ঢাকায় বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি (এফপিএবি) ও হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টারের (এইচডিআরসি) যৌথ আয়োজনে ১৬ জুলাই ‘বাংলাদেশে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা উপকরণের স্বল্পতা বা মজুদ শূন্যতার কারণে মানব ও অর্থনীতির ওপর প্রভাব’ শীর্ষক জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ এফ এম রুহুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান সাংসদ এম এস আকবর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম, ‘আইপিপিএফ/সারোর আঞ্চলিক পরিচালক অঞ্জলি সেন ও ‘রিপ্রোডাকটিভ হেলথ সাপ্লাইস কোয়ালিশন ব্রাসেলসের সিনিয়র টেকনিক্যাল কর্মকর্তা স্টিভ কিনজেট।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, এফপিএবির সভাপতি মেহের আফরোজের সভাপতিত্বে সেমিনারের উদ্দেশ্য তুলে ধরার পাশাপাশি স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন এফপিএবির ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক জহির উদ্দিন আহমেদ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ও এইচডিআরসির প্রধান উপদেষ্টা আবুল বারকাত।
‘বাংলাদেশে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা উপকরণের স্বল্পতা বা মজুদশূন্যতার কারণে মানব ও অর্থনীতির ওপর প্রভাব’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধে আবুল বারকাত বলেন, ‘এ দেশে প্রতিবছর ১·৪৩ শতাংশ হারে জনসংখ্যা বাড়ছে। আর এ মুহূর্তে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহার করছেন মোট জনসংখ্যার ৫৫·৮ শতাংশ নারী-পুরুষ। ২০১০ সালের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২·২ শতাংশে ধরে রাখতে হলে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার ৭২ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। তবে সমস্যা হলো, প্রতিবছর এক লাখ ৬০ হাজার ৫৮৫ জন নানা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি-জন্মনিয়ন্ত্রক বড়ি, ইনজেকশন ও প্রোটেকশনের স্বল্পতা বা পর্যাপ্ত মজুদ না থাকায় নানা ধরনের সমস্যায় পড়ছে। এ অপ্রতুলতার কারণে কেবল গত বছরই ৪৭ হাজার অপ্রত্যাশিত শিশু জন্ম নিয়েছে।’
তিনি আরও জানান, “বড়ি, ইনজেকশন ও প্রোটেকশনের স্বল্পতা বা মজুদহীনতা বা অনিয়মিত সরবরাহের ফলে ৭·৪ শতাংশ লোক নানা সমস্যায় জর্জরিত হওয়ার কারণে ব্যাপক সময় ও অর্থের অপচয় হচ্ছে। একই কারণে অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণের শিকার হয়েছেন এক লাখ ৫৯ হাজার ৮০০ জন নারী। যাদের ৫৭ শতাংশ, অর্থাৎ ৯০ হাজার ২৪০ জন এ সমস্যা থেকে মুক্ত হতো ‘এমআর’ ও ২২ হাজার ৫৬০ জন ‘অ্যাবরশন’ করেছেন।”
বর্তমান সমস্যা থেকে উত্তরণের পরামর্শ দিতে গিয়ে আবুল বারকাত জানান, ‘অবাধ জন্মনিয়ন্ত্রক উপকরণ সংগ্রহের সুযোগ বৃদ্ধি, স্থানীয়ভাবে উৎপাদনকারীদের পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান, জেলা পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা সমিতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, জাতীয় বাজেটে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত বরাদ্দ, বিষয়টি নিবিড় পর্যবেক্ষণের আওতায় নেওয়া, কর্মশালার আয়োজন এবং সর্বোপরি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, মাঠ পর্যায়ে জনবল বৃদ্ধি, বেসরকারি সংস্থার সেবাকে সঠিক ব্যবহারের আওতায় নেওয়া এবং অভিজ্ঞ লোকবলের সাহায্যে পরিবার পরিকল্পনার কার্যক্রমকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন।’
কাজী ফাহিম আহমেদ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ২২, ২০০৯
Leave a Reply