অতি আনন্দ ও কষ্টে মানুষ কেঁদে ফেলে। আমাদের চোখে পানি নেই, অথচ কান্নার সময় চোখে পানি চলে আসে। এই পানি আসে অশ্রুগ্রন্থি থেকে। চোখের পানি বা অশ্রুকে ইংরেজিতে বলে টিয়ার। এই টিয়ার আসে চোখের ল্যাকরিমাল গ্রন্থি, মেবোমিয়ান গ্রন্থি, অ্যাসেসরি ল্যাকরিমাল গ্ল্যান্ড এবং গবলেট সেল থেকে। এদের মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ অশ্রু আসে ল্যাকরিমাল গ্রন্থি থেকে। অ্যাসেসরি ল্যাকরিমাল গ্ল্যান্ড এবং অন্যান্য অংশ থেকে আসে বাকি অশ্রুটুকু। অশ্রু এক প্রকার মিশ্র তরল পদার্থ। বর্ণহীন এই তরল পদার্থে রয়েছে প্রায় ৯৮ দশমিক ২ শতাংশ পানি, ১ দশমিক ৮ শতাংশ কঠিন পদার্থের মিশ্রণ। এই কঠিন পদার্থের মধ্যে রয়েছে আমিষ বা প্রোটিন শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ এবং লবণ ১ দশমিক ৩ শতাংশ। চোখের পানিতে লবণ আছে বলেই এর স্বাদ লবণাক্ত।
অশ্রু নিঃসৃত হয় অধিকাংশই প্রায় ল্যাকরিমাল গ্ল্যান্ড থেকে। এ জন্য অশ্রুগ্রন্থি বলতে ল্যাকরিমাল গ্রন্থিকেও বোঝায়। অশ্রুর তিনটি স্তর রয়েছে। স্তরগুলো যথাক্রমে লিপিডের স্তর, অ্যাকুয়াম স্তর ও মিউসিন স্তর। লিপিডের স্তরটি অশ্রুর বাইরের স্তর।
অ্যাকুয়াস স্তর মধ্যম এবং মিউসিন সর্বশেষ স্তর। আমাদের মুখের আয়তন অনুযায়ী ল্যাকরিমাল গ্রন্থি ছোট্ট একটি গ্রন্থি। এর অবস্থান নাকের গোড়ার ওপর থেকে প্রায় দেড় ইঞ্চ দূরে ও ভ্রুর নিচে। চোখের পাতার ওপরের শেষের দিকে। দুই পাশেই রয়েছে অশ্রুগ্রন্থি। অশ্রু তৈরি করা এবং নিঃসরণ করাই এদের প্রধান কাজ।
অশ্রুর কাজ
— চোখকে ভেজা ও মসৃণ রাখে
— চোখের রোগজীবাণু ধ্বংস করে
— চোখের পাতাকে পিচ্ছিল করে
— সংবেদনশীলতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে কাজ করে।
অশ্রুগ্রন্থির যত্নে যা করবেন
— রোদ ও ধুলোবালি এড়াতে সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
— যতবার সম্ভব বাইরে থেকে এসেই ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলবেন। দুই চোখ খোলা রেখে তাতে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিন।
— সবুজ, হলুদ সবজি, বিভিন্ন ধরনের শাক, মৌসুমি ফল, কাঁটাসহ ছোট্ট মাছ (মলা, ঢেলা, কাচকি-জাতীয় মাছ) চোখের পুষ্টি জোগায়। তাই শৈশব থেকেই এসব খাবারের অভ্যাস করুন।
— প্রসাধনী ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন হোন। অখ্যাত বা কম দামি প্রসাধনী ব্যবহার করবেন না। দাম তুলনামূলকভাবে কম হলে প্রসাধনীর গুণগত মান, পণ্যের মেয়াদ ও কোম্পানির দিকে দৃষ্টি দিন।
— সবুজ গাছপালার দিকে দৃষ্টি দিন। সবুজ উদ্ভিদ চোখের পুষ্টি জোগায়।
— রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিছানা ঝেড়ে পরিষ্কার করে ঘুমান। বিছানার চাদর যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে সেদিকে দৃষ্টি দিন। সপ্তাহে বা মাসে অন্তত একটি দিন গোসলের বালতিতে কয়েক ফোঁটা ডেটল বা স্যাভলন দিয়ে গোসল করুন।
— ঘরে আলো-বাতাসের ব্যবস্থা যেন ভালো থাকে সেদিকে দৃষ্টি দিন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও রোগজীবাণুমুক্ত থাকুন।
ফারহানা মোবিন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ১১, ২০০৯
Leave a Reply