সুস্বাস্থ্যবিষয়ক কত কথাই না শুনি আমরা। রোজ আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে, দিনে দুই লিটার পানি খেতে হবে, রেড মিট শরীরের জন্য খারাপ, ইত্যাদি। কিন্তু এসবের কতটুকু সত্যি আর কতটুকু ‘মিথ’? ক্রমাগত পরিবর্তনশীল দুনিয়ায় এখনো ধোপে টিকে আছে কোন মিথগুলো?
প্রতিদিন অন্তত আট ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন
পূর্ণবয়সী মানুষের জন্য দিনে ঠিক কতক্ষণ ঘুমের প্রয়োজন? এ নিয়ে বিজ্ঞানী, ইনফ্লুয়েন্সার থেকে শুরু সাধারণ মানুষ, সবারই ঘুম হারাম হওয়ার দশা। কিন্তু এরপরও ঠিক কতক্ষণ ঘুমালে তা শরীরের জন্য ভালো, তা নিয়ে কথা হয় নিয়মিত। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ৪ ঘণ্টা ঘুমাতেন। ইলন মাস্ক একসময় ঘুমাতেন তিন ঘণ্টা। সাদা চোখে মনে হতে পারে, মানুষ যত বেশি সফল, ঘুম তত কম। ব্যাপারটা ঠিক তেমন নয়। বরং একজন মানুষের সুস্থতার জন্য ঘুমের প্রয়োজন অপরিসীম। ২০১৭ সালে পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা যায়, যারা প্রতিদিন ঠিক সাত-আট ঘণ্টা ঘুমায়, তাদের কর্মক্ষমতা বাকিদের তুলনায় অনেক বেশি। দেখা গেছে, টানা সাত-আট ঘণ্টা ঘুমানো মানুষদের কর্মক্ষমতা বাকিদের চেয়ে বেশি। অন্যদিকে মাত্র তিন-চার ঘণ্টা ঘুমানো মানুষদের কর্মক্ষমতা ছিল অপ্রত্যাশিত পরিমাণে কম।
কম ঘুম শুধু কর্মক্ষমতাই কমায় না, প্রাণঘাতীও হতে পারে। তবে ঘুমের পরিমাণ যেমনই হোক, রাতে নিদির্ষ্ট রুটিন ধরে ঘুমানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যত দ্রুত ঘুমিয়ে যত দ্রুত সূর্যালোক গায়ে মাখা যায়, ততই ভালো।
দিনে দুই লিটার পানি খাওয়া উচিত
কথায় আছে, খাবার ছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব, কিন্তু পানি ছাড়া নয়। কথাটা ভুল নয়, শারীরবৃত্তীয় প্রতিটি কাজের জন্য পানির কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু দুই লিটার পানি পান? এটা নিয়ে প্রশ্ন আছে। ১৯৪৫ সালে প্রথম ইউএস ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল লিখেছিল, ‘প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক আড়াই লিটার পানি খাওয়া প্রয়োজন। তার বেশির ভাগ পানিই পাওয়া বিভিন্ন খাবারের মধ্যে।’ এ ছাড়া ১৯৭৪ সালে মার্কিন পুষ্টিবিদ ফ্রেডরিক জন স্টেয়ার তাঁর বইয়ে লিখেছিলেন, ‘প্রাপ্তবয়স্কদের রোজ ছয় থেকে আট গ্লাস পানি খাওয়া উচিত।’ বিজ্ঞানও ঠিক এটাই বলে, সুস্থ থাকতে হলে একজনকে রোজ ছয় থেকে আট গ্লাস কিংবা দুই লিটার পানি খাওয়া উচিত। তবে এত হিসাব করতে না চাইলে যখনই তেষ্টা পায়, তখনই পানি খেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কথা আছে, অনেকেই নিজের তেষ্টা টের পান না। টের পেলেও পানি খাওয়ার ফুরসত পান না। তাই ভুলোমন কিংবা ব্যস্ততা থাকলে গ্লাস মেপে পানি খাওয়াই ভালো।
রেড মিট শরীরের জন্য খারাপ
রেড মিট হিসেবে সাধারণত ধরা হয় গরু ও খাসির মাংসকে। এসবে প্রচুর স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সম্পৃক্ত চর্বি থাকে। আর এটা শরীরে ‘বার্ন’ হয় না, বরং জমা হয়ে থাকে। এমনকি বলা হয়ে থাকে, রেড মিটের সঙ্গে প্রোস্টেট ক্যানসার এবং হৃদ্রোগের সরাসরি সম্পর্ক আছে। কিন্তু কোনো গবেষণাতেই এ রকম ঝুঁকির কথা শোনা যায়নি। প্রোস্টেট ক্যানসার এবং হৃদ্রোগের সরাসরি সম্পর্ক দূরে থাক, বরং যে কেউ রেড মিট নিশ্চিন্তে খেতে পারেন। তবে স্যাচুরেটেড ফ্যাট শরীরের জন্য সমস্যা তৈরি করে, এটা সত্য।
মৃণাল সাহা
সূত্র : প্রথম আলো
সূত্র: গার্ডিয়ান
Leave a Reply