যাদের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় আমরা বলি অ্যাজমার রোগী। যাকে বাংলায় বলে হাপানি। অ্যাজমা হলে মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয়। সে সময় নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, শ্বাসের সঙ্গে একটা টান চলে আসে। এ টানকেই বলে হাপানি। যখন মানুষের লাংগস বা ফুসফুস যথেষ্ট পরিমাণ বাতাস টানতে পারে না তখন শরীরে বাতাসের অভাব দেখা দেয়। আর এটাকেই আমরা অ্যাজমায় আক্রান্ত হওয়া বুঝি। শিশুরা এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে বেশি। আর শীতকালে ঠান্ডাজনিত অ্যালার্জির কারণে অ্যাজমায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি থাকে বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সারা বিশ্বে অ্যাজমা বা হাপানি রোগটি বাড়ছেই।
এ রোগে আক্রান্ত হলে যেসব সমস্য হতে পারে সেগুলো হলোঃ
১· নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা।
২· নিঃশ্বাসে আওয়াজ।
৩· বুকে ব্যথা অনুভব করা।
৪· বুকে জমাট বাধা বা বুকে ঠান্ডা লাগা।
যেসব কারণে অ্যাজমা হতে পারে বা অ্যাজমার কারণগুলোকে বলা হয় ট্রিগার। বিজ্ঞানীরা এখনো জানেন না, ঠিক কি কারণে অ্যাজমা হয়। সারা বিশ্বে বাতাসে সমস্যার কারণে অ্যাজমার রোগটি বাড়ছে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। পরিবারে যদি অ্যাজমার ইতিহাস থাকে অথবা অ্যালার্জি থাকে তাহলে অ্যাজমা আক্রমণ করে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন।
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ধুলোবালি আর ময়লার কারণেই অ্যাজমায় আক্রান্ত হয় মানুষ। এছাড়া বাড়ির পোষা প্রাণী থেকে অ্যাজমায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বংশগত সূত্র থেকে
পরিবারের বাবা-মায়ের অ্যালার্জি অথবা কারো অ্যাজমা আছে তা থেকে অ্যাজমা ছড়ায়। যদিও অ্যালার্জি ও অ্যাজমা রোগ দুটির ক্ষেত্রে জিনগত ব্যাপার কাজ করে। তবে বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন, কোন জিনটি এ জন্য দায়ী। বিজ্ঞানীরা পরিবেশগত দূষণের দিকে নির্দেশ করেন। পরিবেশ দূষণের কারণেও সারা বিশ্বে অ্যাজমা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
যদি আপনার ঘরে অ্যাজমার জন্য দায়ী ট্রিগারগুলো থাকে তাহলে আপনি কি করতে পারেনঃ
১· যদি দেখেন ঘরে ছত্রাকের আগমন ঘটেছে সাবান অথবা পানি দিয়ে এগুলো ধুয়ে ফেলুন।
২· ঘরের বাথরুম বা রান্নাঘরে অ্যাডজাস্ট ফ্যান লাগান, যাতে ধুলোবালি ঘর থেকে বের হতে পারে।
৩· পানির পাইপে যেন কোনো ময়লা ঢুকতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
৪· যে কোনো জিনিসে ছত্রাক বসতে পারে, এগুলো সব সময় শুকনো জায়গায় রাখুন এবং ঘর যাতে ভেজা বা স্যাতসেতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
ডাস্ট মাউট
আমাদের চারপাশে এমন সব ছোট প্রাণী বাস করে যাদের ইংরেজিতে বলে বাগস। তারা বাস করে আমাদের বিছানা, বালিশ ও চাদরের মধ্যে। এদের প্রতিরোধ করার জন্য দরকারঃ
* বিছানা-বালিশ সপ্তাহান্তে পরিষ্কার রাখা
* মিটসেফ, আলমিরা এসব ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করা
* যতোটা পারা যায় ঘরকে শুকনো রাখার চেষ্টা করা।
ধূমপান
যারা জনসমক্ষে ধূমপান করেন তারা অনেকেই জানেন না, অন্যের জন্য তারা কতোটা ক্ষতি বয়ে আনেন। যারা ধূমপান করেন তাদের পাশে যারা থাকেন তারাও ধূমপানের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ধূমপায়ীর পাশে থাকলে তা অ্যাজমা ট্রিগার হিসেবে কাজ করে।
* কাজেই প্রকাশ্য স্থানে ধূমপান করা থেকে বিরত থাকুন।
* ছোট বাচ্চাদের সামনে কখনোই ধূমপান করবেন না।
তেলাপোকা
তেলাপোকার বয়ে বেড়ানো উপাদান ঘরে পড়ে থাকলে সেগুলোর কারণে অ্যাজমার ট্রিগার হতে পারে।
* ঘরের কোনাগুলো, বেসিন, রান্নাঘর এসব পরিষ্কার রাখুন।
* থালা-বাসন পরিষ্কার রাখুন।
* খাবার ঢেকে রাখুন।
গৃহপালিত পশু
উষ্ণ রক্তের প্রাণীর লালা ও মূত্র অ্যাজমার ট্রিগার।
* পোষা প্রাণীর থাকার ব্যবস্থা ঘরের বাইরে করুন।
* যদি তাদের ঘরের মধ্যে রাখতে হয় তাহলে তাকে বেডরুমের বাইরে রাখুন।
* যেসব ঘরে পোষা প্রাণী আছে ঘরের মেঝে সব সময় পরিষ্কার রাখুন।
বিভিন্ন প্রসাধন এবং রাসায়নিক ব‘ও অনেক সময় অ্যাজমার ট্রিগার হিসেবে কাজ করে। এগুলো যথেচ্ছ ব্যবহার শিশুদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
চিকিৎসা
অ্যাজমার কোনো চিকিৎসা নেই। তবে অ্যাজমাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অ্যাজমার জন্য রয়েছে বিশেষ ইনহেলার। তবে অ্যাজমার লক্ষণ দেখার সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উত্তম।
সূত্রঃ দৈনিক যায়যায়দিন, ডিসেম্বর ২০০৭
Leave a Reply