রং-বেরঙ মন ভরানো হাজার বিজ্ঞাপনের গালভরা সব ডায়ালগ শুনে আমরা পণ্য ক্রয়ে আগ্রহী হই। ‘ন্যাচারাল ফ্লেভার’, ‘হেলথ ফুড’ ইত্যাদি শব্দের মায়াজালে একটি পণ্যকে পরিবারের জন্য বরাদ্দ করি। অথচ সুদৃশ্য প্যাকেট কিংবা বোতলের গায়ে ক্ষুদ্র অক্ষরে লেখা লেবেলটা ক’জনই বা পড়ি আর প্রকৃত অর্থইবা বুঝি কতটা?
আজকাল টিভি রেডিও অন করামাত্রই নানা আঙ্গিকে, নানা ভাষায় বিভিন্ন পণ্যের শ্রুতিমধুর আর দৃষ্টিনন্দন বিজ্ঞাপন ধন্য করে যায় আমাদের অক্ষি ও কর্ণদ্বয়। সেসব বিজ্ঞাপনে থাকে পণ্যের গুণাগুণ সম্পর্কে মন ভরানো সুবচন। আমরা ক্রেতারা সেই সুবচনের লোভে পা দেই, চলে যাই মার্কেটে পণ্য সংগ্রহের সন্ধানে। তবে বর্তমানে আধুনিক সময়ে কিবা গ্লোবালাইজেশনের সোনালি যুগে বদলেছে খাওয়া-দাওয়ার ধরন ও মার্কেট করার পদ্ধতি। আমরা অনেক বেশি হয়েছি স্বাস্থ্য সচেতন। বাজার ঘুরে কেনাকাটার সময় ফ্যাট, ফাইবার, কার্বোহাইড্রেটের হিসেব-নিকেষ করতে করতে আমরা খানিকটা বিভ্রান্তও বটে। কোন খাবারে বেশি ক্যালরী? কোন জুস কতটা খাঁটি? এমন হাজার প্রশ্ন আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। এই সব প্রশ্নের সঠিক সমাধান পাওয়া তখনই সম্ভব যখন আমরা বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি পণ্যের প্যাকেটের লেবেলের লেখার সঠিক মানেটা বুঝতে পারি। তাছাড়া প্রয়োজন ছাড়া তো আর কিছু জন্ম হয় না। যেহেতু পণ্যের বেলায় লেভেল বলে একটা বিষয় আছে, সুতরাং তার প্রয়োজনটাও আছে নিশ্চয়ই। আর সেটা হলো পণ্য সম্পর্কে যাবতীয় তথ্যের বিবরণ দেয়া। অর্থাৎ লেভেলটাকে বলা চলে পণ্যের পরিচয়। সাধারণত আমরা জানি, প্রসেসড নয় এমনই খাবারই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এই দর্শনের অনুসরণে আপনি প্রসেসড নয় এমন একটি পণ্য কিনে আনলেন বটে। কিন্তু পণ্যটি হাই সল্ট ফুড সমৃদ্ধ। যা স্বাস্থ্যের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর। কাজেই জিনিসটি কেনার সময় বড় বড় হরফে লেখা ‘লেস প্রসেসড’ বাক্যটির মায়াবী জাদুতে আকৃষ্ট হওয়ামাত্র, স্বাস্থ্য সচেতন হওয়া সত্ত্বেও জিনিস নির্বাচনে আপনি ভুল করে ফেলবেন। অথবা ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল বাছলেন ঠিকই। কিন্তু চিন্তাও করলেন না যে, কি পরিমাণ চিনি তাতে আছে। তাই বলছি, আপনার এবং আপনার পরিবারের জন্য যখনই কিছু কিনবেন তখনই আপনার সঠিক নির্বাচনের প্রমাণের জন্য লেভেলের সঠিক মানেটা শেখা উচিত।
লেভেলে যা থাকে
পণ্যটি সম্পর্কে জরুরি তথ্য, প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা, দাম, উপাদান তালিকা, তৈরির তারিখ, মেয়াদ শেষ হবার তারিখ, ব্যবহার বিধি, স্টোর করার নিয়মাবলি, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি তথ্যাবলি এই লেভেলে আপনি জানতে পারবেন। এক কথায় ভরতে গেলে পণ্য সম্পর্কে আপনার কাছে লেভেলটি পরিচয়পত্র।
ডেটিং সিস্টেম
০০ ইউজ বাই ডেট-লাস্ট ডেট: যে তারিখ উত্তীর্ণ হবার পর খাবারটি আর খাওয়া যাবে না কিংবা পণ্যটি আর ব্যবহার করা যাবে না। ফুড পয়জনিং রোধ করতে এই সতর্কবাণীর বিকল্প নেই।
০০ ফ্রেশনেস ডেট: যে তারিখের পর পণ্য বা খাবারটির গুণগত মান কমে যায়।
০০ এক্সপায়ারি ডেট: যে তারিখের পর আর পণ্য বা খাবারটির কার্যকর ক্ষমতা থাকে না।
সম্পূর্ণ লেভেলটিতে ভালোভাবে নজর দিন। সকল তথ্যের বিবরণ সূক্ষ্মভাবে পড়ার চেষ্টা করুন। আপনার প্রয়োজন বা চাহিদার সাথে পণ্যটি মানিয়ে গেলে এবং পণ্য বা খাবারটি আপনার জন্য পজেটিভ মনে হলে আপনি তা গ্রহণ করতে পারেন।
লিমন আহমেদ
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, জুন ১৫, ২০১০
Leave a Reply