ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহতাব খানম দীর্ঘদিন ধরে কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিষয়টি পড়াচ্ছেন। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন। আপনার সঠিক পরিচয় না দিতে চাইলে অন্য কোনো নাম ব্যবহার করুন।
—বি.স.
সমস্যা: আমার বয়স ২১ বছর, শিক্ষার্থী, অবিবাহিত। ছোটবেলা থেকেই খুব মোটা ছিলাম। এখন ওজন অনেকখানি হ্রাস পেয়ে ৫৭ কেজি হয়েছে। কিন্তু সমস্ত শরীরে দাগ। আমার ফিগার মোটেও সুন্দর নয়। এসব কারণে খুব হীনম্মন্যতায় ভুগি। চিন্তা হয় বিয়ের পর কি আমার দ্বারা কাউকে সুখী করা সম্ভব? আমার উচ্চতা খুব কম (৪ ফুট ১১ ইঞ্চি)। ব্যাপারটা তো এমনও নয় যে যার সঙ্গে বিয়ে হবে তার সঙ্গে আগেই আলাপ করে নেব। এসব দিনরাত ভেবে পাগল হয়ে যাচ্ছি। অন্য দশটা মেয়ের মতো স্বপ্ন দেখার কোনো অধিকার কি আমার নেই?
নাম ও ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শ: তোমার মানসিক অবস্থা যে ভালো নয়, তা তো বুঝতে পারছি। কিন্তু সারাক্ষণ তুমি যদি শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে ভাবতে থাক তাহলে তো ভালো থাকার কোনো উপায় নেই। পৃথিবীতে মেয়েরা কি জন্মগ্রহণ করে শুধু পুরুষকে তুষ্ট করার জন্য? এই ধারণা তুমি একজন মেয়ে হয়ে পোষণ করলে কিন্তু সমগ্র নারীজাতিকে অপমান করা হবে। এতে তোমার নিজের প্রতি অর্থাৎ তোমার ভেতরে যে সত্তাটি বাস করছে তার প্রতিও চরম অবিচার ও অবমাননা করা হয়। কাজেই যার সঙ্গে ভবিষ্যতে তোমার বিয়ে হবে তার কথা এখন থেকে না ভেবে এই মুহূর্তে নিজেকে খুশি রাখার জন্য তুমি কিছু রূপচর্চা ও ব্যায়াম করতে পার। আজকাল অনেক ম্যাগাজিন, বইপত্র, টেলিভিশন শোতে রূপচর্চার বিভিন্ন টিপস দেওয়া হয়। সেগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখে এবং পড়ে তুমি নিজের ত্বকের যত্ন নিতে পার। খুব ভালো হয় প্রাকৃতিক বা ভেষজ উপাদান ব্যবহার করতে পারলে। ‘ইয়োগা’ একটি খুব ভালো ব্যায়াম । তুমি এটি অনুশীলন করার জন্য বই, সিডি বা ভিসিডির সাহায্য নিতে পার। ইয়োগার মাধ্যমে মন ও শরীর দুটোরই যত্ন নেওয়া সম্ভব। তবে এগুলো করার সঙ্গে সঙ্গে তুমি প্রতিদিন সকালে এবং রাতে অন্তত ৩০ মিনিট নিজের জন্য আলাদা করে রাখবে। ওই সময়টুকুতে পৃথিবীর সবকিছু থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নিজের ভেতরের সত্তাটির সঙ্গে কথা বলবে। নিজের নামটি ধরে নিজেকে ডেকে বলবে, ‘আমি তোমার মনের ঐশ্বর্যকে দেখতে পাচ্ছি, তোমার ভেতরে অনেক সুন্দর কিছু আছে যার জন্য তোমাকে শ্রদ্ধা করা যায়, আর সে জন্য তোমায় আমি অনেক ভালোবাসি।’ এভাবে নিজের মনটিকে ভালোবাসতে শুরু কর। সেই সঙ্গে মনের ঐশ্বর্য বাড়ানোর জন্য ভালো ভালো বই পড়ে, প্রকৃতি থেকে আনন্দ নিয়ে, মানুষকে ভালোবেসে, অসহায় মানুষকে সাহায্য করে কিছু সময় কাটাও। এ ধরনের সুস্থ জীবনচর্চায় থাকতে পারলে দেখবে তোমার বাইরের রূপেও একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তোমার প্রতিটি পদক্ষেপে যদি নিজের প্রতি আস্থা ফুটে ওঠে তাহলে অন্যরাও তোমাকে গুরুত্বের সঙ্গে নেবে। আমাদের দেশের মেয়েদের নিজেদের মনোভাব পরিবর্তন না হলে সমাজ তাদের প্রাপ্য মর্যাদাটুকু কখনো দেবে না, এই কথা মনে রাখতে হবে। মেয়েরা যে প্রথমে একজন মানুষ, তারপর একটি মেয়ে, এটি মেয়েদের অবশ্যই আত্মস্থ করতে হবে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ১৫, ২০১০
Leave a Reply