শরীর ঠিক রাখার সবচেয়ে মোক্ষম ব্যায়াম দৌড়ানো। যাঁরা জিম করেন, তাঁরা তো অবশ্যই দৌড়ান। অনেকে বাসাতেই ট্রেডমিল কিনে দৌড়টা সেরে নেন। আবার অনেকে সকালে বা অন্য কোনো সময়ে বাইরে দৌড়ে নেন। এতে প্রকৃতির সান্নিধ্যেও খানিকটা সময় কাটানো হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, নিয়মিত দৌড়ানো শরীর ঠিক রাখতে খুবই কার্যকর। কিন্তু প্রশ্নটা অন্যখানে। শরীরের জন্য কোনটা আদর্শ দৌড়—দ্রুতগতিতে, না ধীরে-সুস্থে অনেকক্ষণ ধরে? সংক্ষেপে বললে, স্প্রিন্ট না ম্যারাথন?
ক্লান্ত হওয়াই যদি আপনার লক্ষ্য হয়, তাহলে দ্রুতগতিতে দৌড়ান। অল্প সময়ের মধ্যেই শরীরের শক্তি ফুরিয়ে যাবে। আর দৌড়ানোর দম পাবেন না। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে, এতে খুব একটা লাভ হবে না। গতি যেমন রোমাঞ্চকর, তেমনি ভয়ংকরও বটে। জোরে দৌড়ালে এক ধরনের চাঞ্চল্য পাবেন। কারণ, আপনার অ্যাড্রেনালিন বাড়বে। তবে সেটা সাময়িক। দীর্ঘ মেয়াদে তার কোনো সুফল নেই। উল্টো যাঁদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে তৈরি হতে পারে জটিলতা।
বরং করা উচিত ঠিক বিপরীত কাজ। দৌড়ানো উচিত ধীর বা মাঝারি গতিতে। তাহলেই সর্বোচ্চ সুফল পাওয়া সম্ভব। গতি নিয়ন্ত্রণে রাখলে সেটা আপনার হৃৎপিণ্ডের গতি যেমন স্বাভাবিক রাখে, তেমনি শরীরের প্রতিরোধক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়। আর লক্ষ্য যদি হয় ওজন কমানো, তাহলে দ্রুত দৌড়ের কোনো প্রয়োজনই নেই। এমনকি নিয়মিত ঘণ্টাখানেক হেঁটেই তা কমানো সম্ভব। দৌড়ালে সেটা হবে আরও কার্যকর। গতি নিয়ে তাই চিন্তা করারই প্রয়োজন নেই।
তবে ভালো হয় এ নিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নিলে। কেবল দৌড়ানোর জন্যই নয়, যেকোনো ব্যায়ামের জন্যই। কারণ কোন ধরনের ব্যায়াম আপনার জন্য যথার্থ কিংবা আপনি কতটুকু ব্যায়াম করতে পারবেন, এসবই নির্ভর করে আপনার শরীরের গঠন ও সক্ষমতার ওপর। যদি আপনার রক্তচাপ ওঠানামা করে, তাহলে ভারী ব্যায়াম করাটা আপনার একদমই উচিত হবে না। দৌড়ানোও যাবে না দ্রুতগতিতে।
আবার যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত দৌড়াচ্ছেন, তাঁরা চাইলে গতি বাড়াতেই পারেন। কারণ, এত দিনে তাঁদের শরীর দৌড়ের জন্য অনেকটাই প্রশিক্ষিত হয়ে গেছে। দ্রুতগতির সঙ্গে তা সহজেই মানিয়ে নিতে পারার কথা। কিন্তু যাঁরা নতুন শুরু করেছেন বা করবেন, তাঁদের গতি রাখতে হবে নিয়ন্ত্রণে। শুরুতেই জোরে দৌড়ানোর চেষ্টা করলে প্রভাব পড়তে পারে আপনার হৃৎপিণ্ডের গতিতেও। তখন শেষে দৌড়াতে হবে চিকিৎসকের কাছে।
সাধারণত চিকিৎসকেরা মাঝারি গতি বলতে বোঝান প্রতি কিলোমিটারে ৭-৮ মিনিট। কোনো জটিলতা না থাকলে আপনার জন্য এ গতিতে দৌড়ানোটাই আদর্শ। তবু একবার চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নিতে পারেন। তাহলে আপনার জন্য কোন গতিতে দৌড়ানো সবচেয়ে উপকারী হবে, সরাসরি সেটাই জেনে নিতে পারবেন।
নাবীল আল জাহান
সোর্স : প্রথম আলো
Leave a Reply