রনথাম্ভোর জাতীয় উদ্যানের কাছে এই দুর্গ
রাজস্থানের সিক্স সেন্সেস ফোর্ট বারওয়ারা-তে। রাজস্থানের বিখ্যাত রনথাম্ভোর জাতীয় উদ্যান থেকে এই দুর্গের দূরত্ব মাত্র তিরিশ মিনিটের। একটু ভুল হল। নামে দুর্গ হলেও বর্তমানে এটি একটি বিলাস বহুল অভিজাত রিসর্ট। এবং রিসর্টের ওয়েব সাইটের বুকিং সাইটে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে যে, ৬ ডিসেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রিসর্টে কোনও বুকিং করা যাচ্ছে না। ক্যাট-ভিকির বিয়েতে নিমন্ত্রিত না হলে ৬ ডিসেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর সিক্স সেন্সেস ফোর্ট বারওয়ারা-তে প্রবেশ করা যাবে না একথা ঠিক। কিন্তু পকেটের জোর থাকলে সেখানে অন্য সময় ঘুরতে যাওয়া যেতেই পারে। কারণ এই দুর্গ-রিসর্টের ইতিহাস কিন্তু বেশ চিত্তাকর্ষক।
দুর্গের ইতিহাস
সিক্স সেন্স ফোর্ট বারওয়ারা স্থাপিত হয়েছিল প্রায় ৭০০ বছর আগে, সেই পনেরোশো খ্রিস্টাব্দে। কেল্লাটি স্থাপন করেছিলেন রাজস্থানের রাজপুত চৌহানরা। পরে ১৭৩৪ সালে দুর্গ দখল করে রাজপুত রাজাওয়াতরা। এঁরা চৌহান বংশেরই একটি শাখা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশদের হয়ে জয়পুর রাজার সঙ্গে একত্রে যুদ্ধ সাহায্য করেছিলেন বারওয়ারা পরিবারের রাজা মান সিং। তাঁর বিশ্বস্ততায় খুশি হয়ে রাজা মান সিং-কে রাও বাহাদুর উপাধি দেয় ব্রিটিশরা। দুর্গের পরতে পরতে লুকিয়ে আছে ইতিহাসের নানা কাহিনি।
দুর্গ রহস্য
বর্তমানে এই রাজার বাড়িটি একটি বিলাসবহুল এবং অভিজাত রিসর্ট। এখানে রয়েছে ৪৮টি নতুন ডিজাইনের এক শয়নকক্ষের স্যুট। তার মধ্যে পাঁচটি স্যুট স্পেশাল ক্যাটাগরিতে পড়ে। এর ঘরগুলি প্রাচীন রাজবাড়ির ঘরের মতো। আয়তনে ৭৫৩ বর্গ ফিট (৭০ বর্গ মিটার) থেকে ৩,০১৪ বর্গ ফিট (২৮০ বর্গ মিটার)। স্যুটগুলি রয়েছে দুর্গ-রিসর্টের পূর্ব দিকে। সেখান থেকে এলাকার পল্লি অঞ্চল স্পষ্টভাবে দেখা যায়। আর পশ্চিম দিকের অংশ থেকে স্পষ্ট দেখা যায় বারওয়ারা গ্রামটিকে। প্রতিটি স্যুট সাবেকি রাজস্থানী সাজে সজ্জিত। ঘরের সাজে প্রাচীনত্বের ছোঁয়া স্পর্শ থাকলেও সমস্ত ব্যবস্থা কিন্তু অত্যাধুনিক। স্যুটের প্রায় সব জিনিসই স্থানীয় হস্তশিল্পীদের দ্বারা তৈরি।
দুর্গের বিলাসিতা
বারওয়ারা দুর্গ-রিসর্টে রয়েছে তিনটি রেস্তোরাঁ। সেখানে স্থানীয় সাবেকি এবং কন্টিনেন্টাল উভয় ধরনের খাবারই মেলে। সঙ্গে রয়েছে বার এবং লাউঞ্জ। রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার বর্গ ফিট বা ২৮০০ বর্গ মিটারের সিক্স সেন্সেস স্পা এবং ফিটনেস সেন্টার। আগে যেটি রাজবাড়ির জেনান মহল ছিল সেখানে বর্তমানে স্পা এবং ফিটনেস সেন্টারটি রয়েছে। এখানে আয়ুর্বেদ সহ অন্যান্য পরিষেবা মেলে। তালিকায় আছে ম্যাসাজ, আয়ুর্বেদ চিকিৎসা, প্রাকৃতিক ফেসিয়াল, মননশীল চর্চা, এবং প্রাচ্যের চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্যে রোগ নির্মূলের প্রয়াস। পরিষেবার জন্য ব্যবহার করা হয় সমস্ত ধরনের প্রাকৃতিক এবং ভেষজ উপাদান।
