সুউচ্চ ভবনের আধুনিক ফ্ল্যাটবাড়ির আশপাশে নেই কোনো ফাঁকা জায়গা, খেলার মাঠ; তাই সুযোগ পেলেই ছোট ছেলেটি ফ্ল্যাটের দরজা খুলে দুরন্তপনায় মেতে ওঠে লবি অথবা সিঁড়িঘরটিতে। কীভাবে ছোট শিশুটির কাছে ঘর হয়ে উঠবে আকর্ষণীয়, এই নিয়ে চিন্তায় থাকেন অনেক অভিভাবক। ছোট ছেলেটির উপযোগী বিনোদন ও বয়স উপযোগী অন্দরসজ্জায় যদি সাজানো হয় তার ঘরটি, তবে তা শিশুর কাছে হয়ে উঠবে একান্ত পছন্দের। কেমন হবে ছোট ছেলের ঘরের অন্দরসজ্জা—এ বিষয়ে রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ফারজানা গাজী বলেন, শিশুর বয়সের ওপর নির্ভর করবে তার ঘরের অন্দরসজ্জা। তিন থেকে আট বছর (বা তারও কম বয়সী) শিশুর অন্দরসজ্জায় সাধারণত কার্টুন মোটিফের রংচঙে আসবাবকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে ছেলেদের খেলনার উপকরণ যেমন গাড়ি, ট্রেনের বগি, র্যাকেট—এই আদলে তৈরি করা যেতে পারে ঘরের খাট। তাক, আলমারি, খেলনার বাক্স, পড়ার টেবিলসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় আসবাবের নকশায় প্রাধান্য পায় ছেলেদের প্রিয় কার্টুনগুলো (যেমন—পাপাই, টম অ্যান্ড জেরি, ব্যাটম্যান, স্পাইডারম্যান ইত্যাদি)। সাধারণত এ ধরনের আসবাবে পারটেক্সের ওপর কার্টুন-চরিত্রের মুখায়বের আদল ফুটিয়ে তোলা হয়। এ ক্ষেত্রে হলুদ, বেগুনি, নীল, লাল—এই রংগুলো প্রাধান্য পায় আসবাবে।
আবার আট থেকে ১২ বছর বয়সী ছেলেদের ঘরে রাখা হয় স্বাভাবিক রঙের কাঠের আসবাব। বয়স অনুযায়ী ঘরে আসবাব পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে ফারজানা গাজী বলেন, এই বয়সী ছেলেদের মধ্যে এক ধরনের দৃঢ় সাহসিকতার মনোভাব প্রকাশ পায়। আর এ বয়সেই ছেলেদের মধ্যে পরিবর্তন আসা শুরু হয়। তাই কার্টুন-আসবাব এ বয়সী ছেলেদের ব্যক্তিত্ব তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এই বয়সী ছেলেদের অন্দরসজ্জায় দেয়ালের এক দিকে রাখতে পারেন কাঠের খাট। কাঠের তৈরি পড়ার টেবিল সংযুক্ত করে দিতে পারেন দেয়ালের সঙ্গে। একইভাবে ছেলেদের প্রয়োজনীয় জিনিস রাখার জন্য পড়ার টেবিলের ওপরে দেয়ালজুড়ে তৈরি করতে পারেন কাঠের তাক। যেহেতু ছেলেরা খেলতে বেশি পছন্দ করে, তাই তার ঘরের এক দিকে করতে পারেন বাস্কেটবল কর্নার। সেখানে দেয়ালের এক প্রান্তে ঝুলিয়ে দিন বাস্কেটবলের নেট। একইভাবে যেকোনো বয়সী ছেলেশিশুর ঘরে তৈরি করুন কাঠের মেঝে। দেয়ালচিত্র ঘরের প্রতি শিশুর আকর্ষণকে বাড়িয়ে তোলে। ছেলেদের ঘরের দেয়ালে কী রং ব্যবহার করা হবে এবং কেমন হবে দেয়ালচিত্রের নকশা—এ বিষয়ে বার্জার হোম ডেকোরের কালার কলসালট্যান্ট (রং-পরামর্শক) এফ এম হেলাল উদ্দীন জানান, ছেলেদের ঘরের দেয়ালে সাধারণত হলুদ, বাদামি, কমলা, নীল—এসব রঙের ব্যবহার করা হয়। এখন যেহেতু ছোটদের ঘরে যেকোনো এক দিকের দেয়ালে দেয়ালচিত্র অঙ্কন করা হয়, তাই দেয়ালচিত্রের রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অন্যান্য দেয়াল রং করার পরামর্শ দেন তিনি। তিনি আরও বলেন, প্রকৃতির প্রতি ছেলেদের রয়েছে দুর্নিবার আকর্ষণ। তাই ছেলেদের ঘরের দেয়ালচিত্রে সমুদ্রের তলদেশ, বনজঙ্গল, পাহাড়—এ বিষয়গুলো অঙ্কন করা হয়ে থাকে। শুধু দেয়ালেই নয়, ঘরের ভেতরের ছাদেও করতে পারেন অঙ্কনচিত্র। সে ক্ষেত্রে বিছানার ওপর সিলিংটি বেছে নিন। সিলিংজুড়ে করতে পারেন ছায়াপথের নক্ষত্রপুঞ্জের অঙ্কনচিত্র।
নক্ষত্রপুঞ্জে বসিয়ে দিন রেডিয়ামের গ্রহ-নক্ষত্রের স্টিকার। রাতের অন্ধকারে জলে ওঠা রেডিয়ামের আলো বিছনায় শুয়ে থাকা শিশুটিকে নিয়ে যাবে অন্য এক কল্পনার রাজ্যে। এ ছাড়া বর্ণমালা, বিভিন্ন কার্টুন-কাহিনিও অঙ্কন করতে পারেন দেয়ালে। শুধু দেয়ালচিত্র অঙ্কন করেই নয়, দেয়ালচিত্রের কাহিনির পর্দা ও বিছানার চাদর ঘরে রাখলে তবেই ঘরটি শিশুর কাছে হয়ে উঠবে আকর্ষণীয়।
বিপাশা রায়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ০১, ২০১০
Leave a Reply