ইনগুইনাল হার্নিয়া হলো তলপেটের একটি দুর্বল বা ছেঁড়া অংশ দিয়ে কোনো নরম কলা- সাধারণত অন্ত্রের অংশ ঠেলে বেরিয়ে আসা। এটা কুঁচকির কাছে হয়। এই স্ফীত অংশে ব্যথা হতে পারে- বিশেষ করে কাশি দেয়া, ঝুঁকে পড়া অথবা ভারী কিছু তোলার সময়।
অনেক লোকের ক্ষেত্রে পেটের দেয়াল জন্মগতভাবেই দুর্বল থাকে যার কারণে জন্মের সময় ইনগুইনাল হার্নিয়া হয়। এদের পেটের দেয়াল দুর্বল হওয়ার কারণ হলো পেটের পর্দা বা পেরিটোনিয়াম ঠিকমতো সংযুক্ত হয় না। অন্য ইনগুইনাল হার্নিয়াগুলো শেষ জীবনে হয়, যখন মাংসপেশিগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে বা কিছু কারণে ছিঁছে যায় যেমন- বয়স বেড়ে যাওয়া, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম অথবা ধূমপানে সংশ্লিষ্ট কাশি। যদিও মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের ইনগুইনাল হার্নিয়া বেশি হয়, তবে কারো যদি শরীরের রোগ প্রতিরোগ ক্ষমতা কম থাকে তাহলে তার ইনগুইনাল হার্নিয়া হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে নবজাতক, গর্ভবতী মহিলা ও অন্যান্য প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ বা মহিলা।
ইনগুইনাল হার্নিয়া জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। এ কারণে আপনার চিকিৎসক হার্নিয়া ব্যথাপূর্ণ বা বড় হওয়ার আগেই অপারেশনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
সুখবর হলো একই ধরনের হার্নিয়া আপনার বাবার ক্ষেত্রে যেমন বড় করে পেট কেটে অপারেশন করা হয়েছে, হাসপাতালে থাকতে হয়েছে দীর্ঘদিন এবং কয়েক সপ্তাহ কোনো কাজ করেননি, আপনার ক্ষেত্রে সে রকম হবে না। বরং অনেক ইনগুইনাল হার্নিয়া বর্তমানে ছোট করে কেটে নতুন নতুন পদ্ধতিতে ঠিক করা হচ্ছে, এতে রোগী দ্রুত সেরে ওঠে, ব্যথাও খুব কম হয়।
উপসর্গ
কিছু ইনগুইনাল হার্নিয়া কোনো উপসর্গ তৈরি করে না এবং আপনিও কিছু জানেন না যে পর্যন্ত না আপনার চিকিৎসক রুটিন পরীক্ষার সময় এটা আবিষ্কার করেন। যা হোক, সচরাচর আপনি এটা দেখতে পারেন ও অনুভব করতে পারেন। সাধারণত আপনি দাঁড়ালে ফোলা স্পষ্ট হয়, বিশেষ করে কাশি দিলে কিংবা পেটে চাপ পড়লে কুঁচকির ওপরটা গোলাকার টেনিস বলের মতো ফুলে ওঠে। শুয়ে পড়লে ফোলাটা আপনা আপনি কিংবা সামান্য চাপ প্রয়োগে মিলিয়ে যায়।
ইনগুইনাল হার্নিয়ার অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে-
০ কুঁচকিতে ব্যথা বা অস্বস্তি হওয়া, বিশেষ করে ঝুঁকে কাজ করলে, কাশি দিয়ে কিংবা ভারী কিছু তুললে।
০ কুঁচকিতে ভারী বা টানবোধ করা।
০ মাঝে মধ্যে ফোলা অন্ডথলিতে নেমে আসে, অন্ডকোষের চাপাশে অন্ডথলি ব্যথা করে ও ফুলে ওঠে।
শিশুদের ক্ষেত্রে উপসর্গ
প্রতি ১০০ শিশুর মধ্যে প্রায় পাঁচজনের ইনগুইনাল হার্নিয়া থাকে। জন্মের সময় পেটের দেয়াল দুর্বল থাকার কারণে নবজাতক ও শিশুদের ইনগুইনাল হার্নিয়া হয়। কখনো কখনো হার্নিয়া দৃশ্যমান হয় শুধু নবজাতক কাঁদলে, কাশি দিলে কিংবা মলত্যাগের সময় কোৎ দিলে। বয়স্ক শিশুদের হার্নিয়া চোখে পড়ে যখন তারা কাশি দেয় অথবা মলত্যাগের সময় চাপ দেয় অথবা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকে। শিশুদের হার্নিয়া হলে দু’বছর বয়সের মধ্যে জটিলতা হওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি থাকে। কারণ শিশুরা বিভিন্ন কারণে প্রায়ই কাঁদে, যার ফলে হার্নিয়া আটকে যাওয়ার ঝুঁকি বারবার ঘটে। তাই অভিজ্ঞ সার্জনের দ্বারা দ্রুত অপারেশন করানোই সবচেয়ে নিরাপদ।
হার্নিয়ার কারণ
কিছু ইনগুইনাল হার্নিয়ার কোনো স্পষ্ট কারণ থাকে না। তবে পেটের মধ্যে চাপ বৃদ্ধিকারী কারণগুলোই প্রধানত হার্নিয়া সৃষ্টি করে থাকে। একই সাথে তলপেটের মাংসপেশির দুর্বলতাও অনুঘটক হিসেবে কাজ করে।
পুরুষদের ক্ষেত্রে সাধারণত ইনগুইনাল ক্যানেলে দুর্বল স্থানটি থাকে। ইনগুইনাল ক্যানেল হলো কুঁচকির কাছের অংশে একাধিক মাংসপেশির মধ্যে তীর্যক একটি নালিপথ। মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় সুড়ঙ্গের মতো এই নালিপথ বেয়ে অন্ডকোষদ্বয় পেটের ভেতর থেকে অন্ডথলিতে নেমে আসে। সুতরাং জন্মগতভাবেই এটি একটি দুর্বল স্থান। এই স্থানে শুক্রবাহী নালি থাকে যা অন্ডথলিতে প্রবেশ করে।
ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল
জেনারেল ও ল্যাপারোস্কপিক সার্জন এবং মূত্ররোগ বিশেষজ্ঞ।
চেম্বার : কমপ্যাথ লিমিটেড, ১৩৬ এলিফ্যান্ট রোড (বাটা সিগনাল ও হাতিরপুল বাজারের সংযোগ সড়কের মাঝামাঝি) ঢাকা। ফোন : ০১৭১৬২৮৮৮৫৫।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, আগস্ট ০৮, ২০০৯
Leave a Reply