প্রচণ্ড গরমে সবারই ত্রাহি অবস্থা। এ সময় সুস্থ থাকতে হলে তাই শরীরের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে। গরমে শরীর অল্পতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কোনো কাজ করতে গেলে হাঁপিয়ে উঠি আমরা। মনমেজাজও হয়ে ওঠে খিটখিটে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে এ সময় প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খেতে হবে।
ডাবের পানি কিংবা ফলের জুসও খেতে পারেন। স্যালাইন খেলেও ভালো।
এ জন্য এ সময় অবশ্যই রোদ যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে চলা দরকার। হাঁটার সময় ছায়াঘেরা স্থান দিয়ে হাঁটতে চেষ্টা করুন। পাতলা সুতির কাপড় পরিধান করুন। রোদে বের হলে মাথায় ক্যাপ পরুন। মেয়েরা রোদ প্রতিরোধের জন্য শাড়ি বা ওড়না মাথায় দিতে পারেন। চোখে সানগ্লাস ব্যবহার করলে ভালো ব্র্যান্ডের কিনুন। আর সানগ্লাস কেনার সময় ফ্যাশনের কথাই শুধু বিবেচনা করবেন না, তা দিয়ে যেন চোখসহ মুখের অনেকখানিই ঢাকে, সেদিকেও খেয়াল রাখুন। রোদে যাতে ত্বক পুড়ে না যায় সে জন্য সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
একটু বেশি এসপিএফযুক্ত (সান প্রোটেকটিং ফ্যাক্টর) সানস্ক্রিন দীর্ঘক্ষণ ধরে কাজ করে। তাই সানস্ক্রিন কেনার সময় এদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
গরমে ঘামাচি একটি সাধারণ সমস্যা। গরমের সময় বিভিন্ন কারণে ঘর্মগ্রন্থি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
আবার প্রচুর পরিমাণ ঘাম তৈরি হয় বলে ঘর্মগ্রন্থিকে ফুটো করে অনেক পরিমাণ ঘাম ত্বকের নিচে জমা হয়। এতে জ্বালাপোড়াও হয়। এভাবে ঘামাচি বাড়তে থাকে। তেল বা নি্নমানের লোশন ব্যবহারেও ঘামাচি বাড়ে। ঘামাচির হাত থেকে বাঁচতে বিশেষ ধরনের ঘামাচি পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে। খুব বেশি জ্বালাপোড়া বা চুলকানি হলে হাউড্রোকর্টিসন (১ শতাংশ) ব্যবহার করুন। গরমে পেটের বিভিন্ন রোগ হয়। এর মধ্যে ডায়রিয়া, জন্ডিস, টাইফয়েড অন্যতম। এসব থেকে বাঁচতে পানি অবশ্যই ফুটিয়ে পান করুন। কারণ, পানি ও খাবার থেকেই এসব রোগ ছড়ায়।
রাস্তার ধারের খাবার ও ফাস্টফুড এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। বাইরে খেলে থালা-গ্লাস পরিষ্কার আছে কি না, আর খাবারটা টাটকা আছে কি না সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখুন।
রাস্তার পাশের গাজর, শসা, লাচ্ছি, আখের রস ইত্যাদি খাওয়া উচিত নয়।
যেসব পানি দিয়ে এসব ধোয়া হয় বা যেসব পাত্রে এসব পরিবেশন করা হয় এতে জীবাণু থাকার যথেষ্ট আশঙ্কা থাকে। এ গরমে শিশুদের প্রতিও বিশেষ যত্ন নিতে হবে।
এ সময় শিশুদের যথাসম্ভব ঠান্ডা স্থানে রাখুন। তাদের সুতির ও ঢিলেঢালা জামা পরান। বেশির ভাগ শিশুর প্রচুর ঘাম হয়, তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেতে দিন।
শুধু পানি খেতে না চাইলে ডাব বা বিভিন্ন ফলের জুস বানিয়ে দিন। এ সময় শিশুদের নিয়মিত গোসল করাতে ভুলবেন না। প্রচণ্ড গরমে বিভিন্ন রোগ দেখা দিতেই পারে।
তবে একটু সতর্ক হলে গরমের এই খরতাপের সময়টাও ভালোভাবে আর নীরোগ শরীরে কাটাতে পারি আমরা।
আবু সাঈদ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ২৯, ২০০৯
Leave a Reply