প্রায়ই আমরা একটি বিব্রতকর সমস্যার সম্মুখীন হই। সেটি হচ্ছে সম্মানিত রোগীরা জিজ্ঞাসা করেন যে, শুনেছি পাইলস অপারেশন করলে আবার হয় তাই আর অপারেশন করে লাভ কী? এক কথায় এর উত্তর দেওয়া যায় না। রোগীদের এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার পূর্বে আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাস পর্যালোচনা করা দরকার। রেকটাম ও মলদ্বারের অনেক রোগ আগের যুগে অপারেশন করে ভাল করা দুস্কর ছিল। পাইলস বা ফিষ্টুলা অপারেশন করলে আবার হওয়াই ছিল নিয়ম। এ প্রসঙ্গে আমি আমেরিকান সার্জন অধ্যাপক ডাঃ মারভিল এল করম্যানের লেখা ‘কোলন এণ্ড রেকটাল সার্জারী’ নামক টেক্সট বই থেকে একটি উদ্ধৃতি দিলে বিষয়টি পরিস্কার হবে এবং এ জাতীয় সার্জারীর অতীত প্রেক্ষাপটে বুঝতে সুবিধা হবে। অধ্যাপক ডাঃ করম্যান তার বইয়ে লেখেন যে বিগত দুই হাজার বৎসর ধরে মলদ্বারে ফিষ্টুলার উপর অসংখ্য বই ও বৈজ্ঞানিক প্রকাশনা প্রমাণ করে যে এটি একটি বিশেষ সমস্যা এবং ফিষ্টুলার অপারেশনের ব্যর্থতার জন্য সার্জনদের যত বদনাম হয়েছে অন্য কোনো অপারেশনে আজ পর্যন্ত তা হয়নি। এ কারণে ১৮৩৫ সনে ডাঃ স্যালমন লন্ডনের কেন্দ্রে একটি আলাদা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন যার নাম দেওয়া হয় সেন্ট মার্কস হসপিটাল ফর দ্য ডিজিজেস অব কোলন এণ্ড রেকটাম। যে হাসপাতালের উদ্দেশ্য ছিল বৃহদান্ত্র ও পায়ুপথের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করা এবং এজাতীয় বিশেষজ্ঞ সার্জন তৈরী করা যায় এজাতীয় রোগগুলো বিশেষজ্ঞ হিসবে নৈপুণ্যের সাথে চিকিৎসা করবেন যাতে আবার হওয়ার বদনাম থেকে নিস্কৃতি পাওয়া যায়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে যাকে পাইলস বা হেমোরায়েড বলে সেটি অপারেশনের পর আবার হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ২ ভাগ। বেশীর ভাগ রোগী যারা পাইলস আবারও হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা এটি বলতে সাধারণত বোঝান মলদ্বারে বাড়তি ত্বক বা মাংপিন্ড অথবা চুলকানি হয়েছে এটিকেও কেউ কেউ আবার পাইলস হয়েছে বলে ধরে নেন। এ সমস্যাগুলো পাইলস আবার হয়েছে বোঝায় না। মলদ্বারের চুলকানি বিভিন্ন রোগের একটি লক্ষণ মাত্র।
খুবই কম অর্থাৎ ২% ক্ষেত্রে হলেও পাইলস আবার হতে পারে। ব্যাপারটি কি করে ঘটে তা বোঝাতে বিস্তারিত ব্যাখ্যার প্রয়োজন। এ ব্যাপারটি ঘটার পেছনে অপারেশনের একটি কৌশলগত কারণ রয়েছে। অপারেশনের সময় যে শিরাগুলো স্বাভাবিক বলে মনে হয়েছিল পরবর্তী সময়ে মলদ্বারের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় অথবা কোলেটারাল রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে কয়েক বছর পর এগুলো পাইলস আকারে দেখা দিতে পারে। তাছাড়া পাইলস যখন খুব বড় হয় তখন মনে হয় মলদ্বারের চতুর্দিকের সমস্ত এলাকাই পাইলসে ভর্তি। তখন একজন সার্জনের মনে হয় সমস্ত স্ফীত অংশই কেটে ফেলে দিতে হবে নইলে পাইলস থেকে যাবে। যদি এভাবে সবকিছু কেটে ফেলে দেয়া হয় তাহলে মলদ্বার সংকুচিত হয়ে মলত্যাগে বাঁধা সৃষ্টি হবে। এ ক্ষেত্রে সঠিক কৌশলটি হচ্ছে দুটি পাইলসের মাঝুখানে আমাদের বাধ্যতামূলকভাবে কিছু ঝিল্লি ও ত্বক সংরক্ষণ করতে হবে। যেহেতু এর তলদেশে পাইলসের শিরাগুলো বিস্তৃত থাকে তাই ঝিল্লির তলদেশে থেকে সতর্কতার সঙ্গে এ শিরাগুলোকে কেটে নিয়ে আসতে হবে। এ কৌশল অবলম্বন করলে পাইলসের শিরাগুলো যেমন সর্ম্পূরূপে অপসারণ করা সম্ভব, তেমনি দুটি পাইলসের মধ্যবর্তী ঝিল্লি এবং ত্বকও সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে, যাতে মলদ্বার সংকুচিত হওয়ার সম্ভাবনাও থাকবে না।
যাহাকে অপারেশনের পর অল্প কিছু ক্ষেত্রে যখন আবারও পাইলস দেখা দেয়, তখন এগুলোর উপসর্গ ততটা তীব্র হয় না। এটিকে তখন বিনা অপারেশনে রিং লাইগেশন পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা সম্ভব। সাধারণত আবার অপারেশনের প্রয়োজন হয় না।
অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুল হক
প্রতিষ্ঠতা চেয়ারম্যান,
কলোরেকটাল সার্জারী বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
চেম্বারঃ জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ হাসপাতাল
৫৫, সাত মসজিদ রোড, ঢাকা।
ফোনঃ ০১৭১৫-০৮৭৬৬১,০১৭২৬-৭০৩১১৬।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, আগস্ট ০১, ২০০৯
Leave a Reply