ঘুমাতে অসুবিধা হলে আপনি কি করেন? নেটিজেনরা যে সব পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন তা দেখে বলেন তো যে আপনি একমত কিনা।
গভীর ঘুমের পদ্ধতি
খাওয়া!
গভীর ঘুমের সব থেকে বড় বাধা হলো বেশি খাওয়া। আপনার পেট যদি ব্যস্ত থাকে হজম করতে যখন আপনি ঘুমাচ্ছেন, তখন গভীর ঘুম আসবেনা এবং অল্পতেই জেগে উঠবেন। ঘুমের তিন ঘন্টা আগে ক্যাফিন যেমন কফি, কালো চা বা কোক পান করা ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। খিদের জন্য যদি ঘুমাতে না পারেন তাহলে গরম দুধ, জুজুবে ফলের চা বা লেবু চা খান। মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন। আপনার শরীরে ছড়িয়ে পড়ার সময় তা ঘুমে বাধা দেবে।
তাড়াতাড়ি ঘুমান
যদি আপনার অভ্যাস থাকে দেরীতে শুয়ে দেরী করে ওঠা তাহলে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অভ্যাস করুন। যদি টেলিভিশন দেখা আর ইন্টারনেটে সার্চ করার জন্য আপনি দেরী করে ঘুমান তাহলে পরের দিন দেরী করে উঠবেন আর আপনার শ্রান্তি স্থায়ী হবে। রাত ৮টার আগে খেয়ে ১১টার মধ্যে ঘুমানোর চেষ্টা করেন।
বেশী ঘুমাবেন না
ছুটির দিনে বেশী ঘুমিয়ে সারা সপ্তাহের ক্লান্তি দূর করার চেষ্টা করলেও গভীর ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। শারীরিক নিয়ম ভাঙলে রাতে ভালো ঘুম হয়না আর পরের দিন ক্লান্তি থাকে। প্রতিদিনের মত একই সময় উঠে ব্যায়াম করেন বা হাটেন। ঘাটতি ঘুমের জন্য ২০-৩০ মিনিট পরে শুয়ে নিতে পারেন।
ঘুম না এলে খুব বেশী চেষ্টা করবেন না
বেশী চেষ্টা করলে বিপরীত ফল হয়। যতো বেশি আপনি ঘুমানোর চেষ্টা করবেন তত বেশী মাথা পরিষ্কার হবে। তখন উঠে স্ট্রেচ করেন, বা বই পড়েন বা গান শোনেন। কিন্তু মনোযোগ দিয়ে কিছু করতে গেলে ঘুম নষ্ট হবে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকলেও ঘুমাতে অসুবিধা হয় তাই ঘড়ি সরিয়ে রাখেন।
শোবার ঘরের সজ্জা পাল্টান
ভালোভাবে ঘুমাতে না পারলে বালিশ বা কম্বল পাল্টান। বালিশ বেশি মোটা হলে তা আপনার রক্ত সঞ্চালনে বাধা দেয়। হাল্কা আর নরম কম্বল ব্যবহার করেন। প্রায় সেগুলো রোদে দেবেন। পায়জামা যেন শক্ত না হয়। সুতির কাপড় ব্যবহার করবেন। ঘুমানোর আগে সুগন্ধি বা ল্যাম্প জালানো ভালো।
ঘুমানোর জন্য ভালো:
১) ল্যাভেন্ডার দেয়া বালিশ
২) সাউন্ড স্লীপ সকস্ (ভালো ঘুমানোর মোজা) ব্যবহার যাতে রক্ত সঞ্চালন আর মেটাবলিজম ঠিক থাকে।
৩) বালিশের ভিতর ল্যাভেন্ডার, রোজমেরী, পেপারমিন্ট, ক্যামোমাইল বা বাকহুইট জাতীয় শুকনো হার্ব ঢুকিয়ে দিতে পারেন।
৪) গরম দুধ খান।
৫) ক্যাফেন ছাড়া হারবাল চা খান।
অথবা বিশেষজ্ঞের মতামত নেন:
বান্সিনিয়োক (কোমর থেকে পা পযন্ত গরম পানিতে ডুবিয়ে রাখা) করা
রাতের খাবারের পর দেড় ঘন্টার জন্য বান্সিনিয়োক করুন। এর ফলে আপনার শরিরের তাপমাত্রা ০.৫ – ১ ডিগ্রি বেড়ে গিয়ে ঘুম আসতে সাহায্য করবে।
আঙ্গুল চাপ থেরাপী
ঘুমানোর আগে আঙ্গুল চাপ থেরাপী করেন বা দুই হাতের তালু একসাথে ঘষেন। মধ্যমার মাথাগুলোতে চাপ, মাথায় আঙুল টেপা আর পায়ের তালুর এক তৃতীয়াংশে আঙ্গুলের চাপ ঘুম আসতে সাহায্য করে।
শরীর স্ট্রেচ করেন
ঘুমানোর চেষ্টা করলে ঘুমে ব্যাঘাত হয়। ঘুম না আসলে স্ট্রেচ করেন। বেশি ব্যায়াম খারাপ ফল হতে পারে আর ঘুমানোর অন্তত ২ ঘন্টা আগে ব্যায়াম করেন।
হাত পা গরম করেন
গরম হাত পা তাড়াতাড়ি ঘুমাতে সাহায্য করে। ঠান্ডা তাপামাত্রা তাড়াতাড়ি ঘুমাতে সাহায্য করে। ঘরের তাপমাত্রা কমিয়ে একটি পাতলা কম্বল নেন।
ঘুমানোর তিন ঘন্টার মধ্যে উঠবেন না
ঘুমানোর তিন ঘন্টা পর মানুষ গভীরভাবে ঘুমাতে পারে। তখন যেন কেউ বিরক্ত না করে। ফোন বন্ধ করে দিন আর পরিবারের কেউ যেন কামরায় না আসে। কামরার তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি আর কম্বলের ভিতরে ৩৩ ডিগ্রি থাকা উচিত।
নিচের কোন ক্যাটেগরীতে আপনি পড়েন?
