শরীরে সামান্য মেদ জমলেই ওজন কমানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন অনেকে। ওজন কমানোর জন্য পরিশ্রমের শেষ থাকে না। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, নিয়মিত শরীরচর্চা, নিয়ম মেনে চলা থেকে শুরু করে এমন কোনো চেষ্টা নেই, যার ভেতর দিয়ে যেতে হয় না একজনকে। এত কিছু মেনে চলার পরও দেখা যায়, শরীরের মেদ কমার নামগন্ধ নেই, বরং বেড়েই চলেছে। মেদ কমানোর জন্য নিয়মিত পরিশ্রম, শরীরচর্চা সবকিছুই বৃথা হতে পারে কিছু বাজে অভ্যাসের কারণে। প্রতিদিনের অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো অজান্তেই প্রভাব ফেলে শরীরের ওপর। এসব বদভ্যাস কীভাবে শরীরের ওপর প্রভাব ফেলে, কীভাবে একটু সাবধান হলেই শরীরের ওজন রাতারাতি কমিয়ে ফেলা সম্ভব, তা নিয়েই আজকের আলোচনা…
ভালো ঘুমের অভাব
আমাদের ‘ডু মোর’ সমাজে বেশি কাজ করতে পারার পুরস্কার সব সময়ই বেশি। রাতের ঘুম হারাম করে হলেও ডেডলাইন শেষ করার উদাহরণ ভূরি ভূরি। অনেকেই রাতের ঘুম দিনে ঘুমিয়ে পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু রাতের ঘুমের বিকল্প নেই। সুস্থ শরীরের জন্য ভালো ঘুমের প্রয়োজনীতা অপরিসীম। বয়সভেদে প্রত্যেকেরই রাতে ৭-৯ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কাজের চাপে সময়টা নেমে আসে ৫-৬ ঘণ্টায়। কম ঘুম যেমন প্রতিদিনের কাজের ওপর প্রভাব ফেলে, তেমনই শরীরের ক্ষুধানিয়ন্ত্রক হরমোনগুলোকে করে প্রভাবিত। যে কারণে শরীরের কাজ করার শক্তি কমতে থাকে, শরীরের ওপর চাপও বেড়ে যায়। তখন এটা-সেটা খেলে শরীরের মেদ বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে। নিয়মিত ৭-৯ ঘণ্টা টানা ঘুম সবারই দরকার। ঘুমানোর অন্তত দুই ঘণ্টা আগে খাবার খেয়ে ফেলতে হবে। এবং ঘুমাতে যাওয়ার এক ঘণ্টা আগে গ্যাজেটকে বলতে হবে বিদায়।
খাবারের মাঝখানে অতিরিক্ত পানি খাওয়া
বেঁচে থাকতে পানির বিকল্প নেই। উজ্জ্বল ত্বক, রোগবালাইয়ের বিরুদ্ধে লড়াই, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, ক্লান্তি দূর করা থেকে শুরু করে ক্ষুধা নিবারণ, সবকিছুতেই পানির বিকল্প নেই। তবে সবকিছুরই একটা মাত্রা আছে। মাত্রা অতিক্রম করলে কোনো কিছুই ভালো নয়। তিন বেলা ভারী খাবার খাওয়ার সময় অনেকেই নিয়মিত বিরতিতে পানি খান। খাওয়ার সময় অতিরিক্ত পানি খেলে মেদ কমে না। বরং পাকস্থলীর পরিপাককারী অ্যাসিডকে পাতলা করে দেয়। ফলে বাধাপ্রাপ্ত হয় খাবারের হজমপ্রক্রিয়া। ভালো হজমের জন্য খাবার খাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট আগে ও খাবার শেষে কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে পানি পান করা উত্তম।
সকালের নাশতা এড়িয়ে যাওয়া
সকালের নাশতা শরীরের বিপাকীয় ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। সারা দিনে কাজের জন্য যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন, তা মূলত সকালের নাশতার মাধ্যমে আসে। কিন্তু কেউ যখন এটি বাদ দিয়ে যান, তখন শরীর নতুনভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে শরীরের কর্মক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। যাঁরা ওজন কমানোর জন্য ডায়েট করছেন, তাঁরা যদি সকালের নাশতা না খান, তাহলে তাঁদের রক্তে চর্বির পরিমাণ বেড়ে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়। সকালের ভরপেট নাশতার পর দুপুরে আরেকটু কম খেতে হয়। রাতের খাবার হতে হয় একেবারে হালকা। অর্থাৎ অতিরিক্ত খেয়ে ফেলার যে প্রবণতা, সেটা শুধু সকালে সঠিক পরিমাণে নাশতা খেয়ে কমানো সম্ভব।
দিনভর খাওয়াদাওয়া
অনেকেই আছেন একবারে ভারী খাবার না খেয়ে কম কম করে সারা দিন খান। কিন্তু সারা দিন এভাবে খাবার খেলে উল্টা শরীরের মেদ বেড়ে যায়। প্রতিবার খাবার খাওয়ার পর শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়। আর সেটাই শরীরকে সংকেত দেয় চর্বি জমা করার। ফলে শরীর কিছুক্ষণ পরপর চর্বি সঞ্চয় করতে শুরু করে। বেশির ভাগ খাবারই শরীরে সঞ্চয় করার মতো পর্যাপ্ত চর্বি উৎপাদন করে না। ফলে শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমে যায়।
মৃণাল সাহা
সূত্র : প্রথম আলো
Leave a Reply