তবে জীবনের অনেক বিরক্তিকর সমস্যার সমাধানই জটিলতার মাধ্যমে নয়, বরং সাধারণ পদ্ধতিতেই করা সম্ভব হয়। শিশুর মস্তিষ্ক উন্নয়নও এই শ্রেণিরই অন্তর্ভূক্ত। আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষত সরঞ্জাম— এ সবই গত কয়েক দশকে এসেছে। এই সময়কালের আগে দৈনন্দিন অ্যাক্টিভিটির মাধ্যমেই শিশুর ব্রেন ডেভেলপমেন্ট হত। সাধারণ পদ্ধতিগুলি বাচ্চাদের মস্তিষ্কের বিকাশে অসাধারণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
এখানে এমন ৫টি অতি সাধারণ পদ্ধতির কথা বলা হল, যা বাচ্চাদের বিকাশে সহায়ক।
আয়নায় তাকিয়ে থাকা
এ ভাবেই নিজেকে খুঁজে পাবে আপনার খুদেটি। চোখ, নাক, মুখ, দাঁত, জিহ্বা, হাত, অঙ্গের দিকে তাকিয়ে স্ব-পরিচয়ের মাধ্যমে নানা বিষয় শিখে থাকে তারা। ওই ছোট্ট বয়সে এ সবই তাদের কাছে একটি ধাঁধা। আয়নায় দেখে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার মাধ্যমেই এই ধাঁধার উত্তর পাবে তারা। এই অ্যাক্টিভিটির কারণে পরবর্তী কালে তারা সামাজিক ও আবেগপ্রবণ যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারবে। হাসিখুশি মুখাবয়বের জন্য সন্তানকে আয়নায় দেখে হাসতে উৎসাহিত করুন।
ক্লাইম্বিং সারফেস
বাচ্চারা ক্লাইম্বিং সারফেস খুবই ভালোবাসে। কোনও কিছু বেয়ে উঠে পড়া, ঝাপানো এ সবই তাদের বিশেষ প্রিয়। তাই তাদের লাফালাফি যতক্ষণ না বিপজ্জনক হচ্ছে, তাদের নিরুৎসাহিত করবেন না। ডাইনিং টেবিল, জুতোর র্যাক, স্ল্যাব, শেল্ফ বা ক্ষতিকর নয় এমন যে কোনও স্থানে বাচ্চারা লাফ-ঝাপ করতে পারে। অনুসন্ধান যে কোনও বাচ্চার প্রাকৃতিক প্রবৃত্তি। এই ক্লাইম্বিং অ্যাক্টিভিটির মাধ্যমে তারা ভারসাম্যের শারীরিক দক্ষতা এবং সমন্বয়ের শিক্ষা অর্জন করে থাকে। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকরা লাফ-ঝাপে সহায়ক কিছু সরঞ্জম দিয়ে বাচ্চাদের উন্নতিতে সাহায্য করতে পারেন।
বাবল ওড়ানো
যে কোনও বাচ্চাই বাবল ওড়াতে ভালোবাসে। সাবান-জলে ফু দিয়ে বাবল উড়িয়ে বাচ্চারা পরম আনন্দ লাভ করে। এর ফলে তাদের মধ্যে কৌতূহল, বৈজ্ঞানিক মেজাজ এমনকি চক্রান্তের মানসিকতা ধীরে ধীরে প্রবেশ করে। এটি তাদের সৃজনশীল, শিল্পীসুলভ, গাণিতিক দক্ষতার উন্নতিতে সহায়ক। বাড়িতেই বাচ্চাদের জল ও ডিটারজেন্ট পাওডার ঘুলে দিতে সাহায্য করতে পারেন অভিভাবকরা। এর ফলে তারা আরও বেশি শেখার তাগিদ অনুভব করবে। এটি তৈরির পদ্ধতি দেখলে তাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, ডিটারজেন্টে ফেনা কেন হয়, এই বাবলগুলি কীসের, এরা বাতাসে কী ভাবে উড়ে বেড়ায় এবং কী ভাবেই বা ফেটে যায় ইত্যাদি। কিছু কিছু অভিভাবক আবার এতে রঙ মিশিয়ে বাচ্চাদের আরও আনন্দিত করে তোলেন।
স্ক্রিবলিং ও পেইন্টিং
কোনও কিছু আঁকা বা হিজিবিজি লেখা মস্তিষ্কের সুস্থ উন্নয়নের অপর একটি পন্থা। ক্রেয়ন বা পেনসিল দিয়ে বাচ্চারা যখন কিছু হিজিবিজি আঁকে, তখন তাদের লেখালেখির ধরনের সূচনা হয় না, বরং, ছোট ছোট মাসল স্কিল এবং হাত ও চোখের মধ্যে সমন্বয়ও গড়ে ওঠে। পেন্টিংয়ের ফলে তাদের চোখ রঙ চিনতে ও বুঝতে প্রস্তুত হয়। কালি ও রঙ কী ভাবে পাতার ওপর ছাপা হয়ে যায়, সে বিষয় তাদের মস্তিষ্ক ধারণা করতে শুরু করে। আবার হিজিবিজি আঁকা বা লেখার ফলে তাঁরা বুঝতে পারবে যে, দ্রুত লিখলে বা আঁকার সরঞ্জাম কোথাও ঘষলে বা নাড়াচাড়া করলে কী হয় এবং পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন ও ভালো করে কী ভাবে লেখা যাবে। আবার পেনসিল বা রঙের তুলি কী ভাবে ধরলে সুন্দর লেখা বা আঁকা সম্ভব হবে, তা-ও তারা বঝতে পারবে। তাদের যোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য অভিভাবকরা ক্রেয়ন, রঙ, ক্যানভাস, কাগজের টুকরো, স্ক্র্যাপ বই অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দিয়ে যোগ্যতা বৃদ্ধির সুযোগ করে দিতে পারেন।
মাটি ও পাথরের সঙ্গে খেলা
অভিভাবকরা যদি নিজের কচিকাচাদের জন্য জীবাণু-মুক্ত কাদা বা মাটির ব্যবস্থা করে দিতে পারেন, তা হলে এটি তাদের সামনে জ্ঞানলাভের দ্বার উন্মুক্ত করবে। নিরাপদ, প্রাকৃতিক জগৎই শিক্ষালাভের উল্লেখযোগ্য মাধ্যম। কাদা বা মাটি বাচ্চাদের মনে কৌতূহলের সঞ্চার করে। এই কাদা, মাটি ঘষে, তা থেকে নানান আকার বানিয়ে নিত্য নতুন কিছু না কিছু শিখতে থাকবে তারা। আবার আরও বেশি সৃজনশীল হলে তারা খোঁড়াখুড়ি শুরু করবে। এ সময় তাদের হাতে একটি ম্যাগনিফাইং লেন্স ধরিয়ে দিন। তার মাধ্যমে আপনার সন্তান মাটির কণা, ধুলো ও মাটির মধ্যে থাকা ছোট ছোট প্রাণী প্রত্যক্ষ করে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারবে।
অতএব সন্তানের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য খুব বেশি দূরে যেতে হবে না অভিভাবকদের। বাড়ির কাছেই পেয়ে যাবেন তাদের মস্তিষ্কের বিকাশের সরঞ্জাম।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-09-06 16:14:21
Source link
Leave a Reply