রাহেলার (ছদ্মনাম) বয়স পাঁচ বছর। সুন্দর, ফুটফুটে। কিন্তু দুই চোখে কিছুই দেখে না। দুই বছর আগে তার জ্বর ও পাতলা পায়খানা হয়েছিল, তারপর চোখে ঘা হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। রাহেলার মতো এ রকম অনেক শিশুই এমন অন্ধত্বের শিকার।
এমন অন্ধত্বের কারণ কী
জ্বরের কারণে শিশুর খাওয়ার রুচি কমে যায় আবার পাতলা পায়খানার কারণে পুষ্টিকর উপাদান শরীর থেকে বের হয়ে যায়। ফলে শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি দেখা যায় বলে চোখের পানি শুকিয়ে যায় এবং পরে চোখে ঘায়ের সৃষ্টি হয়। একে জেরফথালমিয়া বলা হয়।
কোন ধরনের খাবার কেন প্রয়োজন
— ভিটামিন-এ হলো চোখের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান। ভিটামিন-এ চোখের বিভিন্ন অংশের আবরণকে রক্ষা করে। এর অভাবে চোখ শুষ্ক হয়ে যায়। চোখের কালো রাজায় ঘা হয় এবং পরে চোখ নষ্ট হয়ে যায়।
— ভিটামিন-এর সঙ্গে ভিটামিন-সি এবং ভিটামিন-ইর প্রয়োজনীয়তা আজ প্রমাণিত। এদের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বলা হয়। এসব ভিটামিন বয়সজনিত চোখের দৃষ্টিক্ষয় অনেকাংশে রোধ করে।
— প্রোটিন বা আমিষজাতীয় খাদ্যের অভাবে চোখের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়, ফলে চোখ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়।
— গ্রামাঞ্চলে অনেক শিশুই ভিটামিন-এর অভাবজনিত অন্ধত্বে ভুগছে। এ ছাড়া ভিটামিন-এর অভাবে চোখের সবচেয়ে সংবেদনশীল অংশ রেটিনা নষ্ট হয়ে যায় বলে প্রথমে রাতকানা ও পরে শিশু স্থায়ীভাবে অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
কী করবেন
— ভিটামিন-এর অভাবজনিত চোখের রোগ শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। শিশুর জন্মের পর মায়ের দুধই তার জন্য সবচেয়ে ভালো খাবার। মায়ের দুধে প্রয়োজনীয় সব খাদ্য-উপাদান থাকে বলে ভিটামিন-এর অভাবজনিত অন্ধত্ব এসব শিশুর অনেক কম হয়।
— ছোটবেলা থেকেই শিশুকে সুষম খাদ্যে অভ্যস্ত করতে হবে।
— ছোট মাছ, পাকা ফল, শাকসবজিতে প্রচুর ভিটামিন রয়েছে। শিশুকে এসব খাবারে অভ্যস্ত হতে হবে।
— জ্বর ও পাতলা পায়খানা হলে প্রয়োজনীয় খাবার স্যালাইন ও সুষম খাদ্য দেওয়া প্রয়োজন, যেন শরীরে ভিটামিন ও লবণের ঘাটতি না হয়।
— শিশু রাতে ঝাপসা দেখলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
— চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন-এ সময়মতো খাওয়ানোর মাধ্যমে শিশুর অন্ধত্ব প্রতিরোধ করা যায়।
সবচেয়ে বড় কথা, ভিটামিন-এর অভাবজনিত অন্ধত্ব শুধু সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমেই প্রতিরোধ করা যায়। এর জন্য প্রয়োজন প্রচার ও জনসচেতনতা।
শামস্ মোহাম্মদ নোমান
চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র
পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ২২, ২০০৯
Leave a Reply