উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে খাদ্যের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তাই রক্তের চাপ কমাতে প্রথমেই খাবারের ব্যাপারে সজাগ হওয়া দরকার। দেখা গেছে, খাবারে সোডিয়াম, ক্যালরি, আমিষ ও চর্বি কমিয়ে ফেললে তা রক্তচাপ কমাতে বেশ কাজে দেয়। একটা ধারণা প্রচলিত আছে, রক্তচাপ বাড়া ও কমার সঙ্গে লবণের বেশ সম্পর্ক রয়েছে। যদি দৈনিক ৪ গ্রাম লবণ খাওয়া হয়, তাহলে রক্তচাপ একেবারে স্বাভাবিক থাকে। তবে এটি এখনো প্রমাণিত হয়নি যে উচ্চ রক্তচাপের কারণ অথবা উচ্চ রক্তচাপ সারানো একমাত্র লবণ গ্রহণ ও বর্জনের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু লবণ গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ অবশ্যই সুফল বয়ে আনে।
কোনো কোনো খাবারে লবণ থাকলেও তা বোঝা যায় না। যেমন মাংস, কোনো কোনো সবজি, সামুদ্রিক মাছ, ডিম, সয়াসস, পটেটো টিপস ইত্যাদি। আবার বাণিজ্যিকভাবে তৈরি খাবারে আলাদাভাবে লবণ দেওয়া থাকে। যেমন বারবিকিউ, ্নোকড ফিশ, আচার, পনির, স্যুপ কিউব, পিকেলস ইত্যাদি। তাজা ফলে সোডিয়াম একেবারেই কম থাকে। তাই উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য এটি খুবই ভালো। এক গ্লাস দুধে সোডিয়াম আছে ১২৬ মিলিগ্রাম। আর একটি ফলে সোডিয়াম আছে প্রকারভেদে ১-২৫ মিলিগ্রাম। শিকাগোর নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল স্কুলের একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা যায়, যাদের উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা রয়েছে, তারা যদি দিনে ৫ গ্রামের (এক চা-চামচ) কম লবণ খায়, তাহলে উচ্চ রক্তচাপ এড়াতে পারেন। ২০১ জনের ওপর পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে এই গবেষণা চালানো হয়। এতে নারী-পুরুষ উভয়ই ছিল এবং তাদের বয়স ছিল ৩০ থেকে ৪৪ বছর।
উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে হৃদরোগের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তাই প্রাণিজ চর্বি যেমন ঘি, মাখন, মাংসের চর্বি না খাওয়াই ভালো। বনস্পতি ও মার্জারিন উদ্ভিজ্জ চর্বি হলেও ঘনত্বের কারণে এগুলো বাদ দেওয়াই ভালো। আবার উদ্ভিজ্জ তেল খেতে বাধা না থাকলেও বেশি পরিমাণে গ্রহণ শরীরের ওজন বাড়ায়। তাই খাবার হতে হবে পরিমিত এবং কম চর্বিযুক্ত। দৈনিক ৩০ থেকে ৫০ গ্রাম পর্যন্ত চর্বি গ্রহণ করা যেতে পারে। মাছের চর্বি নিশ্চিন্তে খাওয়া যেতে পারে। কারণ, এই চর্বি কোনো সমস্যা নয়, এটি সহজপাচ্য শর্করা, যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। যেমন ভাত ও ফেন। উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা একটি সুষম খাবার তালিকা অনুসরণ করলে ভালো হয়। যার অনুপাত হবে ২০ শতাংশ শর্করা, ১০ থেকে ১৫ শতাংশ আমিষ এবং ৫ শতাংশ চর্বি। এই পরিকল্পনায় কাঁচা খাবার থাকবে প্রধান ও দ্বিতীয় প্রাধান্য থাকবে রান্না করা খাবারের। হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের আপাতদৃষ্টিতে অসুস্থ মনে হয় না বলেই একে নিঃশব্দ ঘাতক বলা হয়। তবে জীবনযাত্রায় সামান্য পরিবর্তন ঘটিয়ে এবং খাবারদাবারে কিছুটা সচেতন ও যত্নবান হলেই এটা এড়ানো যায়।
আখতারুন নাহার
প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা, বারডেম
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ০৮, ২০০৯
Leave a Reply