিসের পারিবারিক ইতিহাস, গোষ্ঠীগোত্র, বয়স, রক্তচাপের মান, কোলেস্টেরলের মান-ডায়াবেটিসের সামগ্রিক ঝুঁকি বিবেচনার সময় এসব ঝুঁকিকেও গুনতে হয়।
— গ্লুকোজের মান যদি ১০০ থেকে ১২৫ মিলিগ্রামের মধ্যে থাকে, এটিও স্বাভাবিক নয়। একে বলে প্রি-ডায়াবেটিস, যে অবস্থা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। যাদের প্রি-ডায়াবেটিস, তাদের হৃদরোগ ও রক্তনালির রোগের ঝুঁকিও বেশি। অথচ জীবন যাপনে পরিবর্তন এনে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোধ করা যায়, নিদেনপক্ষে ডায়াবেটিস হওয়াকে দেরি করিয়ে দেওয়া যায়।
তাই কারও প্রি-ডায়াবেটিস হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, যাতে সামগ্রিক ঝুঁকির মূল্যায়ন করা যায়।
— উপবাসী রক্তে গ্লুকোজের মান যদি ১২৬ মিলিগ্রাম বা এর বেশি হয়, তাহলে এটি ডায়াবেটিস নির্দেশ করে। এর ত্বরিত ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। চিকিৎসা না করে থাকলে হতে পরে পরিণতিতে নানা জটিলতা। যেমন-মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (স্ট্রোক), হৃদরোগ, অন্ধত্ব-এ রকম নানা ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়। একে ব্যবস্থাপনার জন্য পরামর্শ নিতে হয় চিকিৎসকের।
আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ৪৫ এবং এর ঊর্ধ্ব যাঁরা, এঁদের রক্তের গ্লুকোজ মাপা উচিত তিন বছর অন্তর অন্তর। পূর্ণবয়স্ক লোক, যাঁদের রক্তচাপ বেশি বা যাঁদের রক্তে কোলেস্টেরল বেশি, এঁদেরও ডায়াবেটিসের জন্য স্ক্রিন করা উচিত। আছে কি ডায়াবেটিস হওয়ার মতো ঝুঁকি? বের করতে হবে। আট ঘণ্টা উপবাসে থেকে সকালে গ্লুকোজ পরিমাপের জন্য রক্ত দিতে হবে।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরীর কলম থেকে
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল
সাম্মানিক অধ্যাপক
ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ১২, ২০০৯
Leave a Reply