হাইলাইটস
- হিন্দু শাস্ত্র মতে, ভূতচতুর্দশীর Bhoot Chaturdashi সঙ্গে পঞ্চতত্ত্ব বা পঞ্চভূতের যোগ রযেছে।
- হিন্দু শাস্ত্রমতে পঞ্চভূত অর্থাৎ ক্ষিতি (মাটি), অপ্ (জল বা বরুণ), তেজ (আগুন), মরুৎ (বায়ু), ব্যোম (আকাশ)— এই পঞ্চতত্ত্ব দিয়েই মানবদেহ গঠিত।
- আবার মৃত্যুর পরে আমাদের শরীর এই পঞ্চভূতেই বিলীন হয়।
Bhoot Chaturdashi-তে শারীরিক ক্ষয় রোধে বিশেষ ঔষধী গুণযুক্ত চোদ্দটি শাক (saag) খাওয়ার কথা শাস্ত্রে বলা হয়েছে। সেগুলি হল পলতা, বেতো, কালকাসুন্দি, সর্ষে, গুলঞ্চ, জয়ন্তী, ওল, শুষুনী, নিম, শালিঞ্চা, ঘেঁটু, হিঞ্চে। সহজ কথায়, প্রাক-শীতে মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাতে গড়ে ওঠে, সে জন্য চোদ্দ শাক (14 saag)খাওয়ার রীতি সেই প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে। এই শাক খেয়ে সন্ধেবেলা ১৪ প্রদীপ জ্বালিয়ে দুরাত্মা ও অন্ধকার দূর করার রীতি প্রচলিত আছে।
১৪ শাক ভাজা আর ১৪ প্রদীপ জ্বালানোর পেছনে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও রয়েছে। বলা হয়, হেমন্তের শুরুতে পোকার উপদ্রব দূর করতে বাড়িতে ১৪ প্রদীপ জ্বালানো হয়। আবার ঋতুর পরিবর্তনের কারণে এই সময়টা অসুখ বিসুখের প্রকোপ বাড়ে, তাই ১৪ রকমের শাক খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে। সেই বিশেষ ১৪ রকমের শাক এখন আর পাওয়া যায় না বললেই চলে। তবু প্রচীন প্রথা ধরে রাখার চেষ্টা আজও রয়েছে অনেক ঘরেই। এখন দেখে নিন রোগ প্রতিরোধে কোন শাকের কী কী উপকারিতা (Types of saag and health benefits) রয়েছে-
১. সর্ষে শাক : সর্ষে তেলের মতো সর্ষে শাকেও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে। শীতকালে এই শাকের ফলনও বেশ ভালো হয়। নিয়মিত এই শাক খেলে রক্তে উপকারী কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ে। এছাড়া এই শাক দেহে ভিটামিন ডি তৈরি করতেও সাহায্য করে।
২. পালং শাক : কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে পালং শাক। এই শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি, ই এবং আয়রন। আর তাই নিয়মিত পালং শাক খেলে রক্তে আয়রনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
৩. কলমি শাক : হজমের সমস্যা বেশি থাকলে এই শাক না খাওয়াই ভালো। তবে পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এই শাক। কলমি শাক বেশি করে রসুন, পেঁয়াজ দিয়ে ভেজে খেতে পারেন। এটি শরীরে জলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। খেতেও ভালো লাগে।
৪. পুঁই শাক : প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে পুঁই শাকে। এই ভিটামিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া পুঁই শাকে রয়েছে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম, খনিজ লোহা, ম্যাগনেশিয়ম ও জিংক। এসব উপাদান সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। হার্টের সমস্যা থাকলে এই শাক কিন্তু খাবেন না।
৫. লাল শাক : রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ায় লাল শাক। অ্যানিমিয়া যাঁদের রয়েছে তাঁদের জন্য খুবই উপকারী লাল শাক। এছাড়া অ্যামিনো অ্যাসিড, ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিন ই, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে লাল শাকে। এসব উপাদান ক্যানসার প্রতিরোধ করে।
