গর্ভাবস্থায় কী কী ওষুধ খেতে পারব আর কী কী খেতে পারব না
গর্ভাবস্থায় একটুখানি অসতর্কতায়ও ঘটে যেতে পারে বড় বিপদ। এ সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা নিতে হবে, যেন অসুস্থ হয়ে পড়ে ওষুধ খেতে না হয়। কারণ, যেকোনো ওষুধেরই রয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
গর্ভাবস্থা নিশ্চিত হওয়ার পর নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এই সময় যত দূর সম্ভব, কম ওষুধ সেবন করতে হবে। সাধারণ সমস্যায় ওষুধ বদলে প্রাকৃতিক পদ্ধতি ও প্রতিরোধব্যবস্থার দিকে জোর দিতে হবে। আগে থেকে যাঁরা দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন, গর্ভাবস্থা নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা এসব ওষুধ সেবন করা যাবে কি না বা নিরাপদ কি না, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে জেনে নেবেন।
গর্ভাবস্থায় শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে এবং হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণে সাধারণ মানুষের চেয়ে সর্দি-কাশি, জ্বর, মাথাব্যথা বা সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা অনেক গুণ বেড়ে যায়। সাধারণ অবস্থায় এসব সমস্যার জন্য আমরা হরহামেশা যে ওষুধগুলো খেয়ে থাকি, এ অবস্থায় সেসব ওষুধ সেবনও ঝুঁকির কারণ হতে পারে। সুতরাং এ সময় সাধারণ সমস্যায় কী কী ওষুধ খেতে পারব আর কী কী খেতে পারব না, জানাটা অতি জরুরি।
সর্দি
গর্ভাবস্থায় যেকোনো ধরনের অ্যান্টিহিস্টামিন-জাতীয় ওষুধ, নাকের ড্রপ ব্যবহার করা যায়। সঙ্গে লবঙ্গ দিয়ে গরম পানি কুলকুচি উপকারী। এ ছাড়া শুধু গরম পানির অথবা মেন্থল দিয়ে গরম পানির ভাপও নেওয়া যেতে পারে।
কাশি
বাজারে যেসব কাশির সিরাপ পাওয়া যায় তা খাওয়া যাবে, কিন্তু গর্ভাবস্থার প্রথম ১২ সপ্তাহের মধ্যে কোনো কাশির সিরাপ খাওয়া উচিত নয়।
মাথাব্যথা
এ সময় কোনো ব্যথার ওষুধ খাওয়া ঝুঁকির কারণ হতে পারে, তবে তীব্র ব্যথা হলে প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে।
বুক জ্বালাপোড়া
মাতৃত্বকালীন অবস্থায় সবচেয়ে সাধারণ যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা হলো, বুক জ্বালাপোড়া ও অ্যাসিডিটি। এ সমস্যার সমাধান হিসেবে ওষুধের চেয়ে যে জিনিসটি কাজে লাগে তা হলো, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন। যেমন অতিরিক্ত ভাজাপোড়া, ঝাল, মসলা-জাতীয় খাবার ও বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ওষুধ হিসেবে তরল অথবা ট্যাবলেট আকারে বাজারে যে অ্যান্টাসিড পাওয়া যায়, তা খাওয়া যাবে। গ্যাসের অন্যান্য ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে খেতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য
খুব সাধারণ একটি সমস্যা। কোষ্ঠকাঠিন্যর সমাধান হিসেবে বেশি বেশি শাকসবজি-জাতীয় খাবার খেতে হবে। প্রয়োজন হলে ইসবগুল এবং বাজারে যে সিরাপ পাওয়া যায়, তা খাওয়া যাবে। গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাস অথবা ১২ সপ্তাহ কোষ্ঠকাঠিন্যের ব্যাপারে সচেতন থাকা লাগবে। কারণ, কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য এ সময় গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
বমি বা বমি বমি ভাব
বমির ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে। তবে যদি কিছু নিয়ম মানা যায়, তাহলে উপকার পাওয়া যেতে পারে। যেমন অল্প অল্প করে বারবার খেতে হবে এবং শুকনা খাবার খেতে হবে।
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার
যেহেতু গর্ভাবস্থায় রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, তাই সংক্রমণের প্রবণতাও বেড়ে যায়। এ জন্য অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে। কারণ, কিছু অ্যান্টিবায়োটিক আছে, যা গর্ভপাতের কারণ, আবার কিছু অ্যান্টিবায়োটিক নবজাতক শিশুর জন্মত্রুটির কারণ হতে পারে। আর কিছু অ্যান্টিবায়োটিক গর্ভাবস্থার একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খাওয়া যায় না, কিন্তু নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর খাওয়া যায়। সুতরাং অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে সচেতন হতে হবে।
ঘুমের সমস্যা
গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে বেশির ভাগ মাকেই ঘুমের সমস্যায় পড়তে হয়। এ জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট ওষুধ সেবন করতে হবে। নিজে নিজে কোনো ঘুমের ওষুধ খাওয়া যাবে না।
ডা. শিমু আক্তার
সোর্স : প্রথম আলো
Leave a Reply