বেশি বেশি চর্বি খেলেন, শাকসবজি মোটেই পছন্দ করেন না, আর ফাস্টফুড খেয়ে বেড়াচ্ছেন। চিকিৎসকের কাছে এসে বলছেন-হার্ট অ্যাটাক থেকে মুক্ত থাকার ওষুধ দিন। কিন্তু তাতে হার্ট অ্যাটাক এড়াতে পারবেন না। হার্ট অসুস্থ হবেই। তাই হার্টকে সুস্থ রাখার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও খাদ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া। কিছু কিছু খাবার যা হার্টের রোগ হওয়ার ঝুঁকি যেমন বাড়ায় তেমনি কিছু খাবার হার্টের জন্য উপকারী, দরকারিও বটে।
প্রচুর ফলমূল ও শাকসবজি খান। হার্ট সুস্থ থাকবে। কারণ, ফলমূল ও শাকসবজিতে প্রচুর পটাশিয়াম থাকায় উচ্চরক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। উচ্চরক্তচাপ না হলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও কমে যায়। সুস্থ থাকবে হার্ট। মাছের ডিম, মগজ, পনির, ডিমের কুসুম, মাখন যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। যদি প্রয়োজন না হয় পাতে বাড়তি লবণ নেওয়ার প্রয়োজন নেই। দুধ খাবেন। কিন্তু ননি তোলা দুধ ও দই খান। হার্ট সুস্থ থাকবে।
মগজ বাদ দিয়ে বেশি বেশি মাছ খান। সামুদ্রিক মাছ আরও ভালো। কারণ, মাছের তেলে আছে ‘ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড’, যা হার্টের সুস্থতার জন্য বেশি প্রয়োজন। তাই বেশি মাছ খান। মাংস না খাওয়াই ভালো। তবে সম্পূর্ণ নিষেধ নেই। সপ্তাহে একবার কম পরিমাণে খান, অর্থাৎ যতটুকু অভ্যস্ত তার অর্ধেকের চেয়ে কম খান। চর্বি সঙ্গে থাকলে তা ফেলে দিন। কখনোই মুরগির চামড়া খাবেন না। তাহলে হার্টে ও দেহে চর্বিও জমবে না। হবেন সুন্দর দেহের অধিকারী, আকর্ষণীয়।
গাঢ় সবুজ শাকসবজি, মাছ, শালগম, সয়াবিন, শুকনা শিমের বিচি বেশি খাবেন। এগুলোতে আছে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম। এই ম্যাগনেসিয়াম হার্টের সুস্থতা বাড়ায়।
যদি এই খনিজ পদার্থটির অভাব হয় তখন হার্টের রক্তনালি করোনারি ধমনি সংকুচিত হয়ে পড়ে হার্ট অ্যাটাক ত্বরান্বিত করে। যারা বেশি মানসিক চাপে থাকেন ও অতিরিক্ত পরিশ্রম করে, তাদের দেহ থেকে ম্যাগনেসিয়াম বেশি বের হয়ে যায় ও শরীরকে নিস্তেজ করে। তাই এই খনিজ পদার্থযুক্ত খাবার খেলে হার্টের সুস্থতা বাড়বে।
শিমের বিচি ও মটরশুঁটিতে থাকে ‘নিয়াসিন’ নামের ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, যা কোলস্টেরল কমিয়ে আনে অর্থাৎ মন্দ চর্বি অল্প ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (এলডিএল) হ্রাস পায়। তাই বেশি করে খান। আবার বেশি ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (এইচডিএল) দেহের জন্য উপকারী। ভিটামিন সি-যুক্ত খাবার যেমন লেবু, আমলকী, কাঁচামরিচ, পেয়ারা, সবুজ শাকসবজি বেশি খেলে এইচডিএল বাড়ে।
হার্ট অ্যাটাক কমায়। তেমনি আঁশযুক্ত খাবার, ফল, সবজি, শস্যখাবার রক্তের চর্বি কমিয়ে আনে। অল্প-স্বল্প বাদাম খেতে পারেন। এটি অসম্পৃক্ত চর্বি। ভালো সয়াবিন তেল খান। কিন্তু টিনজাত বা প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন। এগুলো বিপজ্জনক। টাটকা খাবার খান। দেহের উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। যতটুকু সম্ভব হাসুন। দুশ্চিন্তা বা উত্তেজনা নয়। সবার সঙ্গে গল্প করুন। গান গাইতে পারেন মনের আনন্দে। মজার বই পড়ুন। সঙ্গে পরিশ্রমও করুন। ভালো থাকবে দেহ। ভালো থাকবে মন।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, ২৬ ডিসেম্বর ২০০৭
লেখকঃ ডা· এস কে অপু
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ
ময়মনসিংহ চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়
Leave a Reply