৬. গিমা শাক: জন্ডিস,জ্বর, লিভারের অসুখ, সর্দি-কফে উপকারে লাগে এই শাক। এই শাক স্বাদে একটু তেতো। খেলে মুখের অরুচি সারে। বেগুন আলু দিয়ে চচ্চড়ি, বেসন বা ডাল বাটা দিয়ে এই শাকের বড়া খেতে ভাল লাগে।
৭. পাট পাতা : পাট পাতার বড়া খেতে খুবই ভালো। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় পাট শাক খুবই উপকারী। এছাড়াও পেটের রোগ, সর্দি, কাশি এসব সারায় পাটপাতা। আর সিজন চেঞ্জে খুবই উপকারী এই পাতা।
৮. মুলো শাক : মুলোর কচি পাতা বা কচি মুলোর শাক লঘুপাক অর্থাত্ সহজে হজম হয়। তেলে বা ঘিয়ে ভেজে মুলোর শাক খেলে বাতের ব্যথা সারে। কিন্তু ভাল করে সেদ্ধ না করে খেলে কফ ও পিত্তের সমস্যা বাড়ে।
৯. বেতো শাক : মুখের রুচি ফেরানো থেকে হজম শক্তি বাড়াতে খুবই উপকারে আসে বেতো শাক। এই শাক এখন খুব একটা বেশি পাওয়া যায় না। বেতো শাককে হিন্দিতে বলা হয় ‘বাথুয়া’। টক দই বিট নুন, জিরে ভাজা, রাই, সর্ষের গুঁড়ো দিয়ে এই শাকের রায়তা খেতে অবাঙালিরা খুবই ভাল বাসেন।
১০. হিঞ্চে শাক: হিঞ্চে শাক রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এই শাকের স্বাদ তেতো। এই শাক শরীর ঠাণ্ডা রাখে, রক্ত পরিষ্কার করে। এই শাক সেদ্ধ করে সর্ষের তেল নুন দিয়ে মেখে ভাতে খেতে ভাল লাগে। এছাড়াও হিঞ্চে শাকের বড়া হয়। যাঁদের অ্যানিমিয়া রয়েছে তাদের এই শাক খেতে বলা হয়।
১১. সজনে পাতা: অন্যান্য শাকের মতো সজনে গাছের পাতাও শাক হিসেবে ভাজা করে খাওয়া যায়। এই শাকের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। ভিটামিন A থেকে শুরু করে প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম সবই আছে সজনে পাতায়। ১০০ গ্রাম সজনে পাতায় ১১৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন-ই থাকে। এই ভিটামিন সহনশক্তি বাড়ায়। সজনে পাতা খেলে হার্ট, আর্থারাইটিস, ডায়াবেটিস এবং ক্যানসারের ব্যাপক শুশ্রূষা হয়। এর মধ্যে পালং শাকের চেয়ে তিনগুণ বেশি আয়রন রয়েছে। নিয়ম করে সজনে পাতা খেলে রক্তশূন্যতা পুরোপুরি রুখে দেয়া সম্ভব। এটি বিপাক ক্রিয়া স্বাভাবিক করে সুগারের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে রাখে।
১২. পটলপত্র: সবজি হিসেবে পটল যতটা জনপ্রিয়, শাক হিসেবে পটল পাতা বা পলতা ততটাই অপরিচিত। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে এই পাতা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়। এই পাতা ও ফল রক্তবর্ধক ও রক্তশোধক হিসেবে এবং লিভার ও চর্ম রোগ সারাতে খুবই কার্যকর।
১৩. শুষনি শাক: ভারতসহ দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়া, চিন, মধ্য ও দক্ষিণ ইউরোপে শাক ও ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে শুষনি শাক বিশেষভাবে পরিচিত। যাঁরা নিদ্রাহীনতায় ভোগেন তাঁদের নিয়মিত শুষনি শাক খেলে কাজ দেয়। এ ছাড়া নিয়মিত শুষনি শাক খেলে মাথার যন্ত্রণা, তীব্র মানসিক চাপ, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, গায়ে ব্যথা, পায়ের পেশির অনিয়ন্ত্রিত সংকোচন, বাত, জিভে ও মুখে ক্ষত, চর্মরোগ ইত্যদি দূর হয়।
১৪. জয়ন্তী: সংস্কৃত জয়ন্তিকা শব্দ থেকে জয়ন্তী নামের উদ্ভব। কচি সবুজ টাটকা পাতা, দরাময়, বহুমূত্র, শ্বেতি, কৃমিনাশ, ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় কাজ করে।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-11-03 09:47:16
Source link
Leave a Reply