লিভারের প্রদাহকে হেপাটাইটিস বলা হয়। বিভিন্ন কারণে ভিন্ন ভিন্ন দেশে হেপাটাইটিস হয়ে থাকে। এর মধ্যে ভাইরাস, মদ্যপান, বিপাকের অসংগতি ইত্যাদি। বাংলাদেশে সাধারণত এ, বি, সি, ডি, ই ভাইরাসের মাধ্যমে লিভারের প্রদাহ বা হেপাটাইটিস হয়ে থাকে। জন্ডিস দেখা দিলে এ রোগটি ধরা যায়। যদিও নিশ্চিত হওয়ার জন্য রোগীর রক্তের সিরামে এ ভাইরাসের নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেন বা অ্যান্টিবডি উপস্থিত নিশ্চিত করতে হয়।
হেপাটাইটিস ‘ই’ জন্ডিস হিসেবে ধরা পড়ে। আপনাআপনি রোগী ভালো হয়ে যেতে পারে এবং পরবর্তী সময়ে সাধারণত রোগটি দীর্ঘ স্থায়ী হয় না। গর্ভবতী মায়েরা ‘ই’ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে এর ব্যাপকতা একটু বেশি হতে পারে। হেপাটাইটিস ই উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যখন বন্যা বা ভারী বৃষ্টি হয় অথবা বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দেয়, তখন রোগটি মহামারি বা বিচ্ছিন্নভাবে দেখা দিতে পারে। শিশুদের তুলনায় বয়স্ক ব্যক্তিরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। উন্নয়শীল দেশগুলোতে সুষ্ঠু স্যানিটেশনের অভাব, অপরিকল্পিত বা দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনাই এ রোগ বিস্তারের অন্যতম কারণ।
পানিবাহিত এ রোগটি মূলত পায়খানার মাধ্যমে ছড়ায়। দূষিত পানি বা খাবারের মাধ্যমে এ রোগ ছড়িয়ে পড়লে রোগটি মহামারি আকার ধারণ করতে পারে। বাংলাদেশে বিশেষ করে শহরাঞ্চলে গরমের সময় তৃষ্ণার্ত হয়ে মাঝেমধ্যে আমরা ফুটপাতের জুস, শরবত বা ফলের রস পান করে থাকি। যদি এই ফলের রস বা পানিতে হেপাটাইটিস-ই ভাইরাস থাকে, তাহলে এই রস, পানি বা খাবার গ্রহণের মাধ্যমে রোগটি সংক্রমিত হতে পারে। এ ছাড়া দূষিত খাওয়ার পানি, আধাসেদ্ধ শাকসবজি ইত্যাদির মাধ্যমে এটি ছড়াতে পারে।
রোগটি শুরু হওয়ার তিন থেকে আট সপ্তাহ পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে এবং সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয় না। রোগটি হঠাৎ করে বিচ্ছিন্নভাবে বা মহামারি আকারে ব্যাপক এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। ১৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী ব্যক্তিরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে কোনো লক্ষণ ছাড়াও এ রোগ দেখা দিতে পারে। বয়স্ক ব্যক্তিদের ০·৫ থেকে তিন শতাংশ মারা যেতে পারে, গর্ভবতী মায়েদের ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে এ রোগের জটিলতায় গর্ভস্থ শিশু বা মায়ের মৃত্যু, গর্ভপাত, অপরিপক্ব শিশুর জন্ম বা প্রসবের সময় নবজাতকের মৃত্যু হতে পারে।
লক্ষণঃ রোগটি বিভিন্নভাবে প্রকাশ পেতে পারে। বেশির ভাগ জন্ডিস, খাবারে অরুচি, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব কিংবা বমিসহ অল্প জ্বর প্রভৃতি উপসর্গ থাকতে পারে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে প্রথম দিকে অল্প অল্প জ্বর, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব হওয়া, মাটির রঙের মতো মল, গাঢ় প্রস্রাব ও শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়। পরবর্তী সময়ে জন্ডিস বেশি হলে প্রথম দিকের উপসর্গগুলো কমে যায়। হেপাটাইটিস ‘ই’র এখনো কোনো টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সাধারণত লাভ হয় না। তাই এ রোগ প্রতিরোধের জন্য বিশুদ্ধ পানি পান, বিশেষ করে শহরাঞ্চলের অধিবাসীদের পানি ফুটিয়ে পান ও ব্যবহার করা, ব্যক্তিজীবনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা, সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা করা, ফুটপাতের খাবার না খাওয়া প্রভৃতি মেনে চলা দরকার।
ডা· এ বি এম ছফিউল্লাহ
সহকারী অধ্যাপক
গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ০১, ২০০৯
Leave a Reply