অধিক লবণ গ্রহণ স্বাস্থ্যের ওপর যথেষ্ট ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের ফলে আমাদের রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (স্ট্রোক), হার্ট অ্যাটাক, কিডনি ও হার্ট ফেইলিউরের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশ্বের যেসব জনগোষ্ঠী লবণ কম খায় তাদের শতকরা ৮০ ভাগের উচ্চ রক্তচাপ থাকে না। পক্ষান্তরে যেসব জায়গায় মানুষ লবণ বেশি গ্রহণ করে, যেমন জাপানে উচ্চ রক্তচাপ মহামারি আকারে বিস্তার লাভ করেছে; সেখানকার প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় অর্ধেকই উচ্চ রক্তচাপের শিকার। অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করলে উচ্চ রক্তচাপ ছাড়াও অস্টিওপোরোসিস, পাকস্থলির ক্যান্সার, শারীরিক স্থূলতা হতে পারে এবং অ্যাজমা থাকলে এর উপসর্গগুলো বৃদ্ধি পায়।
কীভাবে লবণ কম গ্রহণ করা যায়
সদিচ্ছা থাকলেই অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা সম্ভব। লবণ ও সোডিয়াম কম গ্রহণের জন্য যা করণীয়-
— খাবারের সঙ্গে আলাদাভাবে (পাতে) লবণ খাবেন না।
— টেবিলে লবণদানি রাখবেন না।
— রান্না করার সময় খাবারে অল্প লবণ ব্যবহার করুন।
— ফাস্টফুড, রেস্টুরেন্ট ও ক্যান্টিনের খাবারে প্রচুর লবণ থাকে, এ জন্য এসব খাবার কম খাবেন।
— টিনজাত স্যুপ, সবজি, মাংস-মাছ, প্রক্রিয়াজাত পনির ও মাংস, হিমায়িত খাবার, শুঁটকি মাছ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।
— খাদ্য সংরক্ষণ করার জন্য লেবুর রস, ভিনেগার, কাঁচা রসুন ও মসলা ব্যবহার করুন।
— খাদ্য সুস্বাদু করার জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন দ্রব্য যেমন-কেচাপ, সয়াসস, সালাদ বানানোর উপকরণ, আচার কম ব্যবহার করুন।
— কাঁচা ফলমূল বা শাক-সবজি খাওয়ার সময় লবণ দিয়ে খাবেন না।
— লবণবিহীন ক্র্যাকার্স, পপকর্ন ও বাদাম খান।
— ঘরে-বাইরে খাদ্য নির্বাচনের আগে কম লবণ ও সোডিয়াম কম সমৃদ্ধ খাবারগুলো নির্বাচন করুন।
— আপনার সন্তানকে শৈশব থেকেই কম লবণযুক্ত খাদ্য খাওয়ানোর অভ্যাস করুন।
— হোটেল বা দোকানে ‘ধূমপান নিষেধ’-এর পাশাপাশি ‘অতিরিক্ত লবণ খাবেন না’ লিখে রাখুন।
বাইরের খাবারের ক্ষেত্রে আমাদের উচিত এমন নির্দেশনা দেওয়া, যেন খাদ্যে লবণের মাত্রা কম থাকে। আমাদের দেশের খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এ ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা দরকার, যাতে তারা তাদের খাবারের গায়ে ও মেন্যুতে লবণ ও সোডিয়ামের পরিমাণ লিখে রাখে।
আমাদের দেশে খুব একটা গবেষণা না হলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে প্রতিদিন একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি পাঁচ গ্রাম (এক চা-চামচ) বা তারও কম লবণ গ্রহণ করতে পারেন। অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এ পরিমাণ অবশ্যই আরও কম হতে হবে।
মানুষ অভ্যাসের দাস। আমরা যদি ধীরে ধীরে বাড়িতে কম লবণ দিয়ে খাদ্য তৈরি করি এবং আলগা লবণ না খাই, লবণাক্ত খাবার এড়িয়ে চলি, কম লবণযুক্ত খাবার কেনা শুরু করি, তাহলে সেটাই অভ্যাস হয়ে যাবে। আসুন, সবাই ‘লবণ কম খাব, সুস্থ থাকব’-এই স্লোগানে উদ্বুদ্ধ হই।
সূত্রঃ হাইপারটেনশন কমিটি অব ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ০৮, ২০০৯
Leave a Reply