পাইলস রোগটি আমাদের দেশের সাধারণ রোগীদের কাছে পরিচিত একটি রোগ। সর্বসাধারণের ধারণা পায়ুপথের বিভিন্ন সমস্যা যেমন রক্ত যাওয়া, ব্যথা হওয়া, ফুলে যাওয়া- এসবই হয় পাইলস রোগের কারণে। কিন্তু আসলে এ ধারণা সঠিক নয়। উপরোক্ত প্রতিটি উপসর্গই পায়ুপথে ক্যান্সার হলে হতে পারে। আবার ফিষ্টুলা বা ভগন্দর রোগেও উপরোক্ত উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে। আবার এমন হতে পারে যে, প্রথমত: পায়ুপথে ক্যান্সার হয়েছে সেটিও ফিষ্টুলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে, যেমন ইতোমধ্যেই লেখক একজন রোগীর (৬৫) অপারেশন করেছে ফিস্টুলা হিসেবে কিন্তু মাংস পরীক্ষা (বায়োপসি) রিপোর্টে দেখা গেল ক্যান্সার। এই ফিস্টুলা রোগীটির যে ক্যান্সারের কারণেই ফিস্টুলা হয়েছে তা অপারেশনের পূর্বে কোনো পরীক্ষায় ধরা পড়েনি। ধরা পড়েছে শুধুমাত্র অপারেশনের পর নিয়মিত মাংস পরীক্ষার রিপোর্টে। যদি ভুলক্রমে বা কোনভাবে এ রোগীর বায়োপসি না করা হত তাহলে তার ক্যান্সার ধরা পড়ত অনেক দেরীতে যখন চিকিৎসার অযোগ্য হত। আশার কথা এই যে, লেখক মোটামুটি সব ফিস্টুলা রোগীর নিয়মিত মাংস পরীক্ষা করে থাকেন। এ রোগীর ইতিহাস নিয়ে দেখা যায় তিনি নিজে একজন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। ৪ বছর ধরে তার এই সমস্যা চলছে এবং তিনি নিজে চিকিৎসক বলে হোমিও ওষুধ খেয়ে যাচ্ছেন। তার মলদ্বার থেকে দূরে একটি মুখ থেকে পুঁজ ও রক্ত পড়ত। এটিকে সাধারণ ফিস্টুলা মনে করে তিনি নিজে দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ খাচ্ছিলেন। বেশির ভাগ ফিস্টুলা রোগীর ক্যান্সার থাকে না। পায়ুপথের ক্যান্সার যখন দীর্ঘদিন চিকিৎসাবিহীন থাতে তখন এটি মলদ্বারের পাশে ছিদ্র হয়ে বের হয়ে আসে এবং সেখান থেকে পুঁজ যায় আবার কখনো কখনো রক্ত যায়।
লেখকের দেখা অন্য একজন মহিলা রোগী (৫৫) যিনি রাজধানীর একটি কলেজের অধ্যাপক গত দেড় বছর যাবত মলদ্বারে রক্ত যাচ্ছে। পায়খানা ক্লিয়ার হয় না। নিজে নিজে লাক্সেনা ট্যাবলেট খাচ্ছেন পেট পরিষ্কার করার জন্য। পায়খানার বেগ আসলে কিছু তরল জিনিস বের হয়ে আসে কিন্তু পায়খানা অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে এরূপ ভাব। মাঝে মাঝে টয়লেট রক্ত যায়। ইদানিং মলদ্বারে ও কোমরের নিচের দিকে ব্যথা মলদ্বার থেকে পিছন দিকে ছড়িয়ে পড়া ব্যথা। এখানে উল্লেখ্য যে, ভেতরের ব্যথা কোমরের অনুভূত হতে পারে আবার উরুর দিকেও সম্প্রসারিত হতে পারে।
এই রোগীনির প্রাথমিক ইতিহাস শোনার পর লেখকের স্বাভাবিকভাবেই একটু সন্দেহ হয়েছে। অতঃপর তার সিগময়ডস্কপি ও প্রকটস্কপি পরীক্ষায় ধরা পড়ে যে তার রেকটামের ভেতর ক্যান্সার আছে। কিন্তু রোগীর বিশ্বাস তিনি পাইলসে ভুগছেন। বিস্তারিত ইতিহাস না নিলে ভুল হত। কারণ রোগীর সাদামাটা বক্তব্য হচ্ছে যে তার রক্ত যায় এবং পায়খানা ক্লিয়ার হয় না। