মেঘের কোলে রোদের লুকোচুরির দিন তো শুরু হলো। তবে বর্ষার সময় রোদের তীব্রতা কম দেখে সানস্ক্রিনের সুরক্ষা এড়িয়ে গেলে কিন্তু ভুল করবেন। কারণ তীব্রতা যেমনই হোক, রোদ থেকে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে যেকোনো সময়। বাইরে বের হওয়ার আগে তাই সানস্ক্রিন ব্যবহার করা চাই-ই। সানস্ক্রিনের উপকারিতা ও ধরন বুঝে তা নির্বাচনের পরামর্শ দিয়েছেন রূপ বিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান ও হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজের ত্বক বিশেষজ্ঞ সৈয়দ আফজালুল করিম।
সানস্ক্রিনের প্রয়োজনীয়তা
আমাদের ত্বকে একধরনের পিগমেন্ট থাকে, যাকে মেলামিন বলে। সূর্যের রশ্মি থেকে এই মেলামিন আমাদের ত্বককে সুরক্ষা দেয়, কিন্তু এটা গাঢ় রঙের হওয়ায় রোদের সংস্পর্শে ত্বকের রং কালো হতে শুরু করে। সূর্যের তাপে ইউভি-এ ও ইউভি-বি এ দুই ধরনের রশ্মি থাকে। ইউভি-এ ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ সৃষ্টি করে আর ইউভি-বি ত্বকে পোড়া দাগের সৃষ্টি করে। এই দুই ধরনের রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাবে ত্বকে অকাল বার্ধক্য ছাড়াও ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। এর হাত থেকে রেহাই পেতে হলে চাই সানস্ক্রিন।
সানস্ক্রিন হলো এমন একটি আবরণ, যা ত্বকের ওপর লাগানো থাকলে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা যায়।
ধরন বুঝে…
ত্বকের ধরন অনুযায়ী বেছে নিন আপনার সানস্ক্রিনটি। বাজারে বিভিন্ন ধরনের সানস্ক্রিন পাওয়া যায়। যেমন অয়েন্টমেন্ট, ক্রিম, জেল, লোশন, স্প্রে, পাউডার ওয়াক্স স্টিক ইত্যাদি।
ক্রিমটা বেছে নিন শুষ্ক ত্বকের জন্য। লোশন ভালো তৈলাক্ত ত্বকের জন্য। আবার শরীরের রোমশ অংশে ব্যবহারের জন্য জেল বেছে নিতে পারেন। চোখের চারপাশের ত্বকের জন্য ওয়াক্স স্টিক ব্যবহার করা যেতে পারে। যাঁদের ত্বক বেশি তৈলাক্ত, তাঁরা তেলমুক্ত সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করুন অথবা সানব্লক পাউডার ব্যবহার করুন। শিশুদের ক্ষেত্রে তাদের ত্বক উপযোগী আলাদা সানস্ক্রিন রয়েছে, সেগুলো বেছে নিন। যাঁদের ত্বক বেশি স্পর্শকাতর তাঁরা শিশুদেরটি ব্যবহার করতে পারেন। যাঁরা বাইরে খেলাধুলা করেন, তাঁরা অবশ্যই সানস্ক্রিন বেছে নিন। সাঁতার কাটার আগে পানিরোধক সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিন।
তবে একটি বিষয় মাথায় রাখুন, আমাদের দেশের আবহাওয়া অনুযায়ী এসপিএফ (সান প্রটেকশন ফ্যাক্টর) ৪০-এর বেশি এমন সানস্ক্রিন উপযোগী। এর কম হলে তার কার্যকারিতা তেমন নেই। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এসপিএফ ১৫-এর বেশি এমনটি বেছে নিন। ঠোঁট, চোখের নিচ এসব ক্ষেত্রেও এটি বেছে নিন।
বাজারে আপনি সানস্ক্রিন ও সানব্লক—দুই ধরনের উপাদানই পাবেন। তবে সবচেয়ে ভালো কাজ করে সানব্লক উপাদানটি।
