ত্বককে সুন্দর তরতাজা আর উজ্জ্বল রাখতে হলে অতিরিক্ত সূর্যরশ্মি অর্থাৎ অতিবেগুনি রশ্মি এড়িয়ে চলতে হবে। তা না হলে ত্বক বুড়িয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে একটি ছাতা বা টোকা জাতীয় চুপি ব্যবহার করা যেতে পারে। যারা এগুলোকে রুচি সম্মত মনে না করেন তারা যেকোনো একটি উৎকৃষ্ট মানের সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। এখন প্রশ্ন আসতে পারে কোন সানস্ক্রিন আপনি ব্যবহার করবেন? এক্ষেত্রে প্রথমেই আপনার ত্বকের রঙ বিবেচনায় আনতে হবে। যে ত্বকের রঙ যত সাদা যে ত্বক সূর্যালোকে তত বেশি নাজুক। মনে রাখতে হবে যে সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম কেবলমাত্র সূর্যের ‘বি’ অতি বেগুনি রশ্মিকেই প্রতিহত করতে সক্ষম। আর একটি কথা, বাজারে অনেক রকমের সানস্ক্রিন আছে এবং তাতে সান প্রটেকশন ফ্যাক্টরও উল্লেখ করা আছে যেমন সান প্রটেকশন ফ্যাক্টর আছে ১৫, ৩০, ৪৫ ও ৬০ ইত্যাদি। আমাদের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে তা ১৫ এর নিচে যেন না হয়; আবার ৩০ এরও বেশি ব্যবহারের কারণও সুস্পষ্ট নয়। ত্বকের জন্য এসপিএফ ৮ থেকে ১২ হলেই যথেষ্ট কারণ কালো ত্বকের গায়ে যে মেলানিন নামক পদার্থ থাকে সেটাই প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন হিসেবে কাজ করে। এবার আসা যাক সাবান ব্যবহারের ক্ষেত্রে। বর্ষা আর গরমকালে দিনে দু’বার সাবান ব্যবহার করাই উত্তম। তবে সাবান যেন বেশি ক্ষারযুক্ত না হয়, সেটাও বিবেচনায় রাখতে হবে। কারণ অতিরিক্ত ক্ষার ত্বকের ক্ষতি করে। সেক্ষেত্রে ভাল কোনো বেবি সোপ বা গ্লিসারিন সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে। এমনও অনেকে আছেন যারা একদমই সাবান ব্যবহার করেন না। সেটাও কিন্তু ঠিক নয় কারণ এতে ত্বকে ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে। ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে ত্বকের কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তাই ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা নিশ্চিত করা খুবই প্রয়োজন। সে জন্যে প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি খাওয়া খুবই প্রয়োজন। গরমকাল এলে ঘামাচি হয় অনেকেরই। অনেকেরই জন্য এটা একটি খুবই বিব্রতকর সমস্যা। চুলকানি ছাড়াও এতে ত্বক খসখসে হয়ে পড়ে। তাই ঠান্ডা ঘরে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরের মধ্যে বাতাসের প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। সার্বক্ষণিক একটি ফ্যানের সুব্যবস্থা থাকতে হবে। যারা অর্থনৈতিকভাবে সমর্থবান তারা একটি এয়ার কুলার ব্যবহার করতে পারেন। মনে রাখবেন, এসি-এর নিচে থাকলে একদমই ঘামাচি মুক্ত থাকা সম্ভব। ঘামাচির প্রবণতা থাকলে গরমকালে কম ক্ষার যুক্ত সাবান দৈনিক ২ বার ব্যবহার করা ভাল।
ত্বকে অতিরিক্ত এন্টি সেপটিক ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা ঠিক নয়। এতে ত্বক মোটা ও খসখসে হয়ে যায়। ত্বককে শুষ্ক রাখা খুবই অপরিহার্য। আমাদের দেশে গরমকালে বাতাসে আর্দ্রতা এমনিতেই বেশি। ঘামও হয় বেশি। ফলে পরিধেয় বস্ত্র খুব সহজেই ভিজে গিয়ে থাকে। মনে রাখবেন, ভেজা বস্ত্র পরে থাকলে ত্বকে দাঁদ হবার সম্ভাবনা অনেকাংশেই বেড়ে যাবে। তাই ঘামে বস্ত্র ভিজে গেলেই তা বদলে শুষ্ক ও পাতলা কাপড় পল্টে নিতে হবে। তাছাড়া গোসলের পর দেহের ভাজগুলোতে যেন পানি জমে না থাকে সে ব্যাপারেও সচেষ্ট হতে হবে। মনে রাখতে হবে দেহের ভাজস্থানগুলোই ছত্রাক জম্মাবার উর্বর ক্ষেত্র। আর তার উপর যদি থাকে ভেজা তাহলে তো কথাই নেই। তেল ব্যবহারের ব্যাপারেও সতর্ক হতে হবে।
ডা. দিদারুল আহসান
লেখক : চর্ম, এলার্জি ও একান্ত গোপন রোগ বিশেষজ্ঞ, আলরাজি হাসপাতাল
১২, ফার্মগেট, ঢাকা, মোবাইল : ০১৮১৯২১৮৩৭৮।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, জুলাই ১৮, ২০০৯
Leave a Reply