দুর্গ-রিসর্টে রয়েছে দুটি সুইমিং পুল, ব্যাঙ্কোয়েট, লাইফস্টাইল বুটিক এবং চিল্ড্রেনস্ ক্লাব। দুর্গ-রিসর্টের তরফে প্রতিদিন রনথাম্ভোর জাতীয় উদ্যান সফরের ব্যবস্থা করা হয়।
রাজকীয় খান-দান
দুর্গে স্থানীয় জিভে জল আনা খাবারের রমরমা যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে সাত্ত্বিক ভোজনের ব্যবস্থাও। খাবার যাবতীয় উপাদান উৎপন্ন করা হয় জৈব প্রক্রিয়ায়। খাবার হয় একদম টাটকা এবং স্বাস্থ্যকর। অতিথির পছন্দ অনুযায়ী যে কোনও ধরনের খাবারই এখানে মেলে। খাবারের জিনিসপত্র কেনা হয় স্থানীয়দের কাছ থেকে। রিসর্টের খাবার ঘরটিও দেখবার মতো জায়গা। আবার কেউ যদি একান্তে খাওয়া দাওয়া করতে চান সেই ব্যবস্থাও রয়েছে। খাবারের পাত্রগুলিও অত্যন্ত অভিজাত নকশার।
শান্তির খোঁজ
সিক্স সেন্সেস ফোর্ট বারওয়ারা একটি শান্তিপূর্ণ রিসর্ট। এখানে কোহাল হয় না বললেই চলে। অতিথিরাও এখানে একান্তে নিরিবিলিতে বাস করেন। ইতিহাসে আগ্রহ থাকলে চাইলে গোটা দুর্গ-রিসর্ট ঘুরে বেড়ানো যায়। স্থা্নীয় গ্রামগুলিতেও ঘুরতে যান অতিথিরা।
দরদাম
এত সব পরিষেবা পেতে গেলে রেস্ত খরচ তো করতেই হবে। দুর্গ-রিসর্টের দৈনিক সবচেয়ে কম ভাড়া ৬৫ হাজার টাকা। সঙ্গে অতিরিক্ত কর যুক্ত হবে। এই টাকায় দুজনের দৈনিক প্রাতরাশ, দুপুরের আহার এবং রাতের খাবার হয়ে যাবে। স্পা, আয়ুর্বেদ, জঙ্গল সাফারি ইত্যাদির জন্য আলাদা খরচ।
পথের ঠিকানা
দাম শোনার পরও যদি সিক্স সেন্সেস ফোর্ট বারওয়ারা-তে যেতে ইচ্ছে করে তাহলে বলি জয়পুর এয়ারপোর্ট থেকে এখানকার দূরত্ব মাত্র আড়াই কিলোমিটার। দিল্লি থেকে গাড়ি করে গেলে ছয়-সাত ঘণ্টা সময় লেগে যায়। ট্রেনে চেপে যেতে চাইলে সাওয়াই মাধোপুর স্টেশনে নামতে হবে। সেখান থেকে দুর্গ-রিসর্টের দূরত্ব আধ ঘণ্টার রাস্তা। তবে এমন বিলাসবহুল রিসর্টে থাকতে গেলে কে আর ট্রেন ঠেঙিয়ে যাবেন বলুন? সেখানে পৌঁছোনোটাও বিলাস বহুল হতে হবে।
সে যাই হোক। এই রিসর্টে যেতে চাইলে ৬ ডিসেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর মানে এই ছয়টি দিন বাদ দিয়ে তারপর যাবেন। পরে গেলে ক্যাটরিনা-ভিকির বিয়ের গল্পও হয়তো শুনতে পারবেন।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-11-05 18:49:37
Source link
Leave a Reply