আবার ভক্তির কথা যদি ছেড়েও দেন মহাদেবকে কেন্দ্র করে যে ভারতীয় প্রাচীন শিল্প স্থাপত্য ভাস্কর্য গড়ে উঠেছে তার তুলনাও অতুলনীয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ইলোরার কৈলাশ মন্দির।
দেবাদিদেবের দর্শন এবং শিল্প নিদর্শন দুইই একবারে করতে গেলে শুধুমাত্র কাশী, উজ্জ্বয়িনী, ঔঙ্কারেশ্বর ঘুরে বেরালেই হবে না। এগুলি ছাড়াও আমাদের দেশে এমনকিছু শিব মন্দির আছে যেগুলি দেখলে চক্ষু চড়কগাছ হযে যাবে। ভক্তরা দর্শন করে পুণ্য লাভ করতে পারবেন আর অভক্তরা শিল্পকলা দেখে বাহবা দেবেন।
সিদ্ধেশ্বর ধাম, সিকিম
গ্যাংটক থেকে গাড়ি ঘণ্টা দুয়েক সময় লাগে সিদ্ধেশ্বর ধামে পৌঁছোতে। পাহাড়ে ঘেরা এই মন্দিরের বাইরের প্রাকৃতিক দৃশ্যই প্রথমে আপনাকে মুগ্ধ করে দেবে। তার উপর মন্দিরে অরপূর্ব সুন্দর কারুকার্য তো আছে। সিদ্ধেশ্বর ধাম মন্দির চত্বরে রয়েছে চারটি মঠ। ভগবান বিষ্ণু, কৃষ্ণ, জগন্নাথ এবং মহাদেব বাস করেন সেই মঠে। সিকিমের মেলি এবং জোরেথাঙের মাঝেই পড়ে এই চার মন্দিরের প্রাঙ্গন। শিবমন্দিরের রয়েছে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ এবং ১০৮ ফিটের এক বিশাল বড় শিবের মূর্তি। মন্দিরে পুজো দিন না দিন মন্দিরটি চোখের দেখা অবশ্যই দেখে আসবেন।
কেদারনাথ মন্দির, উত্তরাখণ্ড
গাড়োয়াল হিমালয়ের আদি বাসিন্দা দেবাদিদেবের আরেক নাম কেদারনাথ। উত্তরাখণ্ড রাজ্যের মন্দিকিনী নদীর তীরে অন্যতম জনপ্রিয় হিন্দু তীর্থক্ষেত্র এটি। প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার তীর্থযাত্রী এই মন্দির দর্শনে যান। অনেকে আবার যান অ্যাডভেঞ্চারের কারণে। অতিউচ্চ এই তীর্থস্থানের আবহাওয়া প্রায় সারা বছরই বিপজ্জনক থাকে। তবে এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত আবহাওয়া কিছুটা স্বাভাবিক হয়। তীর্থযাত্রীরা তখন সেখানে যাওয়ার অনুমতি পান। শীতের সময় চারদিক কঠিন বরফে ঢেকে যায় সেকারণেই শীতকাল কেদারনাথের মূর্তি নামিয়ে আনা হয় উখিমঠে। প্রায় ছয় মাস সেখানেই থাকেন তিনি। ভক্তরাও সেখানে তাঁর পুজো দেন। ভয়ানক খাঁড়াই থাকায় সাধারণ রাস্তা দিয়ে কেদারনাথ পৌঁছোনোর কোনও ব্যবস্থা নেই। গৌরীকুণ্ড থেকে পায়ে হেঁটে প্রায় বাইশ কিলোমিটার হেঁটে যেতে হয় তীর্থযাত্রীদের।
নাগেশ্বর মন্দির, গুজরাট
নাগেশ্বর মন্দির গুজরাটের দ্বারকা থেকে মাত্র পনেরো কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে একটি এই নাগেশ্বর। মন্দিরের বাগান এবং পরিবেশ অপূর্ব সুন্দর। তেমনই সুন্দর মহাদেবের প্রায় ২৫ মিটার লম্বা মূর্তিটি। শিল্পের এক অসাধারণ উদাহরণ এটি। এই মন্দিরের নাম নাগেশ্বর হওয়ার পিছনেও রয়েছে একটি কারণ। বলা হয় যে, নাগেশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলে এবং পুজো দিলে যে কোনও বিষাক্ত জিনিসের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এমনকি সাপের বিষও নাগেশ্বরের কাছে নস্যি। বিশ্বাসে মিলায়ে বস্তু।
শিবহম শিব মন্দির, বেঙ্গালুরু
