কিছু লোকের মূত্রপথের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। এরকম একটি গোষ্ঠী হচ্ছে মহিলারা। ২০ শতাংশ মহিলা সারাজীবনে মূত্রপথের সংক্রমণে ভুগবেনই। এর প্রধান কারণ তাদের শারীরিক গঠন। মহিলাদের মূত্রনালি পুরুষদের মূত্রনালির চেয়ে ছোট, যার কারণে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত মূত্রথলিতে প্রবেশ করতে পারে। যেসব মহিলা শারীরিক মিলনভাবে সক্রিয়, তাদের মূত্রপথের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। কারণ শারীরিক মিলনশারীরিক মিলনের ফলে মূত্রনালিতে ব্যাকটেরিয়া সরে আসতে পারে। জরিপে দেখা গেছে, যেসব মহিলা জন্মনিরোধক হিসেবে ডায়াফ্রাম ব্যবহার করেন, তারা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। মেনোপজের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়া খুব সাধারণ। এর কারণ হচ্ছে এ সময়ে ইস্ট্রোজেন ক্ষয়ের কারণে মহিলাদের জননাঙ্গ, মূত্রনালি ও মূত্রথলির তলদেশ পাতলা ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে রয়েছে যেকোনো কারণে প্রস্রাবের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়া যেমন প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি অথবা কিডনির পাথর। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার পরিবর্তন হলে এবং একই সাথে ডায়াবেটিস থাকলে মূত্রপথের সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা কিংবা বৃদ্ধ রোগীদের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ক্যাথেটার ব্যবহার করলে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মহিলাদের রক্তের ধরন বার বার মূত্রপথের সংক্রমণে ভূমিকা রাখে। এসব মহিলার মূত্রপথের কোষে ব্যাকটোরিয়া সহজে সংযুক্ত হতে পারে।
উপসর্গ
মূত্রপথের সংক্রমণের সব রোগীর উপসর্গ দেখা দেয় না। তবে অধিকাংশ রোগীর উপসর্গ দেখা দেয়। এসব উপসর্গের মধ্যে রয়েছে-
০ দ্রুত প্রস্রাব করার ইচ্ছা
০ প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া করা
০ ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, অল্প পরিমাণে প্রস্রাব হওয়া
০ তলপেটে ব্যথা করা অথবা পিঠের নিচের অংশে ব্যথা করা
০ প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া অথবা ঘোলা, দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব হওয়া।
মূত্র বা প্রস্রাবের পথের সংক্রমণের রোগীদের পুরুষাঙ্গ থেকে নিঃসরণ হতে পারে। কিডনির সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক। এর উপসর্গের মধ্যে রয়েছে প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া অনুভূতি, পেটব্যথা, পিঠের নিচের অংশ ব্যথা, জ্বর, কাঁপুনি, বমি বমি ভাব, ঘন ঘন প্রস্রাব এবং প্রস্রাবে ঘোলা হওয়া অথবা রক্ত যাওয়া। কিছু শারীরিক মিলন সংক্রামক রোগ মূত্রপথের সংক্রমণের মতো উপসর্গ তৈরি করতে পারে।
প্রত্যেক ধরনের মূত্রপথের সংক্রমণের জন্য বিশেষ কিছু উপসর্গ রয়েছে। যেমন-
০ অ্যাকিউট পাইলো নেফ্রাইটিসের ক্ষেত্রে পেটব্যথা, উচ্চমাত্রার জ্বর, কাঁপুনি ও বমি বমি ভাব বা বমি হয়।
০ সিস্টাইটিসের ক্ষেত্রে প্রস্রাবে পুঁজ যায়। পুরুষদের ক্ষেত্রে পুরুষাঙ্গ দিয়ে নিঃসরণ হতে পারে।
ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল
লেখক : জেনারেল ও ল্যাপারোস্কপিক সার্জন এবং মূত্ররোগ বিশেষজ্ঞ
চেম্বার : কমপ্যাথ লিমিটেড, ১৩৬, এলিফ্যান্ট রোড, (বাটা সিগন্যাল ও হাতিরপুল বাজারের সংযোগ রাস্তার মাঝামাঝি), মোবাইল : ০১৭১৬২৮৮৮৫৫।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, জুলাই ১৮, ২০০৯
Leave a Reply