১০ দিন, নয় দিন, আট দিন। দিন গোনা শুরু হয়ে গেছে রিদানের। সামনেই যে আম-কাঁঠালের ছুটি। পঞ্চম শ্রেণী পড়ুয়ার আর তর সইছে না। কিন্তু একটাই সমস্যা। বাবা-মা তো সকালে দুগালে চুমু দিয়ে সারা দিন লক্ষ্মীটি হয়ে থেকো বলেই অফিসে দৌড়। তারপর বিকেল শেষ করে সন্ধ্যায় ফেরা। বাসায় বেশির ভাগ সময় বসে কাটাতে হবে। সারা দিনের সঙ্গী হয় টিভি, নয়তো কম্পিউটার গেমস। এর বাইরে খুব বেশি কিছু করার নেই। কিন্তু তার পরও তো ছুটি বলে কথা! সারাক্ষণ মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে কী করা যায় এবারের ছুটিতে?
এখন অনেক পরিবারে স্বামী-স্ত্রী দুজনই কর্মজীবী। একক পরিবারে সন্তানেরা নিজেদের মতো বেড়ে উঠছে। মনের সাধ মিটিয়ে মা-বাব যে সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটাবেন সে সুযোগ খুবই কম। এ অবস্থায় আম-কাঁঠালের ছুটিটাই মোক্ষম সময়। তবে তার জন্য দরকার আগে থেকে একটু পরিকল্পনার। ছুটির প্রতিটি দিন যাতে কাজে লাগে, আনন্দময় করে তোলা যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। অন্য ভাষায় একে ভ্যাকেশন ম্যানেজমেন্টও বলতে পারেন।
সন্তানের সঙ্গে মা-বাবারও ছুটি
প্রতিষ্ঠান বড় হোক কিংবা ছোট, বছরে একটি নির্দিষ্ট ছুটি বহাল থাকে আপনার জন্য। এ ছুটিগুলো বিভিন্ন সময়ে না নিয়ে বাচ্চার স্কুল বন্ধের সময়টার জন্যই জমিয়ে রাখুন। তাদের ছুটির সময়ে আপনি বা আপনারাও ছুটি নিতে পারেন। লম্বা না হোক, অল্প সময়ের জন্যই নিন। কিছুটা মুহূর্ত তো একসঙ্গে থাকতে পারবেন। কর্মজীবী মা শারমীন হকও এবার সে চিন্তাই করে রেখেছেন। বললেন, ‘সব সময় তো আর ইচ্ছামতো ছুটি পাওয়া যায় না। এবার পেয়ে যাব।’
ছুটিতে বেড়ানোর আনন্দ
গরমের ছুটির এই কয়েকটা দিন আসলে শিশুদেরই। স্কুল খোলা থাকলে তো নিজের মর্জি বাদে বাকি সবারই মর্জি চলে। তাই হেসে-খেলে পুরোপুরি আনন্দ এবং প্রিয় মানুষের সান্নিধ্যেই কাটুক আম-কাঁঠালের ছুটি। জেনে নেওয়া যাক আসন্ন ছুটিতে এবার কী কী করা যেতে পারে।
‘শিশুদের চারটি বিষয় বিকাশ হওয়া খুবই জরুরি—কোনো কিছু চিন্তা করার শক্তি, সামাজিক মেলামেশা, মানসিক ও শারীরিক বিকাশ। শহরের চার দেয়ালের মধ্যে তা যথাযথভাবে অনেক সময় হয়ে ওঠে না। ছুটিতে শিশুকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে কিছুদিন কাটিয়ে আসুন। দেখবেন, এ চারটি বিষয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে।’ বলছিলেন আনন্দ নিকেতন ইউরোপিয়ান স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শামসে এ হাসান। তিনি আরও বললেন, ‘প্রকৃতির মাঝেও তো পড়াশোনা সম্ভব। নতুন গাছপালা চেনা, প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখা। আকাশের রং যে তিন বেলা তিন রকম হয়, তা কি আপনার সন্তান কখনো খেয়াল করেছে, ছুটির ভেতরেও গ্রামে যাওয়ার বিষয়টি প্রথমেই আসা উচিত। না হলে ঢাকার বাইরে কোথাও। সেটা সিলেটেও হতে পারে অথবা ময়মনসিংহের কোনো রিসোর্টেও হতে পারে।’
বাইরে ঘুরতে যাওয়ার বিষয়টি যে ঢাকার বাইরেই হতে হবে তা কিন্তু নয়। আপনার ছেলে বা মেয়ে কি লালবাগের কেল্লা দেখেছে? জাদুঘর দেখেছে? বোটানিক্যাল গার্ডেন? না দেখে থাকলে ঢাকার ঐতিহাসিক বা বিখ্যাত জায়গাগুলো দেখানোর পরামর্শ দিলেন স্কলাসটিকা স্কুলের শিক্ষক মেরিনা কবির। এত দিন তো বইয়ে পড়েছে, এবার চাক্ষুষ করুক।
