তীব্র মানসিক চাপ থেকে বুকে তীব্র ব্যথার লক্ষণ দেখা গেলে একে ‘ব্রোকেন হার্ট (ভাঙা হৃদয়!) সিনড্রোম’ বলা হয়। ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোমে তীব্র মানসিক অথবা শারীরিক চাপের ফলে হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। মানসিক চাপ, যেমন-দুঃখ (প্রিয় কারও মৃত্যু), ভয়, প্রচণ্ড রাগ বা বি্নয় থেকে এ রোগ হতে পারে, তেমনি শারীরিক চাপ, যেমন-মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, খিঁচুনি, হাঁপানি, রক্তপাত প্রভৃতি কারণেও এ রোগ হতে পারে। শারীরিক বা মানসিক চাপের ফলে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় দেহের ভেতর বিভিন্ন হরমোন ও রাসায়নিক, যেমন-অ্যাড্রেনালিন, নর-অ্যাড্রেনালিন প্রভৃতির নিঃসরণ বেড়ে যায়। এসব রাসায়নিক শরীরকে চাপ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করে। ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোমের ক্ষেত্রে চাপের প্রতিক্রিয়ায় দেহে প্রচুর পরিমাণে অ্যাড্রেনালিন উৎপন্ন হয়। এই অ্যাড্রেনালিন হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশিকে প্রভাবিত করে একে দুর্বল করে দিতে পারে। তবে মাংসপেশির এ দুর্বলতা সাধারণত সাময়িক। স্বল্প সময়ের জন্য হৃৎপিণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী কোনো ক্ষতি হয় না। হার্ট অ্যাটাকের সঙ্গে এ রোগের পার্থক্য হচ্ছে, হার্ট অ্যাটাকে হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশিতে রক্ত পরিবহন বন্ধ হয়ে স্থায়ী ক্ষতি হয়। নামে ‘ব্রোকেন হার্ট’ হলেও হৃৎপিণ্ড-সংশ্লিষ্ট লক্ষণ ছাড়াও এ রোগে অন্য লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, অস্বাভাবিক ক্লান্তি, খাবারে অরুচি, অনিদ্রা, কাজে অনীহা, হতাশা, একাকিত্ব বোধ, ্নৃতিকাতরতা ইত্যাদি। রোগ-লক্ষণ দেখে যেহেতু একে হার্ট অ্যাটাকের মতোই মনে হয়, তাই প্রাথমিকভাবে রোগীরা হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসার মতোই চিকিৎসা পেয়ে থাকে। পরে ‘হার্ট অ্যাটাক নয়’ নিশ্চিত হওয়া গেলে দীর্ঘ মেয়াদে আর হৃদরোগের ওষুধ খেতে হয় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে ‘বিটা-ব্লকার’-জাতীয় ওষুধ এ রোগে পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়। ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোম হার্ট অ্যাটাকের মতো মৃত্যু-ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কিন্তু বুকের তীব্র ব্যথাকে অবহেলা করা উচিত নয়। এটি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হতেও পারে। তাই বুকে ব্যথা হলে একে গুরুত্ব দিন এবং দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
মুনতাসীর মারুফ
চিকিৎসা কর্মকর্তা, মাদারগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জামালপুর
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ১৩, ২০০৯
Leave a Reply