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে রোগীরা মলদ্বারের ভেতর যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করাতে চান না। ব্যথা হতে পারে এই ভেবে খুব ভয় পেয়ে যান। বিশ্বাস করেন যে, এই পরীক্ষা করলে আমি আগামীকাল অফিসে যেতে পারব কিনা? এটি নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, এ পরীক্ষায় সামান্য অস্বস্তি ছাড়া কোনরূপ ব্যথা হয় না। বেশির ভাগ রোগীই এ পরীক্ষায় কোনরূপ ব্যথা পান না। এ পরীক্ষার জন্য খুবই সামান্য সময়ের প্রয়োজন। সারাদিন না খেয়ে থাকার প্রয়োজন হয় না। মলদ্বারে তীব্র ব্যথা আছে এমন রোগীদেরও এ পরীক্ষা করা যায়।
সম্মানিত রোগীদের ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই যে, উপরোক্ত সমস্যা দেখা দিলে সবারই ক্যান্সার হয়েছে। তবে একথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যেসব রোগে পায়খানার সাথে রক্ত যায় তার মধ্যে ক্যান্সার অন্যতম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রক্ত যায় যেসব রোগে সেগুলো হচ্ছে- ১. এনাল ফিসার ২. পাইলস ৩. রেকটাল পরিশ (শিশুদের বেশি হয়) ৪. ক্যান্সার ৫. আলসারেটিভ কেলোইটিস ৬. ফিস্টুলা ও অন্যান্য। আমারা মফস্বল থেকে আসা অনেক রোগী দেখি যাদের ক্যান্সার আছে অথচ হাতুড়ে চিকিৎসকরা তাদেরকে ইনকেশন দিচ্ছেন। কোন কোন হাতুড়ে চিকিৎসক আবার একধাপ এগিয়ে যেখানের অপারেশনেরও মহড়া দিচ্ছেন। আবার কখনো কখনো একই রোগীর পাইলস ও ক্যান্সার থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা যদি পাইলসের চিকিৎসা করি তাহলেও দেখা যায় যে রোগীর সমস্যা যাচ্ছে না, তখন মলদ্বারের ভেতর লম্বা যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা (সিগময়ডস্কপি বা লোকলস্কপি) করলে ক্যান্সার ধরা পড়ে। এ জাতীয় সমস্যাও মাঝে মধ্যে দেখা যায়।
মোট কথা, মলদ্বারের মুখ থেকেও রক্ত যেতে পারে আবার অনেক ভেতর অর্থাৎ রেকটাম বা বৃহদান্ত্রের ভেতর থেকেও রক্ত যেতে পারে। কি কারণে যাচ্ছে তা বিশেষ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে একজন উপযুক্ত চিকিৎসক বলে দিতে পারেন। কিছু কিছু রোগী বলেন যে, আমার পাইলস হয়েছে আমার কিছু ওষুধ দেন খেয়ে দেখি পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার নেই। কিন্তু লেখক বিশেষ ধরনের পরীক্ষা না করে অনুমান নির্ভর পাইলস চিকিৎসার বিপক্ষে। কারণ এতে যে রোগীদের ক্যান্সার আছে তা সনাক্তকরণে বিলম্ব হবে। বিলম্বিত চিকিৎসায় ক্যান্সারে ভাল ফলাফল আশা করা যায় না।
অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুল হক
বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান
কলোরেকটাল সার্জারি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
চেম্বার : জাপান বালাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল (প্রাঃ) লিঃ
৫৫, সাত মসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা
ফোন : ০১৭২৬৭০৩১১৬, ০১৭১৫০৮৭৬৬১।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, জুন ২০, ২০০৯
স্বদেশ পাল
আমি একজন অর্শের রুগী ।আপনার লেখা পড়ে অপারেশন করানর কথা ভাবছি। কলকাতায় কোথায় ভাল আধুনিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা হয় দয়া করে যদি জানান উপকৃত হব ।