দিন দিন শক্তিশালী হয়ে উঠছে জীবাণু। অনেক প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকই আর জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকর থাকছে না। সামনের দিনগুলোতে এসব শক্তিশালী জীবাণুর সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করাটাই হয়ে উঠবে কঠিন। এই দুর্দশার জন্য দায়ী অপ্রয়োজনে এবং ভুল নিয়মে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন। ১৮-২৪ নভেম্বর বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক সচেতনতা সপ্তাহ। অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের সময় সাতটি সতর্কতা মেনে চললে আমরা ঠেকাতে পারব এই বিপদ।
১. ডায়রিয়া বা পেট খারাপ হলেই অনেকে মেট্রোনিডাজল কিংবা অ্যাজিথ্রোমাইসিনজাতীয় ওষুধ (অ্যান্টিবায়োটিক) সেবন করে ফেলেন। অথচ বেশির ভাগ ডায়রিয়া এমনিতেই সেরে যায়। বরং ডায়রিয়া রোগীর পানি ও লবণের ঘাটতি পূরণে বারবার ওরস্যালাইন দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক নয়, বরং ওরস্যালাইনই জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসাব্যবস্থা।
২. সর্দি-কাশি, জ্বর কিংবা গলাব্যথার মতো সাধারণ মৌসুমি রোগবালাইয়ে অ্যান্টিবায়োটিক নয়, গ্রহণ করুন উপসর্গ উপশমকারী ব্যবস্থা। জ্বর হলে প্যারাসিটামল খেতে পারেন। ঘরোয়া উপায়ে পানির সাহায্য নিয়ে জ্বর কমানোর চেষ্টা করতে পারেন। মাথায় ভেজা কাপড়ের সেঁক, শরীর মুছে দেওয়া, মাথায় পানি ঢালা, এমনকি গোসল—কোনোটিতেই বাধা নেই। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা যাবে না। গলাব্যথা বা কাশি হলে উষ্ণ পানীয় গ্রহণ করুন। মধু, কালিজিরা, তুলসী—যেটা খুশি গ্রহণ করুন। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা যাবে না। এসব মৌসুমি জ্বর ভাইরাসজনিত আর অ্যান্টিবায়োটিক ভাইরাসের বিপরীতে কাজ করে না।
৩. চিকিৎসক ছাড়া অন্য কারও পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করবেন না। দোকানদারের পরামর্শে, অন্য কেউ এটা খেয়ে উপকার পেয়েছেন বলে বা আগে চিকিৎসক কখনো এ–জাতীয় উপসর্গে দিয়েছিলেন বলে অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না।
৪. অ্যান্টিবায়োটিক সেবন শুরু করলে পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে হবে। মাঝপথে বন্ধ করা যাবে না। উপসর্গ উপশম হয়ে এলেও যত দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছে, তত দিন পর্যন্ত অ্যান্টিবায়োটিক চালিয়ে যেতে হবে। আবার একটি অ্যান্টিবায়োটিক চলা অবস্থায় উপশম হতে সময় লাগছে বলে চট করে অন্য অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করাও অনুচিত।
৫. একই ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে নানান রোগের কারণেই। কাজেই একজনের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক অন্য কেউ সেবন করাও ঠিক নয়।
৬. প্যাকেট খোলার পর অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে খুব বেশি দিন দেরি করা যাবে না। শিশুদের ক্ষেত্রে একবার অ্যান্টিবায়োটিকের বোতল খোলা হলে পরবর্তী সময়ে অসুস্থ হলে ব্যবহারের জন্য রেখে দেওয়া একদমই অনুচিত।
৭. সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সব সময় সচেতন থাকুন। নিয়মমাফিক হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশির আদবকেতা বজায় রাখা, কফ-থুতু এবং ব্যবহৃত টিস্যু ও রুমাল নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা, খাবার ঢেকে রাখার মতো সুঅভ্যাস বজায় রাখুন সব সময়। অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করার চেয়ে সংক্রমণ যাতে না হয়, সেদিকে নজর দিন বেশি।
সূত্র – প্রথম আলো
Leave a Reply