হাইলাইটস
- ঘুমের সময়ে ক্রমাগত ছটফটান করা বা প্রায়শই এ পাশ- ও পাশ ফিরতে থাকা আর নেহাতই বদভ্যেসের আওতায় পড়ে না।
- রাতে ঘুমের মাঝে এত অস্থিরতা, সেই সমস্যাটার গোড়ার কেউই সে ভাবে তলিয়ে ভাবেন না।
- যাকে বদভ্যেস ভাবে মানুষ, তা আসলে ডাক্তারি পোশাকি ভাষায় আর এল এস। অর্থাৎ বুঝিয়ে বললে এ হল রেস্টলেস লেগস সিনড্রোম।
- দিন দিন বাড়ছে রেস্টলেস লেগস সিনড্রোমের রোগী।
এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: ঘুমের সময়ে ক্রমাগত ছটফটান করা বা প্রায়শই এ পাশ- ও পাশ ফিরতে থাকা আর নেহাতই বদভ্যেসের আওতায় পড়ে না। রাতে ঘুমের মাঝে এত অস্থিরতা, সেই সমস্যাটার গোড়ার কেউই সে ভাবে তলিয়ে ভাবেন না। যাকে বদভ্যেস ভাবে মানুষ, তা আসলে ডাক্তারি পোশাকি ভাষায় আর এল এস। অর্থাৎ বুঝিয়ে বললে এ হল রেস্টলেস লেগস সিনড্রোম। দিন দিন বাড়ছে রেস্টলেস লেগস সিনড্রোমের রোগী।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে রেস্টলেস লেগস সিনড্রোম বা আর এল এস-এ আক্রান্ত পুরুষদের মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়ছে প্রায় ৩৯%। ব্রিগহ্যামের জিয়াং গাও এবং হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল সম্প্রতি এক গবেষণায় এমন কথাই তুলে ধরছে।
কেন হয় রেস্টলেস লেগস সিনড্রোম?
ঠিক কী কারণে রেস্টলেস লেগস সিনড্রোম হয়, তা কিছুটা রহস্যে ঢাকা। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজিকাল ডিজঅর্ডার অ্যান্ড স্ট্রোক অর্থাৎ এন আই এন ডি এস-এর মতে, জেনেটিক সমস্যাও এর কারণ হতে পারে। ২০০৭ সালে বিজ্ঞানীদের দুটি গোষ্ঠী রেস্টলেস লেগস সিনড্রোমের সঙ্গে সম্পর্কিত জিন আবিষ্কার করেছিল। আরও সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, কিডনির রোগ, স্নায়ুর সমস্যা, পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথির সঙ্গে যোগ রয়েছে রেস্টলেস লেগস সিনড্রোমের।
কেউ আদৌ রেস্টলেস লেগস সিনড্রোমের শিকার কি না, তা বোঝার জন্য এখনও পর্যন্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানে কোনও পরীক্ষা পাওয়া যায়নি। তবে রোগ নির্ণয়ের আগে চিকিৎসকেরা বেশ কিছু প্রশ্ন করেন রোগীকে।
১) রাতে ঘুমের মাঝে পা নাড়ানোর তাগিদ কি অত্যন্ত বেড়ে যায়?
২) ঘুমের সময়ে বা বিশ্রাম করার সময়ে কি পায়ে ক্রমাগত কোনও অস্বস্তি বোধ করেন তারা?
৩) যদি সেই অস্বস্তি হয়েও থাকে, তা হলে কি তা হাঁটাচলা করার সময়ে একেবারেই অনুভূত হয় না?
গাও এবং সহকর্মীরা গড় ৬৭ বছর বয়সী ১৮.৪২৪ জন পুরুষের ওপরে পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। তাঁরা সম্পূর্ণ সুস্থ এবং কেউ ডায়াবিটিস, আর্থ্রাইটিস বা কিডনি ফেলিয়োরের মতো রোগে আক্রান্ত নন। সমীক্ষায় দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের ৭.৭% মানুষই রেস্টলেস লেগস সিনড্রোমের শিকার।
এই সমীক্ষা চলেছে দীর্ঘ আট বছর ধরে। গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের এই গোটা সময়টায় পর্যবেক্ষণ করেছিলেন এবং প্রতি দুই বছর পর পর তাঁরা কেমন আছেন, কী বোধ করছেন, এই জাতীয় নানা তথ্য সঞ্চয় করতেন। ফলো-আপের সময়, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২৭৬৫ জন মারা যান। এবং আশ্চর্য জনক ভাবে রেস্টলেস লেগস সিনড্রোম ছিল তাঁদের মধ্যে ২৫% মানুষের। আর রেস্টলেস লেগস সিনড্রোম বিহীন মানুষের সংখ্যা মাইয়ত ১৫%।
গাও বলছেন, রেস্টলেস লেগস সিনড্রোম যাঁদের ছিল, তাঁদের শরীরে শ্বাসযন্ত্রের রোগ, পুষ্টি বা বিপাকীয় রোগ এবং ইমিউনোলজিকাল রোগের নানা লক্ষণ দেখা দিয়েছিল।
গবেষণা শেষ হয়নি। পরবর্তী কালে হয়তো আরও তথ্য সামনে আসবে। তবে রেস্টলেস লেগস সিনড্রোম হলে চিন্তা না করে বাড়িতে তার উপশমের চেষ্টা করতে পারেন।
রেস্টলেস লেগস সিনড্রোম উপশমে কী করবেন?
