মানব দেহের গঠনে ফ্যাট বা চর্বি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ত্বকের নীচের ফ্যাট বা সাব কিউটেনাস ফ্যাট মানব শরীরকে তাপ-শৈত্যের প্রভাব থেকে রক্ষা করে। আর ত্বকের নীচের ফ্যাট মাঝে মাঝে বৈরী আচরণ করে। ফ্যাট টিস্যু এক যায়গায় অথবা শরীরের অনেক যায়গায় বৃদ্ধি পেয়ে তৈরী করে লাইপোমা বা এক ধরনের স্কিন টিউমার। লাইপোমা নামের এই স্কিন টিউমার বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে হাত ও পায়ে বেশী দেখা দেয়। ঘাড়, হাত ও এক্সিলাতে বগলের নীচে এই টিউমার দেখা দিতে পারে। সারা শরীরে এ ধরনের স্কিন টিউমার দুই থেকে দু’শতাধিক পর্যন্ত হতে পারে। ত্বকের ওপর দিয়ে এ ধরনের স্কিন টিউমার উপলব্ধি করা যায় এবং এ ধরনের টিউমার সাধারণত ব্যথাহীন, নির্দোষ প্রকৃতির হয়ে থাকে। শরীরের কোন স্থানের টিউমারটি বেড়ে শারীরিক সৌন্দর্যের ব্যাঘাত না ঘটালে এ ধরনের স্কিন টিউমার নিয়ে দুঃশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। এ ধরনের টিউমার থেকে ক্যান্সার হবারও কোন ঝুঁকি নেই।
সাধারণত নরম (সফট) ছোট-বড় লোবিউল আকারের এসব টিউমার দু’ আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিলে অনুভব করা যায়। সাধারণত একটি নির্দিষ্ট আকৃতি পর্যন্ত এ ধরনের স্কিন টিউমার বড় হতে থাকে এবং তারপর অপরিবর্তিত থাকে বছরের পর বছর। তবে কপালে সৃষ্ট হওয়া লাইপোমা তুলনামূলকভাবে বেশ বড় হয়। তবে এ ধরনের লাইপোমা পৃষ্ঠদেশের মধ্যভাগের লাইন বরাবর বা নীচের দিকে শ্যাকরাল এরিয়াতে হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। কোনভাবেই এক্ষেত্রে নিউরো সার্জনের পরামর্শ ব্যতীত বায়োপসির চিন্তা-ভাবনা করা যাবে না। কোষ বিন্যাসের (হিস্টোলজিক্যাল) দিক দিয়ে লাইপোমা অনেক সময় চর্বি কোষ এবং কানেকটিভ টিস্যুর সংমিশ্রণে আসে। ক্ষেত্র বিশেষ সোয়েট গস্নান্ডও যোগ হয়। তখন এটার নাম হয় এডিনোলাইপোলস। এছাড়া ডার্মাটোলজিস্টকে অনেক সময় সমস্যায় ফেলে লাইপোমা নামের স্কিন টিউমার। এপিডারময়েড সিস্ট অথবা এনজিও লাইপোমার সঙ্গে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে লাইপোমার।
লাইপোমার সাধারণত কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে আকৃতি বেড়ে গেলে এবং রোগীর অস্বস্তি দূর করতে সার্জারী করে এটাকে বের করে ফেলা যায়। এছাড়া অভিজ্ঞ ডার্মাটোসার্জন বা জেনারেল ও প্লাস্টিক সার্জনগণ অপেক্ষাকৃত সহজ পদ্ধতিতে এ ধরনের টিউমার অপসারণ করতে পারেন। পূর্বেই বলেছি, লাইপোমার ক্ষেত্রে ম্যালিগনেন্সী বা ক্যান্সারের ঝুঁকি নেই। তবে উরুতে লাইপোমা বা স্কিন টিউমার হলে এবং এর আকৃতি পদ ১০ সেন্টিমিটারের বেশী হয় তবে যথাযথ ইনভেস্টিগেশন করতে হবে। এক্ষেত্রে বায়োপসি করার প্রয়োজন হতে পারে। লাইপোমা যখন দ্রুত বাড়তে থাকে এবং সংখ্যায় বেশী হতে থাকে তখন এক্ষেত্রে সামান্য ব্যথা হতে পারে। এতে ভয়ের কোন কারণ নেই।
সাধারণত লাইপোমার পাশাপাশি এনজিও লাইপোমা, নিউরাল ফাইব্রোলাইপোমা, স্পিনডাল সেল লাইপোমাসহ অন্যান্য লাইপোমা বা লাইপোমেটোসিস-এর ক্ষেত্রে কি ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে তা অবশ্যই সংশিস্নষ্ট চিকিৎসক বলবেন। তবে সাধারণভাবে বলা যায় লাইপোমা নামের স্কিন টিউমার একটি নির্দোষ টিউমার। শরীরের ক্ষতি না করে থাকতে পারে বছরের পর বছর। তবে এ ধরনের স্কিন টিউমারের প্রাথমিক অবস্থায় যথাযথভাবে ডায়াগনোসিস হওয়া উচিত। তবে লাইপোমা বা লাইপোমেটোসিস কসমেটিক দিক বিবেচনা করে অনেকে ফেলে দিতে চান। এসব ক্ষেত্রে ৪/৫ মিলিমিটার আকৃতির ছোট একটা ছিদ্র করে লাইপোমা বের করে আনা যায় এবং পরবর্তীতে সার্জারির যায়গায় কোন দাগ বা ক্ষত থাকে না।
লেখকঃ ডাঃ মোড়ল নজরুল ইসলাম
দৈনিক ইত্তেফাক, ১৬ ডিসেম্বর ২০০৭
Leave a Reply