কথায় বলে যার মাথা আছে তার ব্যথাও আছে। অর্থাৎ মাথা থাকলে ব্যথাও থাকবে। বিজ্ঞানীদের মতে মাথার ব্যথা অন্যান্য কারণে হতে পারে।
তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বেশির ভাগ মাথা ব্যথার কারণ শুধুমাত্র মাথার অসুস্থতার কারণেই হয় তা সঠিক নয়। শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রতঙ্গের অসুস্থতার কারণেও মাথা ব্যথা হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ নাক, কান, গলা অথবা মুখের ভেতরের বিশেষ কোনো রোগের কারণে মাথা ব্যথা হতে পারে। মুখের ভেতরের যে সব কারণে মাথা ব্যথা হতে পারে সেগুলোর মধ্যে মাড়ির প্রদাহ বা পেরিওডন্টাল ডিজিজ ও দন্তক্ষয় বা ডেন্টাল ক্যারিজ এর করতে প্রদাহ জনিত রোগ পালপাইটিস ও আক্কেল দাঁত বা উইজডম দাঁতের অসমান অবস্থানের কারণে জটিলতা, মুখের ভেতরের বিভিন্ন ধরনের ক্ষত ও ঘা, আঘাত জনিত কারণে চোয়ালের বা দাঁতের ফ্রেকচার বিভিন্ন ধরনের মিছ এবং টিউমার। দাঁতের ও মুখের এই ধরনের রোগ বা অসুস্থতা অনেক সময় কানে বা গলার ব্যথার কারণ হতে পারে।
তবে বিশেষ যে একটি রোগ এর কারণে মাথার ব্যথা বেশি হয় সেটি হল উইজডম দাঁত বা আক্কেল দাঁতের বেয়াক্কেল অবস্থানের কারণে। অর্থাৎ আক্কেল দাঁত তার সঠিক অবস্থানে না থেকে বাঁকা হয়ে কখনো পাশের দাঁতের উপর চাপ সৃষ্টি করে আবার কখনোবা বাঁকা অবস্থানের কারণে উপরের দিকে বেরিয়ে আসতে না পেরে স্থায়ীভাবে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এছাড়া বাঁকা বা অসমান অবস্থানের কারণে পাশের দাঁতে দন্তক্ষয় জনিত প্রদাহ (পালপাইটিস) থেকেও মাথা ব্যথা হতে পারে।
আরও একটি বিশেষ কারণে মাথা ব্যথা হতে পারে সেটা হলো ট্রাইজিমিনাল নিউরেলজিয়া। যা স্নায়ু রোগ হিসেবেই চিহ্নিত, কিন্তু এক্ষেত্রেও প্রচন্ড মাথা ব্যথা হতে পারে যদিও তা কয়েক সেকেন্ডের জন্য।
এ প্রসঙ্গে একজন রোগীর কথা বলা প্রয়োজন, তার দীর্ঘদিন যাবত মাথা ব্যথা নিয়ে বিখ্যাত বিশেষজ্ঞ সব ডাক্তারের ফাঁদে পরামর্শ নিয়েই চলছেন কিন্তু মাথা ব্যথা কমার কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। রোগ নির্ণয় এর যত রকম মাধ্যম আছে এমনকি এম আর আই আর সিটিস্ক্যান পর্যন্ত করা হয়েছে কিছুইতে কমছে না। ব্যথার ওষুধ খেয়ে খেয়ে ও তিনি ইতোমধ্যে দেহের অনেক ক্ষতি করেছেন বিশেষতঃ লিভারের সমস্যাও দেখা দিয়েছে। কোনোভাবেই যখন তার মাথা ব্যথা কমছে না তখন প্রতিবেশী একজনের পরামর্শে দাঁতের ডাক্তারের কাছে আসেন কারণ সেই প্রতিবেশী ভদ্রলোক একই কারণে একজন ভুক্তভোগী।
পরবর্তীতে তার দাঁতের ডাক্তার ওপিএ এক্সরের মাধ্যমে সনাক্ত করেন একটি আক্কেল দাঁতের অসমান অবস্থানকে। আক্কেল দাঁতের এই বাঁকা অবস্থানের কারণে পার্শ্ববর্তী দাঁতের উপর ক্রমাগত একটি চাপ সৃষ্টি সেই সাথে ঐ স্থানে দীর্ঘদিনের ডেন্টাল ফ্লক জমা থাকার কারণে সৃষ্ট ডেন্টাল ক্যারিজ জনিত পালপাইটিসই ছিল তার দীর্ঘদিনের মাথা ব্যথার মূল কারণ। পরবর্তীতে তার সেই আক্কেল দাঁতের উৎপাটন ও ডেন্টাল ক্যারিজ আক্রান্ত দাঁতের রুট ক্যানেল চিকিৎসাই তাকে মুক্ত করে মাথা ব্যথা থেকে। এমন অনেক ঘটনাই মানুষকে মাথা ব্যথা থেকে রেহাই দিতে পেরেছে। তাই মাথার ব্যাপারে কারণ বের করতে একজন রোগীর সম্পূর্ণ ইতিহাস যেমন জরুরি তেমনি মুখের ভেতরকার সকল দাঁতের সুস্থতা ও সেই সাথে মাড়ি ও পারস্পরিকঃ স্বাভাবিক অবস্থাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে বলা প্রয়োজন, আমরা অনেক সময় মুখের ভেতরের অবস্থা খালি চোখে দেখে নিরূপণ করতে পারি না তাই প্রয়োজন একে সুক্ষ্মভাবে পরীক্ষার নীরিক্ষার মাধ্যমে সণাক্তকরণ। তবে সাধারণত এই মাথা ব্যথা থেকে মুক্ত থাকতে আমাদের নিয়মিতভাবে দাঁতের যত্ন যেমন নিতে হবে তেমনি বছরে অন্ততঃ একজন ডেন্টাল ক্যারিজ মাড়ির প্রদাহ ও মুখের ক্ষত বা ঘা এর মত রোগকে গুরুত্ব সহকারে ফিলিং স্কেলিং ও কারণ সমূহকে নির্মূল করতে হবে। তাহলে মাথা ব্যথা যেমন থাকবে না তেমনি অন্যান্য সমস্যাও থাকবে না।
অধ্যাপক ড. অরূপ রতন চৌধুরী
বিভাগীয় প্রধান
ডেন্টিস্ট্রি বিভাগ, বারডেম
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি
মানস- মাদক ও নেশা নিরোধ সংস্থা
ফোন : ০১৭১৩০০২৩৭৬, ০১৮১৯২১২৬৭৮।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, জুলাই ১৮, ২০০৯
Leave a Reply