নিজের নামের চেয়ে ‘দঙ্গলকন্যা’ হিসেবে বেশি পরিচিত ফাতিমা সানা শেখ। কেননা, ভারতের সর্বকালের সবচেয়ে বেশি অর্থ উপার্জনকারী এই সিনেমায় অভিনয় করেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান ৩০ বছর বয়সী এই ভারতীয় অভিনেত্রী। এরপর ‘লুডো’ সিনেমা মুক্তির আগপর্যন্ত তিনি আলোচনায় আসেন আমির খানের ‘প্রেমিকা’ হিসেবে। যদিও সানা বা আমির কেউই সে কথা স্বীকার করেননি। মাঝখান থেকে আমির খান ও কিরণ রাওয়ের ১৬ বছরের দাম্পত্য সম্পর্ক শেষ হয়েছে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ফাতিমা শেয়ার করেছেন এপিলেপ্সি বা মৃগীরোগ বিষয়ে সচেতনতামূলক বার্তা। সেখানে তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন ফাতিমা। মৃগীরোগ কী, মৃগীরোগ কেন হয় এবং মৃগীরোগ বিষয়ে এমন পাঁচ তথ্য, যা সবার জানা উচিত। আপনিও জেনে নিন ফাতেমার বার্তা। পোস্টটিতে তিনি আবার ‘সোশ্যাল এপিলেপ্সি’ সম্প্রদায়কে ট্যাগও করেছেন। এই পোস্টে ফাতিমা নিজের একটি ছবি জুড়ে দিয়েছেন। আর লিখেছেন ছবিটি কেবল মনোযোগ আকর্ষণের জন্য। ছবির সঙ্গে পোস্টটির কোনো সম্পর্ক নেই।
মৃগীরোগ কী
মৃগী স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতাজনিত একটি রোগ। ৪০টির বেশি নিউরোলজিক্যাল রোগের সাধারণ একটি লক্ষণ হলো খিঁচুনি। সাধারণত, মস্তিষ্কের কোষগুলো একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সচল রাখে। কোনো কারণে এর ভারসাম্য নষ্ট হলে মৃগীরোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
কেন হয় মৃগীরোগ
মৃগীরোগ হওয়ার সুনির্দিষ্ট কারণ নেই। শতকরা ৭০ ভাগের ক্ষেত্রে কোনো কারণ বের করা সম্ভব হয়নি। সাধারণত জেনেটিক ডিজঅর্ডার বা মস্তিষ্কে আঘাত থেকে হতে পারে। জন্মের আগে বা জন্মের সময় বা পরে মস্তিষ্কে আঘাত, মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাব, মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে প্রতিবন্ধকতা (স্ট্রোক বা অন্যান্য সমস্যা, পুষ্টির অভাব, মস্তিষ্কের টিউমার বা প্রদাহ, অত্যধিক মাত্রায় জ্বর)—এসব কারণে হতে পারে মৃগীরোগ। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মৃগীরোগের কারণ অজানা।
মৃগীরোগের ক্ষেত্রে পাঁচ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
১. ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মৃগীরোগ জেনেটিক কারণে সৃষ্ট। উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত মৃগীরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রথম পর্যায়ের আত্মীয়দের মৃগীরোগের ঝুঁকি দুই থেকে চার গুণ বেড়ে যায়।
২. প্রতি ২৬ জনে একজনের মৃগীরোগের লক্ষণ আছে। মৃগীরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এক–তৃতীয়াংশ কেবল ওষুধ খেয়েই সুস্থ থাকতে পারেন।
৩. বিশ্বে ৫ কোটি মানুষের মৃগীরোগ আছেন, যার ৮০ শতাংশ মানুষই থাকে মধ্যম ও নিম্ন আয়ের দেশে।
৪. ৭০ শতাংশ ঘটনায় ওষুধ দিয়েই উপসর্গগুলো বা খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণ বা নিরাময় করা গেছে। মস্তিষ্ক থেকে নিঃসৃত হওয়া রাসায়নিকগুলোর পরিমাণ পরিবর্তন করে এই ওষুধগুলো খিঁচুনির তীব্রতা ও পুনরাবৃত্তির হার হ্রাস করতে সাহায্য করে।
৫. মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মৃগীরোগ কিছুটা বেশি হয়। তবে মেয়েদের শরীরে এস্ট্রোজেন হরমোন থাকে। এই হরমোনের জন্যই তাঁদের মাসিক হয়, তাঁরা গর্ভবতী হন। এই এস্ট্রোজেন হরমোন খিঁচুনির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এর বিপরীতে মেয়েদের শরীরে প্রোজেস্টেরন নামের আরেকটি হরমোন থাকে, যা খিঁচুনির পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। প্রতি মাসে এ দুই হরমোনের ভারসাম্য পরিবর্তিত হয়। মাসিকের আগে ও পরে শরীরে এস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। এটি বেশি থাকলে খিঁচুনির হার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হবে। যে নারীদের মৃগীরোগ আছে, তাঁদের ৪০ থেকে ৭০ শতাংশের এ জন্য মাসিকের সময় খিঁচুনি হয়ে থাকে।
এই তথ্যগুলো জানানোর পাশাপাশি ফাতিমা সানা শেখ অন্যদেরও নিজের মৃগীরোগের অভিজ্ঞতার কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করেন। এখানে উল্লেখ্য যে বাংলাদেশে প্রায় ১৩ লাখ মৃগীরোগী আছেন। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগ রোগীর বয়স ১৩ থেকে ৩১ বছর।
সোর্স – প্রথম আলো
Leave a Reply