- রেস্টলেস লেগস সিনড্রোম কমানোর জন্য কমপ্রেস বড় উপকারী। এর জন্য মেডিকেটেড কমপ্রেস প্যাড কিনতে পাওয়া যায়। তবে সেগুলোর দামও নেহাত কম নয়। তাই চাইলে বাড়িতেই সহজ উপায়ে কমপ্রেস করা যায়। পাতলা সুতির কাপড় গরম অথবা ঠান্ডা জলে ভিজিয়ে, নিংড়ে নিয়ে পায়ের ওপরে রাখতে হবে। আরাম তো মিলবেই, তার পাশাপাশি রেস্টলেস লেগস সিনড্রোম কমবে অনেকটাই।
- বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, যদি ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ সাবান ব্যবহার করেন কেউ, তা হলে তাঁর রেস্টলেস লেগস সিনড্রোম কমতে পারে। অনেকেরই অভ্যেস রাতে স্নান সেরে ঘুমোতে যাওয়া। সে ক্ষেত্রে এই সাবানের ব্যবহার আরও উপকারী। সাবানে থাকা ম্যাগনেসিয়াম গ্লাইসিনেট প্রভাব ফেলে রেস্টলেস লেগস সিনড্রোমের ওপরে।
- রেস্টলেস লেগস সিনড্রোম তৈরি হয় কারণ পায়ে প্রবল অস্বস্তি শুরু হয়। যখনই পায়ে অস্বস্তি হতে শুরু করেছে বা বার বার এ পাশ কিংবা ও পাশ ফিরতে মন চাইছে, সেই মুহূর্তেই নিজেকে সংযত করতে হবে। অর্থাৎ ওই পরিস্থিতিতে অস্বস্তিকে মাথা চাড়া না দিয়ে পায়ের স্ট্রেচিং জাতীয় হালকা ব্যায়াম করা যেতে পারে। যখনই কোনও নেগেটিভ এনার্জি তৈরি হয়, তখন তাকে পাত্তা না দেওয়াই সমস্যা মোকাবিলার সবচেয়ে বড় অস্ত্র।
- রাতের বিছানায় শুয়ে ভেতর থেকে নড়াচড়া করার যতই প্রবণতা তৈরি হোক কিংবা তাড়না আসুক, কেউ ভারী কাজ করতে পারে না সে সময়ে। কারণ দিনের শেষে খাওয়ার পরে বিছানায় এলিয়ে পড়া মাত্রই শরীর এবং মন দুই-ই আরাম চায়। তাই যদি ভারী কম্বল কিংবা চাদর গায়ে দিয়ে শোওয়া যায়, অনেকাংশে তা রেস্টলেস লেগস সিনড্রোম কমাতে সাহায্য করে। যেমন গায়ের ওপর হাল্কা চাদর থাকলে যতটা স্বচ্ছন্দে নড়াচড়া করা যায়, ভারী কম্বল বা চাদর থাকলে অনেক বেশি চেষ্টা করতে হয়। রাতের আরামের বিছানায় তা করতে ইচ্ছে করবে না। আর এ ভাবেই পরোক্ষ ভাবে রেস্টলেস লেগস সিনড্রোমকে কাবু করা যাবে।
- রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে কফি বা কোনও অ্যালকোহল খাওয়া এবং ধূমপান করা দুটোই বারণ। কারণ এগুলি শরীরকে কমবেশি অস্থির করে তোলে। ফলে শোওয়ার আগে এগুলো এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়।
এ তো গেল রেস্টলেস লেগস সিনড্রোমকে ঘরোয়া উপায়ে কাবু করার উপায়। কিন্তু এতেও উপশম না হলে এবং ক্রমাগত তা বাড়তে থাকলে ফেলে রাখবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এই জাতীয় আর এল এস লক্ষণ আদৌ অন্য কোনও বিপদ ডেকে আনছে না তো? সে বিষয়ে জানার জন্যই চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-11-10 14:44:53
Source link
Leave a Reply