ঢাকা শহরে নিজের একটা বাড়ি তৈরির ইচ্ছা অনেকের। তবে সে ইচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য রয়েছে কিছু বিধিমালা। শুধু বাড়ি করলেই চলবে না, বৈধ উপায়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী বাড়ি করতে হবে। এর জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের রয়েছে বাড়ি তৈরির কিছু নীতিমালা, যা মানা প্রত্যেক নাগরিকের আবশ্যিক দায়িত্ব।
বাড়ি তৈরির আগে জেনে নিন
বাড়ি নির্মাণের প্রথম পর্যায়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে। ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রে থাকা মহাপরিকল্পনা (মাস্টারপ্ল্যান) অনুযায়ী নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ ছাড়পত্র দিয়ে থাকে। আবাসিক, শিল্প নাকি বাণিজ্যিক এলাকা—এটা মাস্টারপ্ল্যানে উল্লেখ থাকে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে মাস্টারপ্ল্যান ও রাস্তার প্রশস্ততা বিবেচনা করে বাড়ির নকশা তৈরি করতে হবে। ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের আলোকে বাড়ির পরিকল্পনা তৈরি করা হয় এবং সেই পরিকল্পনা রাজউকে দাখিল করে অনুমতি নিতে হয়। নকশা (প্ল্যান) অনুযায়ী বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে কি না, তা তদারক করার দায়িত্ব থাকে কর্তৃপক্ষের।
ইমারত (বিল্ডিং) নির্মাণের বিধিমালা
ঢাকা শহরে ইমারত নির্মাণের বিধিমালা জানা গেল রাজউক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। এই বিধিমালায় যা আছে—
ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) সূচক অনুযায়ী বিল্ডিং কভারেজ হয়ে থাকে। ইমারতটি কতখানি জায়গাজুড়ে থাকবে, সেটাই হলো বিল্ডিং কভারেজ।
দুই কাঠা বা তার নিচে জমির পরিমাণ হলে এফএআর মান ৩.১৫। সর্বোচ্চ বিল্ডিং কভারেজ ৬৭.৫ এবং রাস্তার ন্যূনতম প্রস্থ ২০ ফুট।
জমির আয়তন অনুসারে এফএআর সূচক বাড়ে।
সর্বোচ্চ এফএআর ৬.৫ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য।
কোন এলাকার ঘনত্ব কত হবে তা এফএআর অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হয়।
ইমারতের চারপাশে জায়গা রাখা বাধ্যতামূলক। এই জায়গাকে বলা হয় শেডব্যাক।
প্রতিটি ইমারতের জন্য শেডব্যাক হিসেবে সামনে পাঁচ ফুট ছাড়তে হবে এবং পেছনে এক-দুই মিটার এবং প্রতি পাশে এক-দেড় মিটার জায়গা ছাড়তে হবে।
মনে রাখুন
লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল প্রভৃতি ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে গেজেটে নথিভুক্ত আছে।এসব স্থাপনার ২৫০ মিটারের মধ্যে ইমারত তৈরি করতে হলে বিশেষ প্রকল্প অনুমোদন কমিটি থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। প্রকল্প অনুমোদন কমিটিতে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট, ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের মতো পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি রয়েছেন।
বহুতল ভবন অনুমোদনের ক্ষেত্রে এই বিশেষ প্রকল্প কমিটি থেকে অনুমোদন নিতে হয়।
জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, কি পয়েন্ট ইনস্টলেশনের ক্ষেত্রে ২০ মিটারের রূপান্তরে অবস্থিত স্থাপনার ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কেপিআইডিসি থেকে অনুমোদন নিতে হয়।
বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা ২০০৪ অনুযায়ী বেসরকারি আবাসন সংস্থা অনুমোদিত কি না, তা যাচাই সাপেক্ষে প্লট বা ফ্ল্যাট কেনা জরুরি।
ফ্ল্যাট বা প্লট কেনার আগে মালিকানাসংক্রান্ত কাগজপত্র ভালোভাবে দেখে নিন।
যে ব্যবস্থা নিতে পারে রাজউক
ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় কাঠামোগত নকশা প্রণয়ন কারার কথা বলা আছে। কেননা, ঢাকা ইতিমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শহর হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। এ জন্য প্রয়োজন কাঠামোগত নকশার।
যদি কেউ রাজউকের নকশা অনুযায়ী নকশা না করে, তবে রাজউক কর্তৃপক্ষ পর পর তিনবার নোটিশ দেবে। সেই নোটিশ অমান্য করলে ইমারত অবৈধ স্থাপনা হিসেবে উচ্ছেদ করা হবে।
নাঈমা আমিন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ০৪, ২০১০
Leave a Reply