মাথাব্যথায় কখনোই ভোগেন না, এমন মানুষ বিরল। হালকা থেকে চরম, নানা ধরনের মাথাব্যথা নিয়ে হামেশাই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন রোগীরা। বর্তমানে জীবনযাত্রার নানামুখী চাপে মাথাব্যথা অনেক মানুষের নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। খুব সামান্য কারণে যেমন মাথাব্যথা হতে পারে, তেমনি এর পেছনে থাকতে পারে প্রাণসংহারী কারণও।
অধিকাংশ মানুষ বেশির ভাগ সময়ই যে মাথাব্যথায় ভোগেন, তা হচ্ছে চিন্তাজনিত মাথাব্যথা। মাথার চারপাশে ব্যান্ডের মতো চেপে থাকা একটা ব্যথা বা চাপ অনুভূত হতে পারে, মাথার তালুতে ব্যথা হতে পারে, সঙ্গে সাধারণত বমি বা অন্য কোনো সমস্যা থাকে না, এই ব্যথা প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধ খেলে আরাম হয়।
মাইগ্রেনের ব্যথা আবার একেবারে অন্য রকম। সাধারণত আধকপালি মারাত্মক ব্যথা থাকে মাইগ্রেনে, যা অনুভূত হতে পারে কয়েক ঘণ্টা থেকে দু-তিন দিন পর্যন্ত। এই ব্যথার সঙ্গে থাকে বমি বা বমিভাব। আলো বা শব্দের প্রতি অতিসংবেদনশীলতা দেখা যায়। চোখের সামনে আলোর ঝলকানি থাকতে পারে, সাময়িক দৃষ্টিশক্তির সমস্যা হতে পারে, অনেকে আবার স্ট্রোকের মতো জটিলতা নিয়েও উপস্থিত হতে পারেন। মাইগ্রেনের ব্যথা হলে ব্যথানাশক সেবনের পাশাপাশি বমি কমানোর ওষুধও প্রয়োজন হয়। মাইগ্রেনের ব্যথা কমানোর জন্য বাজারে অনেক ধরনের ওষুধ পাওয়া যায়। যদি মাসে দুইবারের বেশি ব্যথা হয়, তাহলে তা কমানোর জন্যও কিছু দীর্ঘমেয়াদি ওষুধের প্রয়োজন হয়। তবে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, যে কারণে মাইগ্রেনের ব্যথা হয়, সেগুলো এড়িয়ে চলা, যেমন চিজ, কফি, চকলেট, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ইত্যাদি। আবার এই দুই প্রকার মাথাব্যথা থেকে পরিত্রাণের জন্য গাদা গাদা ব্যথানাশক খেলে তা থেকেও মাথাব্যথার উদ্ভব হতে পারে। ব্যথানাশকের অতিব্যবহার না কমালে এ ধরনের মাথাব্যথা থেকে মুক্তি নেই।
জ্বরের রোগী, বিশেষ করে ডেঙ্গু জ্বরে তীব্র মাথাব্যথার সমস্যা থাকতে পারে। ঠান্ডা, অ্যালার্জি থেকে সাইনোসাইটিস হয়ে মাথাব্যথা হতে পারে। চোখের সমস্যায় মাথাব্যথা হামেশাই দেখা যায়। সাধারণত এসব ক্ষেত্রে মাথাব্যথার অন্তরালের কারণটির চিকিৎসা করলেই রোগী আরামবোধ করেন।
মাথাব্যথার আরও কিছু বেশ জটিল কারণ রয়েছে। যেমন মস্তিষ্কের প্রদাহ, যাকে আমরা মেনিনজাইটিস বা এনসেফালাইটিস নামে জানি। এসব ক্ষেত্রে অবশ্য জ্বর, অজ্ঞান বা অজ্ঞানের মতো অবস্থা থাকতে পারে। মস্তিষ্কের টিউমারেও তীব্র মাথাব্যথা, প্রচুর বমি সঙ্গে অন্যান্য অসুবিধা নিয়ে রোগী চিকিৎসকের কাছে আসেন। মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণেও রোগী মাথার পেছনে হঠাৎ তীব্র মাথাব্যথার অভিযোগ করেন। এসব ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা জরুরি।
তবে মাথাব্যথা যে কারণেই হোক, কিছু ব্যাপার মাথায় রাখা উচিত। যেমন কথায় কথায় ব্যথানাশক খাওয়া কমানো দরকার। কিছু কিছু জিনিস পরিহার করেও কিছু মাথাব্যথা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। আর মাথাব্যথা যদি খুব অল্প সময়ে তীব্র আকার ধারণ করে, মাথাব্যথার সঙ্গে শরীরের কোনো দিক অবশ হয়, চোখে দেখতে বা কথা বলতে অসুবিধা হয়, মাথাব্যথার সঙ্গে জ্বর, ওজন কমে যাওয়ার সমস্যা থাকে, চামড়ায় দাগ বা ঘাড় শক্ত হয়ে যায়, মাথাব্যথার সঙ্গে মারাত্মক বমি হয়, সামনে উপুড় হলে বা চিত হয়ে শুয়ে পড়লে যদি মাথাব্যথা বেড়ে যায় কিংবা একটা বয়সের পর যদি নতুন করে মাথাব্যথা শুরু হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা প্রয়োজন। মাথাব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই, কিন্তু সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে।
*শাহনূর শারমিন: সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ
সূত্র : প্রথম আলো
Leave a Reply