দীপান্বিতার সমস্যা অন্য। মেয়েকে রোজ নিয়ম মাফিক খাইয়ে দাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেন দশটার মধ্যে। অথচ পরের দিন সকাল সাতটাতেও তার ঘুম ভাঙানো যায় না। জোর করে ঠেলে তুলতে তুলতে চরম বিরক্তিতে শুরু হয় দিন। অথচ তিনি ভেবেই পান না, দিনে ৯ ঘণ্টা করে কী ভাবে একটা মানুষ ঘুমিয়ে থাকে!
পাশের বাড়ির রায়চৌধুরী দাদু আবার উলটো। তিনি ঘুমোতেই চান না। মাঝরাত পর্যন্ত বই পড়েন, বারান্দায় হাঁটাহাঁটি করেন। আবার ভোর পাঁচটাতেও তাঁকে দেখা যায় গাছে জল দিতে। তাঁর কিছুতেই চোখের পাতা ঘুম আসে না।
চিকিৎসক কী বলছেন?
অনেকেরই ধারণা দিনে আট ঘণ্টা ঘুম ভীষণ দরকারি। তার মানে কি সেটা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য? ব্যাপারটা অত সহজ নয়। বরং কে কতক্ষণ ঘুমোবেন, তা ভীষণ ভাবে নির্ভর করে বয়সের ওপর, ব্যক্তির ওপর।
সাউথার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার একটি মেডিসিন স্কুলের অধ্যাপক ডা. রাজ দাশগুপ্ত বলছেন যে, কে কতক্ষণ ঘুমোবেন, তার কোনও সহজ উত্তর হয় না। কারও ঘুমের দরকারটা ভীষণ ভাবেই ব্যক্তিগত। তবে একটা ‘সুইট স্পট’ যে আছে, তা অস্বীকার করার জায়গা নেই। সেই অনুযায়ী সাধারণ ভাবে দিনে কোনও মানুষের সাত থেকে ন’ঘণ্টা ঘুমের দরকার।
ছবি সৌজন্য: টাইমস অফ ইন্ডিয়া
কী বলছে সিডিসি?
আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের তরফে জানানো হয়েছে যে, প্রাপ্তবয়স্কদের দিনে অন্তত সাত ঘণ্টা ঘুমের দরকার। তার চেয়ে কম ঘুমোলে দীর্ঘমেয়াদি নানা অসুখের জন্ম হয়। হৃদযন্ত্রের সমস্যা, ওবেসিটি, ডায়াবিটিস, ডিমেনশিয়ার মতো রোগ জাঁকিয়ে বসে শরীরে। এমনকি যদি মাত্র এক দিনও ঘুম কম হয় বা না হয়, তা-ও শরীরে সুস্থতার অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। তৈরি হয় অ্যাংজাইটি, হতাশা, ডিপ্রেশন ইত্যাদি। এমনকি এ ভাবে বাইপোলার ডিজঅর্ডার হওয়াও অস্বাভাবিক নয়।
ছবি সৌজন্য: টাইমস অফ ইন্ডিয়া
শৈশব এবং কৈশোরের ঘুম
যদিও মনে হয় যে, শিশুরা সাধারণই ঘুমোচ্ছে, কিন্তু এ কথা ঠিকই যে, সদ্যোজাতদের ঘুমের দরকার দিনে ১৭ থেকে ২০ ঘণ্টা। ৪ থেকে ১২ মাস বয়সি শিশুদের দরকার হয় ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা ঘুম। আবার শিশু বড় হতে শুরু করলে, তাদের ঘুমও কমতে থাকে। যেমন- ১ থেকে ৩ বছরের শিশুদের দরকার হয় ১১ থেকে ১৪ ঘণ্টা ঘুম। ৩ থেকে ৫ বছুরেদের দরকার ১০ থেকে ১৩ ঘণ্টা ঘুম। আবার ৬ থেকে ১২ বছর বয়সিদের দরকার হয় ৯ থেকে ১২ ঘণ্টা ঘুম। স্কুলের বা পড়াশোনার ফাঁকে সামান্য জিরিয়ে নেওয়া কিংবা এক ঘণ্টা ঘুমিয়ে নেওয়া কিন্তু এই হিসেবের মধ্যেই পড়ে।
