পুরুষদের ক্যান্সারের মধ্যে প্রোস্টেট ক্যান্সার রয়েছে শীর্ষস্থানে। এই ক্যান্সারের পেছনে কারণ খোঁজা হচ্ছে অনেক দিন ধরেই। এ সম্বন্ধে নতুন একটি ধারণা এসেছে ইদানীং। আমেরিকায় কালোদের মধ্যে এই ক্যান্সারের হার খুব বেশি। এর সঙ্গে জিনগত অনেক উপাদানের একটি সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেছে। গবেষণার ফলাফল বেরিয়েছে এ বছর এপ্রিল মাসের গোড়ার দিকে।
সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কেক স্কুল অব মেডিসিনের ডিন এবং অন্যতম গবেষক ডা· ব্রায়ান হেন্ডারসন ও তাঁর সহকর্মীরা এমন একটি সম্পর্কের কথা প্রকাশ করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রোগটির অন্তর্গত কারণ সম্বন্ধে একটি ধারণা পাওয়া গেল এবং সেই সঙ্গে এ ব্যাপারে করণীয় কী সে সম্বন্ধেও ভাবনার অবকাশ এল।
গবেষকেরা সাতটি জিনগত ঝুঁকির কথা বর্ণনা করেছেন-কিছু কিছু লোকের মধ্যে রয়েছে বিশেষ ডিএনএ অণুক্রম, যা অন্যদের মধ্যে থাকে না। মানব ক্রোমোজোম নম্বর ৮-এর ছোট্ট একটি অঞ্চলে থাকে এই ত্রুটি। এই ত্রুটি থেকে আমরা একজনের প্রোস্টেট ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা সম্বন্ধে জানতে পারি।
পাঁচটি অণুক্রম নব আবিষ্কৃত, বাকি দুটি আগেই আবিষ্কৃত হয়েছিল। আখরোট ফলের আকৃতি ও আয়তন, প্রোস্টেট গ্রন্থি রয়েছে পুরুষের মূত্রথলির নিচে। প্রোস্টেট গ্রন্থিরস এসে যুক্ত হয় বীর্যরসে। আমেরিকার ক্যান্সার সোসাইটির ঘোষণা অনুযায়ী পুরুষের ঘাতক ক্যান্সার হিসেবে ফুসফুসের ক্যান্সারের পর রয়েছে প্রোস্টেট ক্যান্সারের স্থান।
জিনগত এসব ঝুঁকি-উপাদান শনাক্ত করা গেলে আরেকটি কারণ অনুসন্ধান শেষ হবে। আমেরিকায় সাদা চামড়ার লোকের কালোদের মধ্যে এই ক্যান্সারের হার কেন বেশি এ সম্বন্ধে কিছু তথ্য পাওয়া যাবে। কালোদের এ ক্যান্সারে মৃত্যুর আশঙ্কাও দ্বিগুণ, প্রায় সব ঝুঁকি-উপাদানই এদের মধ্যে দেখা যায়। ডাঃ হেন্ডারসনের বক্তব্য-কালোদের মধ্যে এই ক্যান্সার হওয়ার হার বেশি হওয়ায় জিনগত প্রবণতার ভিত্তি আরও দৃঢ় হয়েছে। গবেষকেরা বলেন, একজন লোকের মধ্যে জিনগত কোনো উপাদান রয়েছে-এমন সন্ধান পেলে কাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি তা জানা যাবে, আগাম রোগ নির্ণয় সম্ভব হবে।
প্রোস্টেট ক্যান্সারে ইতিমধ্যে মৃত্যুহার কমে আসছে, কারণ স্ক্রিনিং এমন সময় করা হচ্ছে, যখন রোগের সূচনাকাল; আর সে সময় চিকিৎসা হলে নিরাময় সহজ।
জিনগত ভিত্তি
ইউএসসি প্রিভেনটিভ মেডিসিন প্রফেসর ক্রিস্টোফার হেইম্যান বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস এর একটি জিনগত ভিত্তি রয়েছে। তবে সবকিছুই যে জিনগত তা কিন্তু নয়। জীবনযাপনের উপাদান, পরিবেশগত উপাদানের অবদানও কম নয়।’
তবে এ গবেষণায় আমাদের ফলাফল দেখে বলা যায়, আফ্রিকান, আমেরিকান ও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মধ্যে বড় রকমের এই তারতম্যের মূলে রয়েছে সেই অঞ্চলে জিনগত বৈচিত্র্য তো বটেই। হেইম্যানের বক্তব্য। যেসব রোগ ধরা পড়ছে তার দুই-তৃতীয়াংশ হলো ৬৫-ঊর্ধ্ব পুরুষ। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির বক্তব্য-যেসব পুরুষ প্রচুর লাল মাংস খায় এবং চর্বিবহুল খাবার খায় তাদের প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝঁুকি খুব বেশি।
তিন দল গবেষক-হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির একদল বিজ্ঞানী, ডিকোড জেনেটিকস ইনক এক বিজ্ঞানী এবং ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা নেচার জেনেটিকস জার্নালে তাঁদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন। তবে ফলাফলগুলো এখনো শুরুতেই রয়েছে, কোনো সিদ্ধান্ত পৌঁছানো যাচ্ছে না এখনো।
লেখকঃ অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
দৈনিক প্রথম আলো, ২৬ ডিসেম্বর ২০০৭
Leave a Reply