বয়স্কদের যে ডায়াবেটিস হয়, অর্থাৎ টাইপ-২ ডায়াবেটিস, সেই ডায়াবেটিস শিশু ও তরুণদেরও বেশ হচ্ছে এমন খবরই বেশি প্রচারিত। আমিও এ প্রসঙ্গে বেশি লিখেছি এবং সে সম্পর্কে অনেক লেখা পড়েছি।
এখন যা বলছি, তা হলো টাইপ-১ ডায়াবেটিস সম্পর্কে। একে শিশু ও তরুণদের ডায়াবেটিস বলা হয়। কারণ এ ধরনের ডায়াবেটিস শুরু হয় শৈশবে।
টাইপ-২ ডায়াবেটিসকে বলা হয় বয়স্কদের ডায়াবেটিস। কারণ বয়স বেশি হলেই এ ধরনের ডায়াবেটিসের শুরু। আজকাল বলা হচ্ছে, এসব নামকরণ তেমন যথার্থ নয়।
দেখা যাচ্ছে, অনেক শিশুর টাইপ-২ ডায়াবেটিস হচ্ছে। আর কিছু বয়স্ক ব্যক্তিরও হচ্ছে টাইপ-১ ডায়াবেটিস।
পূর্ণবয়স্কদের টাইপ-১ ডায়াবেটিস হলে একে বলেঃ
— লেটেন্ট অটোইম্যুন ডায়াবেটিস ইন এডাল্ট্স (এলএডিএ)
— লেটেন্ট অনসেট টাইপ-১ ডায়াবেটিস
ভারী ভারী ডাক্তারি নাম করা হলো।
এবার বলি, টাইপ-১ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের মধ্যে পার্থক্য কী। জানা আছে আপনাদের অনেকের, তবু বলছি।
টাইপ-১ ডায়াবেটিস
এ ধরনের ডায়াবেটিক রোগীর রক্তে উঁচু মানের গ্লুকোজ থাকে। এ জন্য যে, তাদের শরীরে যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি হয় না। এসব রোগীর দেহের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা অগ্ন্যাশয়ের বিটাকোষগুলো ধ্বংস করে দেয়। কালক্রমে এসব কোষ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। কোনো ইনসুলিনই আর তৈরি হয় না। ইনসুলিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই হরমোনের সাহায্যে শর্করা শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। টাইপ-১ ডায়াবেটিসের রোগীদের শরীরে যথেষ্ট ইনসুলিন থাকে না বলে এদের ইনজেকশন নিতে হয়।
টাইপ-২ ডায়াবেটিস
টাইপ-২ ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে গ্লুকোজ বাড়ে। কারণ, এরা হলো ইনসুলিন-রেজিস্ট্যান্ট। এর মানে হলো, শরীরে যে পরিমাণ ইনসুলিন নিঃসৃত হয়, শরীরের কোষ একে ব্যবহার করতে পারে না। টাইপ-২ ডায়াবেটিসের রোগীরা কখনো কখনো রোগের মোকাবিলা করে স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে এবং নিয়মিত ব্যায়াম করে। কারও কারও ওষুধের দরকার হয়। এ ধরনের ডায়াবেটিস মোট ডায়াবেটিক রোগীর ৯০-৯৫ শতাংশ।
এবার বলা প্রয়োজন, বয়স্কদের টাইপ-১ ডায়াবেটিস ও শিশুদের টাইপ-১ ডায়াবেটিসের মধ্যে তফাতটা কোথায়।
যা হয় তা হলো, বয়স্ক ধরনের টাইপ-১ ডায়াবেটিস ক্রমে ক্রমে অগ্রসর হয়। অথচ টাইপ-১ ডায়াবেটিস হঠাৎই আবিভূêত হয় এমন শিশুদের মধ্যে, যারা আপাতত সুস্থ।
বড়দের টাইপ-১ ডায়াবেটিস যখন চিহ্নিত হয় প্রথমে, তখনো দেখা যায় অগ্ন্যাশয়ের কিছু ইনসুলিন ক্ষরণের ক্ষমতা রয়েছে। কালক্রমে অবশ্য সব বিটাকোষ ধ্বংস হয়ে যায়।
টাইপ-১ ডায়াবেটিসের লক্ষণ-উপসর্গ শিশু ও বড়দের মধ্যে ভিন্ন হতে পারে।
— সূচনাকালে যে লক্ষণ, যেমন তৃষ্ণা ও ওজন হ্রাস, এগুলো সাধারণত বড়দের মধ্যে দেখা দেয় ধীরে ধীরে। শিশুদের মধ্যে দেখা যায় কয়েক দিনের মধ্যেই।
— শিশুদের টাইপ-১ ডায়াবেটিসের জটিলতার যে কিটোএসিডোসিস হয়, তা বড়দের মধ্যে সাধারণত হয় না।
প্রথম বড়দের মধ্যে টাইপ-১ ডায়াবেটিস টাইপ-২ ডায়াবেটিসের মতো হতে পারে। তাই মুখে খাওয়ার ওষুধ প্রথমে দেওয়া হলেও পরে লাগে ইনসুলিন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, টাইপ-২ ডায়াবেটিস হিসেবে শনাক্ত করা পূর্ণবয়স্কদের ১০ শতাংশ বস্তুত টাইপ-১। এও জানা নেই, কেন টাইপ-১ ডায়াবেটিস আজকাল পূর্ণবয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যাচ্ছে।
এমন হতে পারে যে ডায়াবেটিসের রোগ নির্ণয় এখন অনেক উন্নত বা এমন হতে পারে, সব ধরনের নতুন শনাক্ত করা ডায়াবেটিসের সংখ্যা বাড়ছে।
পূর্ণবয়স্কদের টাইপ-১ ডায়াবেটিস হলে কী করা উচিত?
এর ঝুঁকি কমানোর জন্য তেমন কিছু করার নেই। তবে নিচের উপসর্গগুলো দেখা গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন-
— ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
— প্রবল তৃষ্ণা
— ক্ষুধা খুব বেড়ে যাওয়া
— চেষ্টা করেও ওজন হ্রাস করা যাচ্ছে না
— ক্লান্তি
— বিরক্তিবোধ
— ঝাপসা দৃষ্টি
— কেবল চিকিৎসকই বলতে পারবেন ডায়াবেটিস হয়েছে কি না। হলে একে মোকাবিলা করতে হবে।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক
ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ০৫, ২০০৯
Leave a Reply