বেঙ্গালুরুর শিবহম শিব মন্দিরের প্রায় ৬৫ ফিট দীর্ঘ শিবের মুর্তি দেশের অন্যতম জনপ্রিয় শিবমূর্তি। শহরের সবচেয়ে বড় শিবলিঙ্গ দ্বার রয়েছে এই শিবহম শিব মন্দিরে। শিব ছাড়াও মন্দিরে রয়েছে পুত্র গণেশের এক বিশাল মূর্তি। গণেশ মূর্তির দৈর্ঘ্য ৩২ ফিট। এই মন্দির তীর্থযাত্রীদের কাছে যেমন জনপ্রিয় তেমনই এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী শিবমন্দির বলে মনে করেন ভক্তরা। সকলের বিশ্বাস এখানে এসে প্রার্থনা করলে মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হবেই।
শ্রী কোটিলিঙ্গেশ্বর স্বামী মন্দির, কর্নাটক
কর্ণাটকের কোলার জেলার কাম্মাসান্দ্রা গ্রামে অবস্থিত কোটিলিঙ্গেশ্বর মন্দিরটি। এখানকার শিবলিঙ্গটি বিশ্বের বৃহত্তম শিবলিঙ্গের মধ্যে একটি। লিঙ্গের দৈর্ঘ্য্ প্রায় ১০৮ ফিট। মন্দিরের প্রায় পনেরো একর চত্বর জুড়ে রয়েছে ছোটো বড় প্রচুর শিবলিঙ্গ। এগুলিকে একসঙ্গে দেখতে অপূর্ব লাগে। মন্দির চত্বরে রয়েছে একটি প্রায় ৩৫ ফিট দীর্ঘ নন্দী মূর্তি। প্রতি বছর মহাশিবরাত্রিতে হাজার হাজার ভক্ত সমাগম হয় এখানে।
মুর্দেশ্বর শিব মন্দির, কর্নাটক
কর্নাটকের কাণ্ডুলা জেলায় অবস্থিত মুর্দেশ্বর শিব মন্দিরের তিনদিকে রয়েছে আরব সাগর। মন্দির চত্বরে রয়েছে ২০তল বিশিষ্ট গোপুরাম। আর মন্দিরের বাইরের বিশালার শিবের মূর্তির দৈর্ঘ্য্ প্রায় ১২৩ ফিট। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিব মূর্তি। মূর্তিকে কাছ থেকে ভালোভাবে দেখার জন্য এখানে রয়েছে লিফ্টের ব্যবস্থা। ভোরের সূর্যের আলো সরাসরি এই মূর্তির উপর পড়ে। তখন যেন মূর্তির শরীরের থেকে বের হতে থাকে স্বর্গীয় জ্যোতি।
লিঙ্গরাজ মন্দির, ওড়িশা
ওড়িশার রাজধানী ভুবনেশ্বরে অবস্থিত লিঙ্গরাজ মন্দির দেশের প্রাচীন মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম। মন্দিরটি শিব এবং বিষ্ণুর মিলিত রূপ হরিহরের নামে উৎসর্গীকৃত। লিঙ্গরাজ মন্দির ভুবনেশ্বরের সব থেকে বড় মন্দির। কেন্দ্রীয় মিনারটি ১৮০ ফিট উঁচু। মন্দিরটি কলিঙ্গ স্থাপত্যকলা এবং মধ্যযুগীয় ভুবনেশ্বর স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত। অনুমান করা হয যে মন্দিরটি সোমবংশী রাজত্বকালে নির্মিত। এবং পরবর্তীতে সময়ে গঙ্গা শাসকদের হাতে বিকশিত হয়। মন্দিরটি দেউল শৈলীতে নির্মিত যার চারটি ভাগ আছে। সেগুলো হচ্ছে বিমান, জগমোহন, নাট্যমন্দির এবং ভোগমণ্ডপ। ভাগগুলোর উচ্চতা ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। মন্দির চত্বরটি দেয়ালঘেরা। তেরো শতকে লেখা সংস্কৃত পুঁথি একাম্রা পুরাণ অনুযায়ী লিঙ্গরাজের মন্দিরটি একাম্রা (আম) গাছের নিচে অবস্থিত ছিল। সেকারণেই এই মন্দিরের অপর নাম একাম্রা ক্ষেত্র। প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী মন্দির দেখতে আসেন। শিবরাত্রির সময়ে লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হয় এখানে।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-09-01 15:11:50
Source link
Leave a Reply