ব্যবহারবিধি
শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা সারা বছরই দিনের বেলায় বাইরে যাওয়ার আগে ত্বকের খোলা অংশে সানস্ক্রিন লাগাবেন। মেকআপের আগেও এটি ব্যবহার করা যায় অথবা সানস্ক্রিনযুক্ত মেকআপের উপাদান বেছে নিতে পারেন। সঠিক নিয়মে সানস্ক্রিন লাগানো গেলে ত্বকের বার্ধক্য ও পুড়ে যাওয়া ঠেকানো যায়।
বাইরে বের হওয়ার ১৫-৩০ মিনিট আগে ত্বকের পুরো খোলা অংশে সানস্ক্রিন লাগান। বিশেষত মুখমণ্ডল, হাত, পায়ের খোলা অংশ, গলা, ঘাড় যেন বাদ না পড়ে। ঠোঁটেও লিপবাম লাগান। বেলা ১১টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত সূর্যের রশ্মিটা বেশি প্রখর। তাই এ সময় অবশ্যই নিয়মিত দু-তিন ঘণ্টা পরপর সানস্ক্রিন লাগান। অতিরিক্ত ঘাম যাঁদের হয় বা পানিতে যাঁদের কাজ, তাঁদের একটু পরপর সানস্ক্রিন লাগাতে হবে।
রোদে পোড়া দাগ দূর করতে
ত্বকের তামাটে পোড়া দাগটা নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে একটু সময় বের করে যত্ন নিন।
বাইরে থেকে ফিরে ত্বকে বরফ ঘষুন অথবা ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিন।
পাকা টমেটো অর্ধেক ভাগ করে কেটে পোড়া অংশে খানিকক্ষণ ম্যাসেজ করুন।
চিনি ও লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে ম্যাসেজ করা যেতে পারে।
শশার রস মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন।
টক দইয়ের সঙ্গে আমন্ড বাদামগুঁড়ো মিশিয়ে তা মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
যাঁদের একদমই সময় হয়ে ওঠে না, তাঁরা বাজার থেকে ক্যালামাইলিন লোশন কিনে নিন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পোড়া ত্বকে লাগিয়ে নিন। পরবর্তী সময় আর ভুল নয়। কষ্ট হলেও ছাতা ও রোদচশমাটা নিয়ে বাইরে বেরোন।
সানস্ক্রিনের দরদাম
নগরের বিভিন্ন বিপণিবিতানে ঘুরতে ঘুরতে পেয়ে যাবেন আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী সানস্ক্রিনটি। বিপণিবিতানের পাশাপাশি ড্রাগ স্টোরগুলোতেও পাবেন সানস্ক্রিন। গার্নিয়ার সানস্ক্রিন লোশন পাবেন ১৮০ টাকায়, লেডি জায়না সানস্ক্রিন লোশন ও ক্রিম পাবেন ১৮০ টাকায়, জনসন সানস্ক্রিন ক্রিম লোশন (শিশুদের) পাবেন ৯৫০ টাকায়, সান ফর্মুলা ক্রিম ও লোশন ১১০০ টাকায়, ল্যাকমে লোশন ১৫০ টাকা, নিভিয়া সান ৩৫০ টাকা, স্টিভস সানব্লক ৩৫০ টাকায়, নিউট্রিজিনা (তেলমুক্ত) সানস্ক্রিন লোশন ৬৫০-৮০০ টাকা। ফান ইন সান ৫৬০ টাকা, হাওয়াইয়ান ট্রপিক ৬৫০ টাকা, সানস্ক্রিনযুক্ত লিপবাম ১৫০-২০০ টাকা।
লক্ষ করুন
সানস্ক্রিনটির গায়ে মেয়াদ লেখা আছে কি না।
ত্বকের ধরনটি দেখে নিন।
এসপিএফ ৪০-এর বেশি যেন হয়।
পূর্বে ব্যবহূত হয়েছে কি না বা সঠিক পরিমাণে আছে কি না।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ২২, ২০১০
Leave a Reply