রমিজুল আলম (ছদ্মনাম)। বয়স ৪২। মাস দুয়েক থেকে লক্ষ করছেন যে তাঁর অণ্ডকোষ ফুলে যাচ্ছে। প্রথমে একশিরা মনে করলেও পরে তিনি চিন্তিত হয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। আলট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক জানালেন, তাঁর অণ্ডকোষে ক্যান্সার হয়েছে। নিশ্চিত হওয়ার জন্য অণ্ডকোষ কেটে পরীক্ষা করতে হবে। অণ্ডকোষের ৯৯ শতাংশ টিউমারই ক্যান্সার; যদিও পুরুষের ক্ষেত্রে শতকরা এক-দুই ভাগ ক্যান্সার অণ্ডকোষের। অপেক্ষাকৃত কমবয়সী পুরুষের মধ্যে এ ধরনের ক্যান্সার বেশি হয়ে থাকে। যেসব পুরুষের অণ্ডকোষ যথাস্থানে থাকে না, জন্মগত ত্রুটির কারণে পেটের ভেতর কোনো স্থানে থাকে, তাদের অণ্ডকোষের ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
অণ্ডকোষের ক্যান্সারের আবার রকমফের আছে। এগুলোর মধ্যে ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে হয় সেমিনোমা, ৩২ শতাংশ ক্ষেত্রে হয় টেরাটোমা, বাদবাকি অন্যান্য ধরনের ক্যান্সার। সেমিনোমা সাধারণত ৩৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের মধ্যে হয়। একটু কম বয়সীদের, অর্থাৎ ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের হয় টেরাটোমা। অণ্ডকোষ ফুলে গেলেও প্রথম প্রথম রোগী চিকিৎসকের কাছে যায় না। কেননা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো ব্যথা বা অন্য কোনো সমস্যা থাকে না। বড় হয়ে যাওয়ায় সহজেই আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। যখন স্বাভাবিকের চেয়ে দুই-তিন গুণ বড় হয়ে যায়, তখন অণ্ডকোষ ভারী বোধ হয় এবং চলাফেরায় সমস্যা হয়। অনেক সময় একশিরা বা হাইড্রেসিল দেখা দেয়।
শুক্রনালি মোটা হয়ে যায়। অণ্ডকোষের রক্তবাহী নালিগুলোও ফুলে যায়। রোগ যখন অনেক ছড়িয়ে যায়, তখন যকৃৎ বড় হয়ে যেতে পারে, গলার ও পেটের ভেতরের লসিকাগ্রন্থিগুলো বড় হয়ে যেতে পারে। ফুসফুসে ছড়িয়ে গেলে বুক ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও রক্তবমি দেখা দিতে পারে। অণ্ডকোষ ফুলে গেলে, ব্যথা হলে, অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে উন্নতি না হলে, এতে অণ্ডকোষের ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। অনেক সময় ক্যান্সারে আক্রান্ত কোষে রক্তপাত হয়, তখন তীব্র ব্যথা এবং হঠাৎ করে অণ্ডকোষ ফুলে যেতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে (শতকরা ১·৫ ভাগ) আক্রান্ত রোগীর স্তনস্কীতিও দেখা দিতে পারে। কোনো কোনো ক্যান্সার খুব ধীরগতিতে দু-তিন বছর ধরে বৃদ্ধি পায়। আবার ‘হারিকেন টিউমার’-এ আক্রান্ত হলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে রোগী মারা যেতে পারে।
অণ্ডকোষের ক্যান্সার সন্দেহ হলে চিকিৎসক প্রথমেই নিশ্চিত হওয়ার জন্য কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেন। আলট্রাসনোগ্রাফি করে ধারণা করা যাবে রোগ সম্পর্কে। নিশ্চিত হওয়ার জন্য কোনো কোনো চিকিৎসক সূক্ষ্ম সুইয়ের সাহায্যে আক্রান্ত অণ্ডকোষের কোষ সংগ্রহ করে পরীক্ষা করতে বলেন। আবার কোনো কোনো চিকিৎসক এ পরীক্ষার বিরোধিতা করেন পরবর্তী জটিলতার কথা ভেবে।
চিকিৎসা করতে হলে রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। রক্তে তিনটি হরমোনের মাত্রা দেখা হয়, যেগুলোকে ‘টিউমার মার্কার’ বলে। আক্রান্ত অণ্ডকোষ কেটে পরীক্ষা করে দেখলে অণ্ডকোষের ক্যান্সার এবং এর ধরন সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে জানা যায়।
রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হলে রোগের পর্যায় নিরূপণ জরুরি। এর জন্য বুকের এক্স-রে ও সিটিস্ক্যান করা যেতে পারে। রোগের ধরন ও পর্যায় অনুযায়ী চিকিৎসা করা যায়। সেমিনোমা হলে রেডিওথেরাপি খুব উপকারী ভূমিকা রাখে, বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি দেওয়া যায়। টেরাটোমা হলে রেডিওথেরাপি খুব বেশি কাজ করে না।
এ ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি বেশি উপকারী। চিকিৎসার উন্নতি নির্ভর করে রোগের ধরনের ওপর। সেমিনোমা যদি অণ্ডকোষের বাইরে ছড়িয়ে না পড়ে, তবে শতকরা ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার এবং থেরাপির পর রোগী দীর্ঘদিন ভালো থাকে। টোরাটোমা হলে মৃত্যুঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। শিশুদেরও অণ্ডকোষের ক্যান্সার হতে পারে। সাধারণত তা হয় তিন বছর বয়সের আগেই এবং রোগী দ্রুত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। স্বাস্থ্যসমস্যা দেখা দিলে অহেতুক উদ্বিগ্ন না হয়ে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আপনার সচেতনতাই আপনার সুস্থতা নিশ্চিত করবে।
ইশরাত ফেরদৌসী
সার্জারি বিভাগ
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ১১, ২০০৯
আমাৰ বাম অণ্ডকোষেৰ ওপৰ ছোট একটি টিউমাৰ হয়েছে, Antiviotic খেলাম কাস হয় নাই ইহাৰ প্ৰতিকাৰ চাই
অপারেশন করা লাগলে করিয়ে ফেলতে পারেন।
আমার ডানপাশের অণ্ডকোষে হাত দিলে ছোট একটা গুটি অনুভূত হয় ওটা কি কোন টিউমার?
আমার ডান অন্ডকোষের মাথায় একটা গোটা অনুভব করছি, ব্যাথায় টনটন করছে, তেমন জোরালো ব্যাথা না অবস্য, কিন্তু অস্থির লাগছে, জ্বর ও বমি বমি ভাব হচ্ছে, আরও অন্ডকোষে একটা মোটা রগ অনুভব করছি, তার ব্যাথাটা ডান পেটেও অনুভব করছি। আমি কি ওসুধ খাবো জানান।
ডাক্তার দেখাবেন আগে।