তীব্র গরমের পর এক বুক প্রশান্তি নিয়ে আসে বর্ষা। কিন্তু এ সময় একটু সচেতন না হলে ঘটতে পারে বিপত্তি। আজকাল অল্প বৃষ্টিতে শহরের রাস্তাগুলো হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায়। কিন্তু তাই বলে তো ঘরে বসে থাকা যায় না, নর্দমার পানি আর ডাস্টবিনের ময়লায় একাকার এই নোংরা পানি মাড়িয়েই কাজে বের হতে হয়।
পানিতে হাঁটার সময় যাতে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা না ঘটে কিংবা পায়ে কিছু না বিঁধে, সেদিকে সাবধান থাকতে হবে। এই নোংরা পানি থেকে বিভিন্ন চর্মরোগ, ফাঙ্গাসজনিত প্রদাহ, একজিমা ইত্যাদি হতে পারে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে বাইরে থেকে ঘরে এসেই গরমপানি আর সাবান দিয়ে শরীর, বিশেষ করে পা ভালোভাবে ধুতে হবে।
বর্ষায় পানিবাহিত রোগ যেমন-ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস (হেপাটাইটিস ‘এ’ ও ‘ই’) ইত্যাদি হতে দেখা যায়। এসব রোগ খাবার থেকেও হয়। তাই এ সময় খাবার যাতে জীবাণুমুক্ত থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রাস্তার ধারের ফলের রস, শরবত, লাচ্ছি ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে। এ ছাড়া রেস্টুরেন্টে খাওয়ার সময় যেসব পাত্রে খাবার পরিবেশন করা হয়, তা যাতে জীবাণুমুক্ত থাকে সেদিকে সচেতন হোন। সব সময়ের মতো বর্ষায়ও বিশুদ্ধ পানি পান করা জরুরি।
বৃষ্টির পানিতে বাড়ির নিচের রিজার্ভ জলাধার ডুবে যেতে পারে কিংবা পানির পাইপলাইন ফেটে তাতে বৃষ্টির পানি, বালি বা অন্যান্য নোংরা পদার্থ মিশ্রিত হতে পারে। তাই বর্ষায় পানি ফুটিয়ে খাওয়াই সবচেয়ে ভালো। সাধারণত পানি যখন ফুটতে শুরু করে, এর পরও আধ ঘণ্টা চুলায় রাখলে তা বিশুদ্ধ হবে। কোনো কারণে ফোটানো সম্ভব না হলে ক্লোরিন ট্যাবলেট দিয়ে ৩০ মিনিট রাখলেও পানি জীবাণুমুক্ত হয়। বর্ষায় বৃষ্টিতে ভিজে ঠান্ডা, কাশি, সর্দি ইত্যাদি শ্বাসতন্ত্রের রোগ হয়। শিশুদের নিউমোনিয়াও হতে পারে। বৃষ্টিতে জামাকাপড় ভিজলে সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে ফেলতে হবে। শরীর, বিশেষ করে চুল ভালোভাবে মুছতে হবে। টানা কয়েক দিন বৃষ্টি হলে শিশুদের মোটা জামাকাপড় পরানো উচিত, যেন ঠান্ডা না লাগে। বর্ষায় গ্রামাঞ্চলে পোকামাকড় বাড়ে। এ সময় পুকুরে ডুবে শিশুদের মৃত্যুর হারও বেশি। তাই ছোট শিশুদের একা ছাড়া যাবে না। প্রয়োজনে পুকুরের চারপাশ এবং ঘরের দরজায় বেষ্টনী দিন।
বর্ষায় ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ শুরু হয়। হেমরেজিক ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। এ রোগ প্রতিরোধে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা যেন বিস্তার লাভ করতে না পারে, এ জন্য ছাদের জলাধারে ঢাকনা দিয়ে রাখতে হবে। সেই সঙ্গে অব্যবহৃত টিনের বা প্লাস্টিকের কৌটা, ডাবের খোসা, টায়ার ইত্যাদি ফেলে দিতে হবে। কারণ, বৃষ্টির পানি এসবে জমে এডিস মশা জন্মানোর পরিবেশ তৈরি করে। তাই এ ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। এভাবেই কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে বর্ষায়ও থাকুন সুস্থ শরীরে।
আবু সাঈদ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ২৪, ২০০৯
Leave a Reply