সমস্যাঃ আমার বয়স ২৮ বছর। আমি একজন হোটেল কর্মচারী। তিন বছর আগে হোটেলের এক গেস্ট রাগ করে গালে চড় দিলে আমার বাঁ কানের পর্দা ফেটে যায়, কান দিয়ে রক্ত পড়ে ও কানে বন্ধ ভাব হয়। আমি কয়েকবার ইএনটি চিকিৎসক দেখিয়ে ওষুধ খেয়েছি। এখন আমার কানে বন্ধ ভাব অর্ধেক কমে গেছে। কিন্তু কানে কম শোনা কিছুটা রয়ে গেছে। আর মাঝেমধ্যে কানে ঝিঁ ঝিঁ শব্দ হয়। আরও চিকিৎসা করালে আমি কি পুরোপুরি ভালো হতে পারব?
আবদুল জব্বার, পুরানা পল্টন, ঢাকা
পরামর্শঃ আপনার মতো আঘাত পেয়ে কানে কম শোনার ঘটনা আমাদের দেশে অনেক। মাঝেমধ্যেই দেখা যায়, গালে চড় মারার কারণে কানের পর্দা ফেটে গেছে। ঝগড়া-বিবাদে কানে কিল-ঘুষি লাগার কারণেও পর্দা ফেটে যেতে পারে। এ ছাড়া কটনবাড বা ক্লিপ দিয়ে কান পরিষ্কার বা খোঁচানোর সময় এবং অন্যান্য আঘাতের কারণে কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে। এসব আঘাতে কানের পর্দা ফাটার সঙ্গে বহিঃকর্ণের আবরণ ছিঁড়ে যাওয়া, মধ্যকর্ণের অস্থির বন্ধন বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং অন্তঃকর্ণের স্মায়ুকোষে অকার্যকারিতা দেখা দিতে পারে। আঘাতের তীব্রতার ওপর এসব ক্ষতির মাত্রা নির্ভর করে। আঘাতের কারণে কানের পর্দা ফেটে গেলে শুরুতে রোগীকে খাওয়ার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যথার বড়ি দেওয়া হয়ে থাকে। কানে ড্রপ বা কোনো কিছু দিতে নিষেধ করা হয়। আর কানে যাতে পানি না ঢোকে সে পরামর্শও দেওয়া হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ চিকিৎসায় চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে পর্দার ছোট আকারের ফুটো বন্ধ হয়ে যায়। পর্দার ফুটোর আকার বড় বা কানে ইনফেকশন হলে কানের পর্দা নিজ থেকে জোড়া লাগতে চায় না। আঘাতের তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে নিজ থেকে পর্দা জোড়া না লাগলে পর্দার অপারেশন মাইরিংগোপ্লাস্টি করে জোড়া লাগানো যায়। এ ক্ষেত্রে কানের শ্রবণক্ষমতা প্রায় স্বাভাবিক হয়ে আসে। পরীক্ষা করে দেখতে হবে, আপনার কানের পর্দায় এখনো ফাটা বা ছিদ্র আছে কি না। মধ্যকর্ণে অস্থিবন্ধন অথবা অন্তঃকর্ণের স্মায়ুব্যবস্থাও পরীক্ষা করে দেখা দরকার। আপনার কানে এখনো কিছু কম শোনা এবং ঝিঁ ঝিঁ শব্দ থাকায় আপনার কানের পর্দার ফুটো আছে বলে মনে করা যায়। দ্রুত কানের অপারেশন করিয়ে নিলে আপনার শ্রবণের উন্নতি হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে কানের ঝিঁ ঝিঁ শব্দও চলে যাবে বলে আমার মনে হয়।
পরামর্শ দিয়েছেন
অধ্যাপক আবুল হাসনাত জোয়ারদার
নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ২৯, ২০০৯
Leave a Reply