আমার সিরিয়াস ইনসোমনিয়া …ভালোভাবে ঘুমানো মনে হচ্ছে সামর্থের ব্যাপার।
কিভাবে ভাল করে ঘুমানো যায় তার বিশ্লেষন..
(১) কাকে ভালো ঘুম বলে?
ভালোভাবে ঘুমান ভালো অষুধের থেকে ভালো। ঘুমের কোয়ালিটি কয় ঘন্টা ঘুমানো হলো তার থেকে গুরুত্বপুর্ণ। ভালো ঘুম মানে সকালে চোখ খোলার ৫ মিনিটের মধ্যে নিজেকে সজীব লাগবে।
প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো খুব ভালো। আপনি খুব ব্যস্ত হলেও প্রতিদিন ৬ ঘন্টা ঘুমানো উচিত যাতে আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি না হয়।
(২) ভালো ঘুমের অভ্যাস
১। নিয়মিত জীবনযাপন… একই সময় ওঠেন আর পুরো সপ্তাহ ঘুমানোর একই সময় রাখেন।
২। ঘুমানোর আগে কোন ব্যায়াম না, তবে গোসল করা যায়। ঘুমানোর আগে গোসল করে স্ট্রেচ করেন, কিন্তু বেশী ব্যায়াম ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। ২০-৩০ মিনিটের জন্য ৩৭-৩৮ ডিগ্রী গরম পানিতে গোসল করেন।
৩। ঘুমানোর আগে বেশি খাবেন না। ঘুমানোর আগে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ আর ঘুমের ব্যাঘাত হয়। খিদের জন্য ঘুমাতে না পারলে শর্করা আর মিষ্টি জাতীয় খাবার একটু খেতে পারেন।
৪। নিয়মিত ব্যায়ামঃ হাটা, জগিং, সাতার বা সাইকেল চালানো সপ্তাহে ৩ দিন ২০-৩০ মিনিটের জন্য শরীরকে রিল্যাক্স করে আর গভীরভাবে ঘুমাতে সাহায্য করে।
৫। সুতির পায়জামা পরুনঃ ঘুমানোর জন্য হাল্কা পোশাক ভালো। সুতির পায়জামা যা ঘাম শুষে নিতে পারে আর বাতাস যেতে পারে এমন দেখে বেছে নেন। ব্রেসিয়ারের মতো আঁটো কিছু পড়বেন না।
৬। আপনার উপযুক্ত বালিশ বেছে নেনঃ বালিশ না ব্যবহার করলে তা আপনার ঘুমে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে কারন রক্ত আপনার মাথায় উঠে আসবে। বালিশ উঁচু হলে কাধে আর গলায় রক্তের চাপ বাড়বে। ঠিক মাপ হচ্ছে আপনার কব্জির মাপ বা বালিশে চাপ দিলে ৬-৭ সেন্টিমিটার…
আমি ভালোভাবে ঘুমাতে চাই…
এই সহজ উপায় বেশী কঠিন মনে হয়।
সহজ নিয়ম হচ্ছে ‘বিছানা থেকে ছটফট করে বের হয়ে না যাওয়া’।
১) আরামদায়ক একটা পজিশনে ঘুমানো (মুল)
২) যদি আরাম না লাগে তাহলে ১ নং পজিশনে চলে যান ( সব থেকে কঠিন কাজ)
৩) কষ্ট হলেও কখনো আঙ্গুল নাড়াবেন না
৪) আপনি স্বাভাবিকভাবে ঘুমিয়ে পড়বেন (কারন পেশী না নাড়ালে রক্ত ভালোভাবে সন্চালিত হতে পারে না তাই দ্রুত ক্লান্ত হওয়া যায়)
অন্যান্য মজার উপায়ে কাজ হতে পারে:
১) পেঁয়াজ ব্যবহার করেনঃ লাইট বন্ধ করে শুয়ে পড়েন। পেঁয়াজ কেঁটে নাকের নীচে রাখেন। বাকি পেঁয়াজ একটা বাটি করে মাথায় রাখেন যাতে গন্ধ পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। এই গন্ধ মনকে স্থির করে। নাকের নীচের গন্ধের জন্য আপনি ঘুমিয়ে পড়বেন।
২) বিয়ার খানঃ যারা একেবারেই অ্যালকোহল খেতে পারেন না এটা তাদের জন্য। এক ক্যান বিয়ার কিনে খেয়ে ফেলেন। তার পর শুয়ে পড়েন, আপনি অন্তত: ৪ ঘন্টার জন্য ঘুমাবেন। অসুবিধে হলো যে পরে আপনার পান করার ক্ষমতা বেড়ে যেতে পারে।
৩। মেডিটেশন বা প্রার্থনা করেনঃ যখন ঘুম আসে না তখন প্রার্থনা করেন বা বিড়বিড় করেন। আপনি তখন ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়বেন।
৪। মাঝখানে বাদ দেয়া কোন বই পড়েনঃ এই সুযোগে, আগে বাদ দেয়া কোন বই পড়েন। এটা একটা ভালো সুযোগ আগে বাদ দেয়া বা কঠিন মনে হওয়া বই পড়ে ফেলার।
৫। এরপরেও সমস্যা থাকলে হাসপাতালে যান।
– হেইজিন কিম
সূত্রঃ bn.globalvoicesonline.org
Leave a Reply