আর তামাক নয়, ধূমপান নয়
প্রতিবছরের মতো এবারও ৩১ মে পালিত হচ্ছে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। এবারের বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘সঠিক তথ্য জানান, সচিত্র সতর্কবাণী দিয়ে এবারের তামাকমুক্ত দিবস পালন করুন এবং জীবন রক্ষা করুন’। সিগারেট বা তামাকের প্যাকেটের গায়ে তামাকের ক্ষতিকর দিক ছবির মাধ্যমে প্রকাশ করার জন্য এবার জোর দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, ছবির মাধ্যমে তামাকের ক্ষতিকর দিকগুলো প্রকাশ করলে মানুষ তামাকের স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্বন্ধে স্পষ্ট জানতে পারে এবং এতে ধূমপান বর্জনের জন্য মনে জোরালো তাগিদ আসে। বিশ্বজুড়ে ধূমপান ও তামাক সেবনে মানুষের আগ্রহকে নিরুৎসাহিত করার জন্য এটি একটি কার্যকর পদ্ধতি। তামাকের প্যাকেটের গায়ে তামাক ব্যবহারের বিপজ্জনক দিক মুদ্রণ করার জন্য বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালার ক্ষেত্রে আরও অগ্রগতি হলো।
অনেকেই জানেন যে তামাকের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে, তবে তামাক ব্যবহার করলে কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে সে সম্বন্ধে অনেকেই অবহিত নন। তামাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এমনভাবে প্যাকেট তৈরি করে এবং বিপণন এত আকর্ষণীয় করে তোলে যে তামাক ও ধূমপান মানুষের মনে আবেদন সৃষ্টি করে এবং প্যাকেটের গায়ে মুদ্রিত লেখা অনেক সময়ই ভোক্তার নজর এড়িয়ে যায়। তাই তামাক ব্যবহারের বিপজ্জনক দিকের ছবি মুদ্রণ করলে তা সহজে ব্যবহারকারীর দৃষ্টি এড়াতে পারে না।
তামাক ব্যবহারের যে বিপদ, সেই সত্যটি প্রকাশের একটি কম খরচা অথচ শক্তিশালী উপায় হলো প্যাকেটের গায়ে সতর্কবাণী মুদ্রণ করা। আর এই বিপদের কথা ছবির মাধ্যমে জানালে তা ঝুঁকি সম্বন্ধে অবহিত করার জন্য কার্যকর হবে, সিগারেট বা তামাক ছাড়ার জন্য মানুষ বেশি উদ্বুদ্ধ হবে। যারা পড়তে-লিখতে জানেন না, তাঁদের জন্যও সিগারেট ব্যবহারের যেসব বিপদ, এদের ছবি অর্থবহ হবে। তাঁরা বিপদগুলো ছবি দেখে বুঝতে পারবেন। তাই ছবির মাধ্যমে সিগারেট বা তামাকের বিপজ্জনক দিক প্রকাশ করা হলো সচেতনতা সৃষ্টির ভালো মাধ্যম। ছবি মুদ্রণ করলে তামাকের প্যাকেটের বহিরাঙ্গনের আকর্ষণ কমে যাবে এবং নতুন ব্যবহারকারী বিশেষ করে তরুণেরা নিরুৎসাহিত হবে।
তাই নতুন ব্যবহারের এই বিপদকে সামনে রেখে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস ২০০৯ অভিযানের মর্মবাণী হলোঃ তামাকের প্যাকেটে ধূমপান ও তামাক সেবন সম্বন্ধে সাবধান বাণী, মুদ্রিত লেখা ও ছবি দুটির সমন্বয় থাকলে এগুলো হবে তামাক ব্যবহারের গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্বন্ধে জনসচেতনতা বাড়ানো এবং তামাক সেবন হ্রাসের জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী উপায়। সবগুলো তামাকের প্যাকেটে ছবিসংবলিত সাবধান বাণী দেওয়ার এই আহ্বানের কারণ কি-এ প্রশ্ন উঠতে পারে। আমাদের মৃত্যুর যেসব কারণ প্রতিরোধযোগ্য, এর শীর্ষে রয়েছে তামাক বর্জন। প্রতিবছর প্রায় ৫০ লাখ লোক তামাকের ব্যবহারের কারণে মৃত্যুবরণ করছে-যে সংখ্যাটি সম্মিলিতভাবে এইচআইভি/এইডস, ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মার কারণে মৃত্যুর চেয়েও বেশি। দুর্ভাগ্যবশত এটি একমাত্র আইনসম্মত ভোগ্য পণ্য, যা প্রস্তুতকারীর ইচ্ছা অনুযায়ী তৈরি হয়ে মানুষের জীবননাশের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
ধূমপায়ীর প্রায় অর্ধেক তামাক সম্পর্কিত রোগের কারণে মৃত্যুবরণ করে। যারা ধূমপায়ী এদের সিগারেটের ধোঁয়া আশপাশের লোকেরও স্বাস্থ্যনাশ করে (পরোক্ষ ধূমপান)। তামাক কোম্পানিগুলো তামাকের নতুন ব্যবহারীদের এতে আসক্ত করার জন্য এবং ধূমপায়ী ও তামাক ব্যবহারকারীদের অভ্যাস চালিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহ জোগানোর উদ্দেশ্যে প্রতিবছর খরচ করে শত শত কোটি ডলার।
দক্ষ বিপণন এবং প্রণোদনা অভিযান, প্যাকেটের মনোলোভা ডিজাইন-এসবের মাধ্যমে বিপজ্জনক প্রভাব থেকে মানুষের মন সরে যায়। তাই কার্যকর স্বাস্থ্য সাবধান বাণী, বিশেষ করে সচিত্র লিখন মানুষকে ধূমপানে নিরুৎসাহিত করবে বলে অভিজ্ঞ মহলের অভিমত। ইতিমধ্যে কানাডা, ব্রাজিল, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে এ ধরনের প্রচার অভিযান সার্থক হয়েছে। নিকোটিন একটি মাদক, প্রবল আসক্তি সৃষ্টি করে মানুষের মধ্যে। এর ঝুঁকি সম্বন্ধে জানাতে হবে। আর বিপদকে সচিত্র জানালে মনে এর প্রভাব পড়ে বেশি। তাই এখনই কাজ করার সময় এগুলো নিয়ে।
শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, পরীক্ষাগার সেবা
বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ২৭, ২০০৯
Leave a Reply