ডেঙ্গুর জটিলতা ব্যাপক হারে বাড়ছে। মৃত্যুহারও অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। তাই প্রতিরোধের দিকেই বেশি জোর দেওয়া উচিত। সচেতনতা রুখে দিতে পারে এর সংক্রমণ ও অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু।
স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত রোগটি এখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেকেন্ডারি ইনফেকশন করে চলেছে, অর্থাৎ আমাদের দেশে রোগীরা এখন প্রথমবার নয়, দ্বিতীয় থেকে চতুর্থবারের মতো ডেঙ্গুতে সংক্রমিত হচ্ছেন। এতে জটিলতা বাড়ছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। প্রাসঙ্গিকভাবে বলে রাখা ভালো, একজন ব্যক্তি তাঁর জীবদ্দশায় চারবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারেন।
সেকেন্ডারি ইনফেকশনে আগের চেয়ে বেশি জটিলতা হতে পারে। লিভার, হার্ট, অগ্ন্যাশয়, কিডনি বা অনেক সময় মস্তিষ্ক আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির দরকার হতে পারে। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি হলে তা ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে। তাই ডেঙ্গু যেন না হয়, সেদিকেই নজর দিতে হবে বেশি।
এটি এডিস এজিপটি নামক মশাবাহিত একটি রোগ, যা স্ত্রী মশার কামড়ে হয়ে থাকে। সংক্রমণ প্রতিরোধে মশার বিস্তার রোধ করা প্রয়োজন। ব্যবহার করতে হবে প্রতিরোধক ক্রিম, মশা তাড়ানোর জন্য মশার কয়েল, ডিডিটি। পরতে হবে লম্বা হাতাযুক্ত পোশাক ও লম্বা প্যান্ট। দরজা ও জানালায় নেট ব্যবহার করা ভালো। সাধারণ বা ওষুধযুক্ত মশারি ব্যবহার করলে একজন ডেঙ্গু রোগী থেকে একই পরিবারের অন্য সদস্যদের আক্রান্ত হওয়াকে বাধা দেওয়া যায়। আক্রান্ত হওয়ার চতুর্থ দিন থেকে ১২তম দিন পর্যন্ত রোগী আশপাশের মশাকে আক্রান্ত করার মাধ্যমে অন্যদের ছড়াতে পারে। অনেক সময় এটাও বলা হয়ে থাকে, লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার দুই দিন আগে থেকে শুরু করে লক্ষণ শেষ হওয়ার দুই দিন পর পর্যন্ত রোগী থেকে মশায় রোগ ছড়ায়। ঝুঁকি বেশি থাকে, যখন রোগীর রক্তে ভাইরাসের আধিক্য থাকে এবং রোগীর তীব্র জ্বর থাকে। রোগীকে এ সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে।
রোগী মশারি ব্যবহার না করলে যেসব মশা তাঁকে কামড় দেবে, সেগুলো এক সপ্তাহের মধ্যে নিজেরা সংক্রমিত হয়ে অন্য মানুষকে কামড়ানোর মাধ্যমে রোগটি ছড়াতে থাকে। তাই বাড়িতে কারও জ্বর হলে এ সময় অবশ্যই তাকে দিনে রাতে মশারির ভেতর রাখুন বাড়ির অন্যদের সুরক্ষার জন্য। হাসপাতালে ভর্তি হলেও একই ব্যবস্থা। আরেকটি কথা, দিনে ঘুমানোর সময়ও শিশুদের অবশ্যই মশারির ভেতর রাখুন। অনেকের ধারণা, রাতে এডিস কামড়ায় না, তাই মশারি লাগবে না। কিন্তু ভোরবেলা যখন আমরা ঘুমিয়ে থাকি, তখন এডিস মশা কামড়ানোর উপযুক্ত সময়। তাই এডিস থেকে বাঁচতে এখন অল্প খরচের এই মশারির বিকল্প নেই।
*ডা. রোজানা রউফ: সহযোগী কনসালট্যান্ট, মেডিসিন বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা
সূত্র – প্রথম আলো
Leave a Reply