শিশুরা আত্মীয়ের বাসায়ও বেড়িয়ে আসতে পারেন। সারা বছর তো এ রকম সুযোগ পাওয়া যায় না। মামার বাসায়, চাচার বাসায় থাকতে দিন আপনার সন্তানকে। অন্যদের সঙ্গে মেশাও হবে, তাদের সঙ্গে বন্ধনও দৃঢ় হবে।
ছুটির পড়া
স্কুল থাকলেও পড়া, না থাকলেও পড়া। আসলে ছুটির সময় শিশুরা কিন্তু পড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। স্কুল খুললে দেখা যায়, চর্চার অভাবে অনেক বিষয়ই সে ভুলে গেছে। ছুটিতে তাই একটু অন্য রকম পদ্ধতিতে চাইলে পড়াশোনার সঙ্গে সংযোগ রাখতে পারেন। ‘একদম জোর করা যাবে না। পড়ার বই না পড়তে চাইলে গল্পের বই পড়তে দিন। সারা দিন ধরে পড়ুক। টিভির নেশা থাকলে কার্টুন নেটওয়ার্ক, শিক্ষণীয় অনুষ্ঠানগুলো দেখতে উৎসাহিত করুন।’ বললেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিশুবর্ধন ও পরিচর্যা বিভাগের শিক্ষক মোরশেদা বেগম।
‘সব মা-বাবাই যে ছুটি পাবেন, এমনটা নয়। তখন তাঁদের পরিকল্পনা হওয়া চাই ভিন্ন’—বললেন সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষক জেমস সরকার। তিনি বলেন, ‘স্কুল থেকে যদি কোনো বাড়ির কাজ দেওয়া হয়, তাহলে মা-বাবা সেটা করতে সহায়তা করুন। এতে কিছুক্ষণ একসঙ্গে থাকাও হবে।’
লম্বা ছুটিতে একদম পড়ালেখা না করলে অনেক সময় শিশুদের হাতের লেখা ধীর হয়ে যায়। অনেক কিছু ভুলে যায়। মেরিনা কবির বলেন, শিশুরা তাড়াতাড়ি শুনছে, পড়ছে, আবার ভুলেও যায় ঠিক সেভাবেই। এ জন্য স্কুলের পড়া করতে না চাইলে একটু অন্যভাবে পড়াতে হবে। ছুটির পড়া কীভাবে করাবেন, রইল তারই কিছু টিপস।
সন্ধ্যাবেলা বাইরে থেকে বাসায় এলে শিশুকে জিজ্ঞেস করুন সারা দিন সে কী করল। হাত-মুখ ধুয়ে এটার ওপরই না হয় মজা করে কিছু লিখে ফেলল।
গল্পের বই পড়তে দিন। এবার ঝটপট লিখে ফেলুক, তো কী পড়ল।
ডায়েরি লেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে তাকে সাহায্য করতে পারেন। সারা দিন কী করল, সেটাই না হয় দু-তিন লাইনে লিখল। হাতের লেখা সুন্দর করতে বা অভ্যাস রাখা যাবে এসবের মাধ্যমে।
শিশুর খেলার পুতুলটার মাধ্যমেও শেখানো সম্ভব। পুতুলটা সারা দিন কী করল, তাকে কী বলল—কথাচ্ছলে জানতে চান। শিশু নিজে কিছু শিখতে না চাইলে পুতুলকে শেখাচ্ছেন, এমন ভাব করে কথা বলুন। দেখবেন, সেটা আপনার শিশুও শিখে যাবে ঠিক ঠিক।
টেলিভিশন দেখতে বেশি উৎসাহিত করবেন না।
আপনার শিশু কি ছবি আঁকতে পছন্দ করে? এত দিন বোধহয় স্কুলের সিলেবাস অনুযায়ী আঁকতে হতো। ছুটিতে ওর হাতে রং-পেনসিল দিয়ে বসিয়ে দিন। নিজের ইচ্ছামতো অথবা সারা দিন কী দেখল, কী শিখল তা আঁকতে বলুন।
তবে সবকিছুর আগে জানা উচিত আপনার সন্তান কী চাইছে। সে খুশি হচ্ছে কি না। ছুটিটা এমনভাবে পরিকল্পনা করুক যেন প্রতিটা মুহূর্ত ভালোভাবে ব্যবহার করা যায়। না হলে পরে আফসোস হবে। অপেক্ষা করতে হবে পরবর্তী ছুটি পর্যন্ত।
রয়া মুনতাসীর
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ০১, ২০১০
Nasiruddin
Really we like bangladesh lifestyle but not yet that the we are you seen the bangladesh follow-up always Indian style and some one’s forget our Islamic culture so please always try to live a life within Islamic life……