শীত এলেই বাঙালির খাবারের তালিকায় যোগ নানা বৈচিত্র্যের শাক-সবজি। এগুলো খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। তাহলে যেনে নেয়া যাক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন কয়েকটি শীতকালীন সবজির কথা-
শিম: শীতকালীন সবজির মধ্যে শিম একটি সুস্বাদু, পুষ্টিকর, আমিষের একটি ভালো উৎস। এটি প্রধানত সবজি হিসেবে এবং এর শুকনো বীজ ডাল হিসেবে খাওয়া হয়। আমরা প্রায় সবাই শিম খেতে পছন্দ করি। শীতকালীন এই শিমের পরিপক্ব বীজে প্রচুর আমিষ ও স্নেহজাতীয় পদার্থ আছে।
এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও পানি। শিমের আঁশ-জাতীয় অংশ খাবার পরিপাকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য অনেকাংশে দূর করে। শিম সাধারণত ডায়রিয়ার প্রকোপ কমায়। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেকাংশে কমায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করে পাকস্থলি ও প্লিহার শক্তি বাড়ায়। মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে, শিশুদের অপুষ্টি দূরীভূত করে এবং পুষ্টি প্রদান করে থাকে। শিমের ফুল রক্ত আমাশয়ের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায়।
লাউ: পানিপূর্ণ ঠাণ্ডা জাতীয় একটি সবজি লাউ। এতে সবচেয়ে বেশি রয়েছে পানি। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে, ভিটামিন ই, ফাইবার, ফসফরাস, আয়রন, ক্যালসিয়াম, জিংক ইত্যাদি।
লাউয়ের জিংক উপাদানটি আমাদের দেহকে হৃদরোগ থেকে রক্ষা করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে লাউকে পথ্য হিসেবে ধরা হয়। এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। লাউ খেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। লাউয়ে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম আমাদের দাঁত ও হাড়ের মজবুত গঠনে সহায়তা করে। লাউ একটি পানি জাতীয় সবজি বলে এটি সহজেই আমাদের দেহের পানিশূন্যতা দূর করে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয়। লাউ খেলে ঘুম ভালো হয় এমনকি এটি ইনসোমনিয়া বা অনিদ্রা কাটাতে উপকারী।
মুলা: মুলা একটি অন্যতম শীতকালীন সবজি। সাধারণত দুই রকমের মুলা আমাদের দেশে বেশি জন্মায়। সাদা মুলা ও লাল মুলা। মুলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। সব থেকে মজার কথা হল, এই মুলার পাতায় ‘এ’ ভিটামিনের পরিমাণ প্রায় ছয়গুণ বেশি। মুলাতে পাওয়া যায় বিটা ক্যারোটিন। এই সবজিটির রয়েছে প্রচুর পুষ্টি ও ওষুধি গুণ। মুলা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। মুলাতে থাকা বিটা-ক্যারোটিন হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করে। এটি আমাদের শরীরের ওজন হ্রাস করে। মুলা আলসার ও বদহজম দূর করতে সাহায্য করে। কিডনি ও পিত্তথলিতে পাথর তৈরি প্রতিরোধ করে।
ফুলকপি: সবুজ পাতার মাঝে সাদা একগুচ্ছ ফুল। এই সবুজ-সাদা শুভ্র গুচ্ছ ফুলটিই হলো ফুলকপি। ভাজি, নিরামিষ, মাছের তরকারি, পাকোড়া যেকোনো পন্থায় রান্না করে খাওয়া যায়। ফুলকপিতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি ও ভিটামিন কে যা আমাদের দেহে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে। এছাড়াও রয়েছে আয়রন, সালফার, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও ফাইবার। ফুলকপির রয়েছে নানান উপকারিতা। ফুলকপিতে বিদ্যমান সালফারযুক্ত সালফোরাফেন উপাদানটি ক্যান্সার সেল ধ্বংস করে এবং যেকোনো টিউমারের বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে। ফুলকপির সালফোরাফেন রক্ত চাপ কমায় ও রক্ত প্রবাহ নিয়মিত রেখে হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে। ফাইবার ও সালফার সমৃদ্ধ ফুলকপি পরিপাকে সহায়ক। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি ও সচল রাখতে ফুলকপির ভিটামিন বি ও বি কমপ্লেক্সযুক্ত কলিন অনেক উপকারি। এছাড়াও ফুলকপি মস্তিষ্কের দূর্বলতা ও স্মৃতিবিভ্রমের সমস্যায় সহায়ক। ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি শীতকালের ঠাণ্ডা জ্বর, সর্দি, কাশি ও টনসিলের প্রদাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখে। ফুলকপি কোলেস্টেরলমুক্ত তাই দেহ গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
বাঁধাকপি: শীতকালীন সবজির মধ্যে বাঁধাকপি একটি সুস্বাদু সবজি। বাঁধাকপি সালাত, ভাজি, তরকারি বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। বাঁধাকপিতে শর্করা, ভিটামিন, মিনারেল, এমাইনএসিড এবং প্রচুর পানি আছে। বাঁধাকপিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি ও ই। বাঁধাকপিতে উপস্থিত ভিটামিন সি আমাদের শরীরের হাড়কে শক্ত ও মজবুত রাখে।বয়সজনিত হাড়ের সমস্যা থেকে অনেকাংশে রক্ষা করে থাকে বাঁধাকপি। ওজন কমাতেও সহায়ক খাবার বাঁধাকপি। বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আছে। দুরারোগ্য ব্যাধি আলসার প্রতিরোধ করতে সক্ষম। আমাদের শরীরের পাকস্থলির আলসার ও পেপটিক আলসার প্রতিরোধে বাঁধাকপির জুড়ি নেই।
পালংশাক: সকলের প্রিয় একটি সুবজ শাক পালং। পালংশাকে প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম ও আয়রন আছে। উচ্চমানের পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর একটি শীতকালীন সবজি। তাই আর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ ছাড়াও এটা হূদরোগ এবং কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। পালংশাকের উপাদান সমূহ ক্যান্সার, বিশেষ করে ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এর ক্যারোটিনয়েডস ও শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রস্টেট ক্যান্সার ও ওভারিয়ান ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। তাছাড়া পালংশাক হাড়কে মজবুত করে তুলতে, শরীরের কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ধনেপাতা: ধনেপাতায় রয়েছে ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘এ’,ফলিক এসিড। যা ত্বকের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়। এই ভিটামিনগুলো ত্বকে প্রতিদিনের পুষ্টি জোগায়, চুলের ক্ষয়রোধ করে, মুখের ভেতরের নরম অংশগুলোকে রক্ষা করে। মুখ গহ্বরের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে। কোলেস্টেরলমুক্ত ধনেপাতা দেহের চর্বি কমাতে সহায়তা করে । ধনে পাতার ভিটামিন ‘এ’ চোখের পুষ্টি জোগায়, রাতকানা রোগ দূর করতে ভূমিকা রাখে। ধনেপাতায় উপস্থিত আয়রন রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে এবং রক্ত পরিষ্কার রাখতেও অবদান রাখে।
এন এইচ, ১১ নভেম্বর
স্বাস্থ্য | DesheBideshe
2021-11-11 07:43:40
Source link
Leave a Reply