শিশুরাও ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখে। প্রতি রাতে গড়ে চার থেকে পাঁচবার। বেশির ভাগ স্বপ্নই শিশুর মনে থাকে না। কিছু স্বপ্ন দেখে শিশুরা ভয় পায়। কখনো ঘুমের ঘোরেই ঘরে হাঁটাহাঁটি করে। কখনো ঘুমের মধ্যে দাঁতে দাঁত কাটে, শব্দ করে।
দুঃস্বপ্ন দেখা
এ ধরনের স্বপ্ন দেখে শিশুরা ভয় পায়। সাধারণত তিন থেকে আট বছর বয়সের মধ্যেই দেখে সবচেয়ে বেশি। আর রাতের শেষভাগে তারা এমন স্বপ্ন দেখে। অনেক সময় স্বপ্ন দেখে শিশু চিৎকার করে ঘুম থেকে জেগে ওঠে। মাঝেমধ্যে এমন দুঃস্বপ্ন দেখা স্বাভাবিক। কিন্তু শিশুর যদি মানসিক চাপ থাকে বা শিশু যদি কোনো কারণে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকে, তাহলে ঘন ঘন এমন দুঃস্বপ্ন দেখতে পারে। টিভিতে কোনো ভয়াল ছবি দেখলে বা ভয়ের কোনো গল্প শুনলেও শিশু ভয়ের স্বপ্ন দেখতে পারে। শিশুকে এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করতে হবে। তাকে নিয়ে ঘরের বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে বুঝিয়ে দেওয়া যেতে পারে যে ঘরে বা অন্য কোথাও কোনো ভূত বা এ-জাতীয় কিছু নেই। ভালো হয় শিশুর দেখা স্বপ্নের ব্যাপারে রাতে কিছু আলাপ না করা। সকাল হলে আলাপ করা যেতে পারে। শিশুর মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তার কারণ খুঁজে বের করে তা সমাধান করার চেষ্টা করুন। ঘুমের কয়েক ঘণ্টা আগে শিশুর টিভি দেখা বন্ধ করুন। শিশুকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে ভূতের বা রোমহর্ষক কোনো গল্প বলা থেকে বিরত থাকুন। শিশুর বেডরুমে ডিমলাইট বা অনুজ্জ্বল আলো জ্বালিয়ে রাখুন। অনেক সময় কোনো ওষুধের জন্যও এটা হতে পারে। খেয়াল করে দেখুন। অনেক সময় ঘুমানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শিশু ভয়ের স্বপ্ন দেখে। স্বপ্নে ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। শিশুর চিৎকার বা গোঙানিতে মা-বাবার ঘুম ভাঙে। মনে হতে পারে শিশুটি সজাগ, কিন্তু আসলে সে সজাগ থাকে না। এ অবস্থায় আপনাকে সে চিনতেও পারে না। শিশুটিকে দেখলে মনে হবে যে সে ভীষণ ভয় পেয়ে গেছে। তার শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেশ বেশি, হৃৎস্পন্দনও দ্রুত। এ অবস্থায় শিশুকে জাগানোর প্রয়োজন নেই। শুধু খেয়াল রাখুন, যেন সে নিরাপদ থাকে। কয়েক মিনিট পর সে নিজ থেকেই ঠিক হয়ে যাবে। ঘুমিয়ে পড়বে।
স্বপ্নে হাঁটা
অনেক শিশু রাতে ঘুমের ঘোরে হাঁটে, কিন্তু পূর্ণ সজাগ থাকে না। সাধারণত ঘুমানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শিশু স্বপ্ন দেখে ঘরের মধ্যে হাঁটাহাঁটি শুরু করে। শিশু কিন্তু নিজেও জানে না যে সে হাঁটছে। শিশুটিকে জাগানো উচিত নয়, বরং তাকে ধরে আস্তে আস্তে আবার বিছানায় শুইয়ে দিন। যদি ঘন ঘন এমন হয়, তাহলে ঠিক যে সময় শিশুটি হাঁটাহাঁটি শুরু করে, এর একটু আগে তাকে জাগিয়ে তুলুন। একটু পরে আবার ঘুমাতে দিন। এতে কাজ হতে পারে।
দাঁতে দাঁত কাটা
ঘুমের মধ্যে অনেক শিশু দাঁতে দাঁত কাটে, কিড়মিড় শব্দ করে। দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নয় এটা। তবে দাঁতের যেন কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ওপরের যেকোনোটিই যদি খুব বেশি হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
মো· শহীদুল্লাহ
সহযোগী অধ্যাপক, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ, কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ১২, ২০০৯
Leave a Reply