কৈশোরের সমস্যা আবার অন্য। কিশোর-কিশোরীরা এমনিতেই দেরিতে ঘুমোনো এবং দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা বেশি পছন্দ করে। যদিও তাদের স্কুল থাকে এবং নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে পৌঁছতে হয় বলে ঘুম থেকে উঠতেও হয় মোটামুটি নির্দিষ্ট সময়ে। তার ওপর থাকে পড়াশোনা, টিউশনের চাপ। অ্যাসাইনমেন্ট, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা সবই চলতে থাকে তাল মিলিয়ে। তাই সহজেই টান পড়ে ঘুমের সময়ে। তবে কৈশোরের ঘুম অন্তত আট থেকে দশ ঘণ্টা হওয়া উচিত।
ছবি সৌজন্য: টাইমস অফ ইন্ডিয়া
যৌবনের পথে
কলেজের ছাত্রছাত্রীদের অনেক রাত অবধি জেগে থাকার অভ্যেস সহজাত। তা সে পড়াশোনার অত্যধিক চাপ, সিনেমা দেখার অভ্যেস, সম্পর্কের রেশ… যা-ই হোক না কেন। অনেকে আবার সদ্য কলেজ পার করে চাকরিতেও ঢুকে যান এই বয়সেই। কিন্তু কলেজ হোক বা সদ্য অফিসযাত্রী, এই বয়সে অন্তত সাত থেকে ন’ঘণ্টা ঘুম দরকার। তা না হলে তার জের পড়ে শরীর এবং মনে। এটাও বুঝতে হবে যে কারও যদি রাত অবধি জাগার অভ্যেস থাকে এবং পরের দিন সকাল সাতটায় ক্লাস বা অফিস কোনওটাই দীর্ঘ সময় ধরে চালানো সম্ভব হবে না।
ছবি সৌজন্য: টাইমস অফ ইন্ডিয়া
ঘুমের সমস্যা কাটাবেন কী ভাবে?
অনেকেই বলেন যে, কিছুতেই ঘুম আসে না তাঁদের। অর্থাৎ নানা ভাবে বিঘ্নিত হয় ঘুম। কিন্তু চাইলেই ভালো ঘুম হতে পারে আপনারও।
- সময়ে ঘুমোন: প্রত্যেক দিন নিয়ম করে সময়ে ঘুমোনো জরুরি। কেউ যদি রোজ রাত ১১টায় শুতে যান, তা হলে শত কাজ থাকা সত্বেও ওই সময়েই ঘুমোনো উচিত। ঘুমের সময় নিয়মিত হলে, ঘুম আসাটাও অভ্যেসে দাঁড়িয়ে যাবে।
- ফোন বন্ধ থাক: বিছানায় শুতে যাওয়ার আগে অবশ্যই ফোন বন্ধ রাখুন। বিছানায় শুয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোন ঘাঁটা শুধু ঘুম আসতে দেরি হওয়ার কারণই নয়, এটি একটি বদভ্যাসও বটে। বাড়িতে সকলের ফোন বন্ধ থাকলে অসুবিধে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে যে কোনও একটি ফোন অন থাকুক। কিন্তু তার স্থান হোক বেডরুমের বাইরে।
- ছোট ছোট অভ্যাস জরুরি: অনেক সময়ে ব্রিদিং এক্সারসাইজ, অল্প একটু মেডিটেশন ঘুম আনতে সাহায্য করে। যাঁরা কোনও ভাষা চর্চা করছেন, তাঁরা ভাষা পড়তে পারেন ঘুমের ঠিক আগে। এতে তা মনে থাকবে অনেক বেশি। এ ছাড়া বই পড়ার অভ্যেসও ভালো।
- শারীরচর্চা জরুরি: রোজ যদি নিয়ম করে কেউ শারীরচর্চার অভ্যেস করে, তা কিন্তু শুধু শরীর ভালো রাখে না, বরং ঘুম আনতেও সাহায্য করে। তাই নিয়মমাফিক ব্যায়াম শুরু করুন আজ থেকেই।
নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস এবং পর্যাপ্ত ঘুম এনে দিতে পারে সুস্থ জীবন। তাই ঘুমকে নেহাত হেলাফেলা আর নয়।
ছবি সৌজন্য: টাইমস অফ ইন্ডিয়া
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-08-30 18:12:54
Source link
Leave a Reply