ডায়াবেটিসের রোগীদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। আর এর জন্য প্রয়োজন শৃঙ্খলা, ব্যায়াম, খাবার ও ওজন নিয়ন্ত্রণ। যদি এসবের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হয়, তা হলে এর সঙ্গে ওষুধ ও ইনসুলিন গ্রহণ করতে হয়।
ইনসুলিন সাধারণত ত্বকের নিচে ইনজেকশনের মতো করে নিতে হয়। ইনসুলিন নেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা যতটুকু সম্ভব স্বাভাবিক রাখা। রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ ইনসুলিনের মাধ্যমে করা ভালো ও সহজ। সঠিকভাবে রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করলে রোগীরা ডায়াবেটিসের বিভিন্ন জটিলতা যেমন-অন্ধত্ব, কিডনির জটিলতা, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ডায়াবেটিক ফুট প্রভৃতি জটিলতা প্রতিরোধ করতে পারে।
বর্তমানে বাংলাদেশে সাধারণ ইনসুলিনের পাশাপাশি বিশ্বমানের আধুনিক ইনসুলিনও পাওয়া যায়। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতিতে তৈরি এই আধুনিক ইনসুলিনগুলোকে অ্যানালগ বা ডিজাইনার ইনসুলিনও বলা হয়। ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় এই আধুনিক ইনসুলিন বিশেষ পরিবর্তন এনেছে। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণকে করেছে অনেক সহজ ও কার্যকর। তাই বিশ্বে আধুনিক ইনসুলিনের ব্যবহার বাড়ছে। বর্তমানে বিশ্বে ব্যবহূত ইনসুলিনের ৫০ শতাংশই আধুনিক ইনসুলিন। আধুনিক ইনসুলিনের প্রয়োজনীয়তা যাঁরা ডায়াবেটিসের সাধারণ হিউম্যান ইনসুলিন ব্যবহার করেন, তাঁদের অনেকেরই খাওয়ার পর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেশি পাওয়া যায়। এর কারণ হলো হিউম্যান ইনসুলিন ত্বকের নিচে নেওয়ার পর আস্তে আস্তে রক্তের মধ্যে মিশে। যে কারণে সাধারণ হিউম্যান ইনসুলিনের ক্ষেত্রে খাবার গ্রহণের অন্তত ৩০ মিনিট আগে তা নিতে হয়। দেখা যায়, অনেক ডায়াবেটিসের রোগী এ নিয়মে ইনসুলিন নেন না। ফলে রক্তের গ্লুকোজ সঠিক ও কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ হয় না। এতে ডায়াবেটিসের রোগীরা হাইপোগ্লাইসেমিয়াসহ ডায়াবেটিসের দীর্ঘস্থায়ী অন্যান্য জটিলতায় আক্রান্ত হন। অন্যদিকে মডার্ন ইনসুলিন ত্বকের নিচে নেওয়ার পর অল্প সময়ের মধ্যেই রক্তে মিশে কাজ শুরু করে। তাই এটি নেওয়ার পর ডায়াবেটিসের রোগীদের খাবার গ্রহণ করার জন্য ৩০ মিনিট অপেক্ষা করার প্রয়োজন হয় না। ফলে ডায়াবেটিস রোগীরা আধুনিক ইনসুলিন গ্রহণের মাধ্যমে সঠিক ও কার্যকরভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন করতে পারবেন।
লেখকঃ অধ্যাপক ডা· জাফর এ লতিফ
উৎসঃ দৈনিক প্রথম আলো, ১৪ নভেম্বর ২০০৭
Leave a Reply